সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকের একাধিক আইডি ও পেজ থেকে একটি অসুস্থ শিশু ও তার অভিভাবকের কান্নারত ছবি পোস্ট করে দাবি করা হচ্ছে, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মো. হাকিম মিয়ার সন্তান, শিশুটির নাম আয়েশা আক্তার আলভিয়া। শিশুটি ফুসফুস ছিদ্র ও কিডনির রোগে ভুগছে দাবি করে তার চিকিৎসার জন্য প্রায় ৫লক্ষ টাকা সাহায্যের আবেদন জানানো হয় পোস্টে। পোস্টটিতে যোগাযোগের জন্য একাধিক মোবাইল নম্বরও জুড়ে দেয়া হয়েছে, বলা হয়েছে শিশুটি বর্তমানে ভর্তি আছে কিশোরগঞ্জ জেলার জহুরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে।
গত ১৫ নভেম্বর "S K Nuru" নামের একটি আইডি থেকে ছবিটি পোস্ট একই দাবিতে পোস্ট করা হয়েছে। স্ক্রিনশট দেখুন--
একই দাবিতে ছবিটি ফেসবুকে একাধিক আইডি ও পেজ থেকে পোস্ট করতে দেখা গেছে। স্ক্রিনশট দেখুন--
ফ্যাক্ট চেক
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, পোস্টের বর্ণনায় করা দাবিটি প্রতারণাপূর্ণ। আশু সাইনি নামের ভারতের রাজস্থানের এক শিশুর ছবি দিয়ে এটি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আয়েশা আক্তার আলভিয়ার দাবি করে প্রচার করা হচ্ছে।
রিভার্স ইমেজ সার্চের করলে, ছবিটি তহবিল সংগ্রহকারী প্রতিষ্ঠান মিলাপ-এর ( Milaap) ওয়েবসাইটে "3-Year-Old's Kidneys and Liver Are Failing, He Needs Your Help" শিরোনামে একটি আর্টিকেলে খুঁজে পাওয়া যায়। আর্টিকেলে বলা হয়েছে, ভারতের আশু সাইনি নামে শিশুটি কিডনি ও লিভারের জটিল অসুস্থতায় ভুগছে যার চিকিৎসার জন্য প্রয়োজন প্রায় দশ লাখ টাকা। ফলে তার বাবা রোহিতাস সাহানি এবং মা যশোদা তার চিকিৎসার জন্য মিলাপের মাধ্যমে মানুষের কাছে অর্থ সাহায্য চেয়ে আবেদন জানাচ্ছেন। মিলাপের তরফ থেকে তাদের ওয়েবসাইটে শিশুটির চিকিৎসায় প্রয়োজনীয় আর্থিক সাহায্যের জন্য একটি হাসপাতালের চিকিৎসকের স্বাক্ষরিত একটি প্রত্যয়নপত্রও দেওয়া হয়েছে। স্ক্রিনশট দেখুন--
পাশাপাশি, মিলাপ-এর (Milaap) অফিশিয়াল ফেসবুক পেজ এবং টুইটার একাউন্টে চলতি বছর জুলাই ও আগস্ট মাসে শিশুটির জন্য অর্থ সাহায্য চেয়ে পোস্ট করতে দেখা গেছে।
টুইটার পোস্টটি দেখুন--
এদিকে, বুম বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বিভিন্ন গ্রুপ ও পেজে উক্ত পোস্টগুলোতে সহযোগীতা পাঠানোর জন্য দেয়া নম্বরগুলোতে যোগাযোগ করা হলে একটি নম্বরে কল রিসিভ করে কথা না বলে কেটে দেয়া হয়েছে। এছাড়া বেশিরভাগ নম্বর বন্ধ পাওয়া গেছে।
উল্লেখ্য, আয়েশা আক্তার আলভিয়া নামের বাংলাদেশের কোন শিশু সত্যিই রোগাক্রান্ত কিনা এবং তার আর্থিক সহায়তা প্রয়োজন কিনা, তা জানতে বুম বাংলাদশের পক্ষ থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া আল খলিল হাসপাতালে যোগাযোগ করা হলে কর্তৃপক্ষ এই নামের কোন শিশুর বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে কোন তথ্য দিতে পারেননি এবং কিশোরগঞ্জের জহুরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করেও কোন তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে দুই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ থেকে উল্লেখযোগ্য কোন তথ্য পেলে প্রতিবেদনে তা আপডেট করা হবে।
বাংলাদেশি সামাজিক মাধ্যমে দাবিটি ভাইরাল হলে ফ্যাক্টচেকিং সাইট রিউমার স্ক্যানার, ফ্যাক্ট ওয়াচ এবং ভারতীয় সংস্থা ইন্ডিয়া টুডের অ্যান্টি-ফেক নিউজ ওয়ার রুম (আফয়া) দাবিটি ইতিমধ্যেই যাচাই করে ভিত্তিহীন সাব্যস্ত করেছে।
সুতরাং ভারতীয় শিশু'র ছবি জুড়ে দিয়ে বাংলাদেশি শিশু দাবি করে সামাজিক মাধ্যমে নির্ভরযোগ্য তথ্য ছাড়াই আর্থিক সহায়তার আবেদন জানানো হচ্ছে, যা বিভ্রান্তিকর ও প্রতারণাপূর্ণ।