হোমিওপ্যাথি ওষুধ 'আর্সেনিকাম অ্যালবাম ৩০' কি করোনাভাইরাস প্রতিরোধ করে?
এই হোমিওপ্যাথি ওষুধটি করোনাভাইরাসের মোকাবিলা করতে পারে, এমন কোনও বৈজ্ঞানিক প্রমাণ বুম খুঁজে পায়নি।
"করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে হোমিওপ্যাথি ! টানা তিনদিন সেবন করলেই উধাও হবে করোনা"- এই শিরোনামে একটি খবর গত ৩ মে বাংলাদেশি একটি পোর্টালে প্রকাশিত হয়েছে। এর আগে একই শিরোনামে ২১ এপ্রিল একই খবর প্রকাশিত হয়েছে আরও একটি পোর্টালে।
প্রতিবেদনের ভেতরে বলা হয়েছে--
"করোনা ভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে হোমিওপ্যাথিক ওষুধ আর্সেনিকাম অ্যালবাম ৩০ কার্যকরী ভূমিকা পালন করবে। করোনা ভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে হোমিওপ্যাথি ও ইউনানি ওষুধ ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছে ভারতের 'আয়ুস মন্ত্রণালয়'। আয়ুর্বেদ, ইউনানি, হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা বিষয়ক মন্ত্রণালয়টি বুধবার এক বিবৃতিতে করোনা ভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধের উপায় সংক্রান্ত নানা তথ্য প্রকাশ করেছে। খবর হিন্দুস্তান টাইমস।"
বাংলাদেশি এপ্রিল ও মে মাসে খবরটি প্রকাশ করে "বুধবার এক বিবৃতিতে" জানানোর দাবি করা হলেও, প্রকৃতপক্ষে, ভারতের কেন্দ্রীয় আয়ুর্বেদ, যোগ, ইউনানি, সিদ্ধা ও হোমিওপ্যাথি (আয়ুষ) মন্ত্রণালয় এমন বিবৃতি প্রকাশ করেছিলো চলতি বছরের ২৯ জানুয়ারি।
ভারতের সরকারি নির্দেশিকায় দাবি করা হয়, আর্সেনিকাম অ্যালবাম-৩০ ওষুধটি নাকি কোভিড-১৯ (করোনাভাইরাস) প্রতিরোধ করতে সহায়তা করে।
Advisory for #CoronaVirus
— PIB India #StayHome #StaySafe (@PIB_India) January 29, 2020
Homoeopathy for Prevention of Corona virus Infections
Unani Medicines useful in the symptomatic management of Corona Virus infection
Details here: https://t.co/OXC7PtM7L3
ফ্যাক্ট চেক:
আসলেই কি হোমিওপ্যাথিক ওষুধ 'আর্সেনিকাম অ্যালবাম ৩০' করোনাভাইরাস প্রতিরোধে কার্যকরী ভূমিকা রাখে?
হোমিওপ্যাথি চিকিত্সরা ভারত সরকারের এই দাবিটি সমর্থন করলেও এর বৈজ্ঞানিক ভিত্তিক কী? কোনো বৈজ্ঞানিক গবেষণা বা পরীক্ষায় এমনটি প্রমাণিত কিনা তা খুঁজতে গিয়ে কোনও প্রকাশিত বৈজ্ঞানিক গবেষণার হদিস পায়নি বুম।
প্রতিরোধী ঘোষিত আর্সেনিকাম অ্যালবাম-৩০
২০২০ সালের ২৮ জানুয়ারি ভারতের কেন্দ্রীয় হোমিওপ্যাথি পরিষদ তাদের ৬৪তম বৈঠকে মিলিত হয়ে করোনাভাইরাস মোকাবিলা করার পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করে। তারা সুপারিশ করে, আর্সেনিক ট্রাইঅক্সাইডের দ্রবণ দিয়ে তৈরি এই ওষুধ খালি পেটে ৩ দিন খেতে হবে। আয়ুষ মন্ত্রক অন্যান্য কিছু আয়ুর্বেদিক ও ইউনানি ওষুধের সঙ্গে এই সুপারিশটিও নির্দেশিকায় অন্তর্ভুক্ত করে।
যেহেতু বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) জানিয়েছে যে এখনও করোনাভাইরাস প্রতিষেধক তৈরি নিয়ে গবেষণা চলছে, তাই বুম সে সময়েই আয়ুষ মন্ত্রকের এই নির্দেশিকাকে অসার ও ভিত্তিহীন প্রতিপন্ন করে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা তখনই জানায়—সাবানজল, কোহল-ভিত্তিক দ্রবণ ইত্যাদি জীবাণুনাশক দিয়ে হাত ধোয়ার মতো ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতার নিয়ম মেনে চলা, কাঁচা খাবার এড়িয়ে চলা এবং সর্দি-কাশি হয়েছে এমন লোকের সংস্পর্শ থেকে দূরে থাকাই এই রোগের সংক্রমণ থেকে বাঁচার উপায়।
২ মার্চ তেলেঙ্গানায় এক ব্যক্তির সংক্রমণ ধরা পড়ার পর তেলেঙ্গানা সরকার কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার নির্দেশিকা অনুযায়ী আর্সেনিকাম অ্যালবাম-৩০ ট্যাবলেট বিলি করতে শুরু করে।
বিশেষজ্ঞরা কী বলছেন?
ভারতে রোগ নিরাময়ের ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের চিকিৎসা পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়। তার মধ্যে প্রধান তিনটি হল, অ্যালোপ্যাথি, হোমিওপ্যাথি এবং আয়ুর্বেদ। বুম এই ওষুধের ক্রিয়া সম্পর্কে একজন অ্যালোপ্যাথি চিকিত্সক, একজন হোমিওপ্যাথি চিকিত্সক এবং একজন আয়ুর্বেদ চিকিৎসকের কাছে প্রশ্ন করে। তাঁদের কাছ থেকে মিশ্র প্রতিক্রিয়া পাওয়া গেছে।
মুম্বইয়ের আয়ুর্বেদিক চিকিতৎসক নীতিন কোছার বলেন, তিনি এই ভাইরাসের প্রতিষেধক হিসাবে আর্সেনিক দ্রবণটি সুপারিশ করেন না, কেননা আর্সেনিকের বিষ মানবশরীরকে ক্ষতিগ্রস্ত করে থাকে। অ্যালোপ্যাথি চিকিৎসক এই ওষুধের কার্যকারিতা নিয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকার করে জানান, ভাইরাসের চিকিৎসা বিষয়ক তত্ত্বের স্বপক্ষে প্রামাণ্য গবেষণা থাকা দরকার।
দেশ জুড়ে ডাঃ বাত্রার হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা চালানো সংস্থার প্রধান ডাক্তার অক্ষয় বাত্রার সঙ্গেও বুম যোগাযোগ করে। তাঁর মতে এই ওষুধ পরীক্ষামূলকভাবে প্রয়োগ করে দেখতে কোনও অসুবিধা নেই। "জাপানি এনসেফেলাইটিস-এর ক্ষেত্রেও এই ওষুধ প্রয়োগ করে দেখা হয়েছিল, এগুলি প্রতিষেধকের কাজ ভালই করে। এতে রোগ সেরে যায় না ঠিকই, তবে প্রতিরোধের কাজটা করা যায়। দিনে একটি করে ট্যাবলেট তিন দিন খেলেই এক মাস নিশ্চিন্ত, তবে যদি আবার রোগের উপসর্গ দেখা দেয়, তখন ওই ডোজই পুনরাবৃত্তি করতে হবে।"
বৈজ্ঞানিক প্রমাণ?
বুম বিভিন্ন জনপ্রিয় বিজ্ঞানভিত্তিক ওয়েবসাইট (যেমন ওয়েবমেড, পাবমেড, রিসার্চগেট, গুগল স্কলার প্রভৃতি) তন্ন-তন্ন করে খুঁজে দেখেছে। কোথাও করোনাভাইরাসের প্রতিষেধক বিষয়ে বিজ্ঞানসম্মত গবেষণার কোনও খবর হোমিওপ্যাথি বা অন্য চিকিৎসা সংক্রান্ত পত্রপত্রিকায় পাওয়া যায়নি।
হোমিওপ্যাথিক পরিষদের নির্দেশে ইতিপূর্বে একটাই আর্সেনিকাম অ্যালবাম-৩০ সেবন করার সুপারিশ পাওয়া গিয়েছে তা হল সদ্যোজাতদের পেটখারাপ নিরাময়ের ওষুধ হিসাবে।
একটি গবেষণাপত্রে এমন কথাও রয়েছে যে এই ট্যাবলেটগুলি আর্সেনিক ট্রাইঅক্সাইড এবং ঠিক মতো দ্রবীভূত না হলে এগুলি মানুষের ক্ষতিও করতে পারে।
প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে বুম লাইভ-এর এই প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে।