সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকের একাধিক আইডি ও পেজ থেকে একটি ভিডিও ফুটেজ শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে, পার্বত্য চট্টগ্রামে কুকি-চিন বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ যৌথ বাহিনীর অভিযানের ভিডিও এটি। এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে।
গত ২০ অক্টোবর 'Sohel media' নামের একটি ফেসবুক আইডি থেকে ভিডিওটি শেয়ার করে ক্যাপশনে লেখা হয়, "শাব্বাস, বাংলাদেশ যৌথ বাহিনী পার্বত্য চট্টগ্রামে জংঙ্গী সংগঠনের নির্মূল করার মাস্টার প্লান নিয়ে সময়োপযোগী সাড়াশি অভিযান শুরু করেছে, এ পর্যন্ত অনেকটা সফল হয়েছে। kuki-chin National Front (KNF) যারা পার্বত্য চট্টগ্রামকে স্বায়ত্তশাসিত দেশ হিসেবে দাবি করছে ইতিমধ্যে তাদের অনেক গুলো আস্তানা গুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। KNF ইতিমধ্যে ভিডিও বার্তা দিয়ে পিছু হটার ঘোষণা দিয়েছে। শুকুর আলহামদুলিল্লাহ, গতকাল থেকেই এই অভিযানের দিকে তাকিয়ে ছিলাম। এভাবে সন্তু লারমার বাহিনী জেএসএস যারা পার্বত্য চট্টগ্রামকে নিজস্ব দেশ জুম্মাল্যান্ড হিসেবে দাবি করে আসছে, নিজস্ব সংবিধান ও পতাকাও রয়েছে তাদেরকেও নির্মূল করা হোক।" স্ক্রিনশট দেখুন--
অর্থাৎ দাবি করা হচ্ছে ভিডিও ফুটেজটি পার্বত্য চট্টগ্রামে সম্প্রতি বাংলাদেশ যৌথ বাহিনীর চালানো কোনো অভিযানের।
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, ভিডিওটির পোস্টের বর্ণনায় করা দাবিটি সঠিক নয়। ভিডিওটি বাংলাদেশের নয় বরং থাইল্যান্ড সীমান্তবর্তী মিয়ানমারের কায়াহ রাজ্যের বিদ্রোহী গোষ্ঠী কারেনি আর্মির সামরিক অনুশীলনের।
ভিডিওটি থেকে কী ফ্রেম কেটে রিভার্স ইমেজ সার্চ করে, থাইল্যান্ড ভিত্তিক 'MM True Media' নামের একটি বার্মিজ ভাষী ফেসবুক পেজে ভিডিওটি খুঁজে পাওয়া যায়, যা গত ৩১ আগস্ট পোস্ট করা হয়েছে। পোস্টের ক্যাপশনে লেখা আছে 'KA army ရဲ့ အရေးပေါ် တုံ့ပြန်ရေး လေ့ကျင့်ခန်း' যার স্বয়ংক্রিয় অনুবাদ হলো - 'কেএ আর্মির জরুরী আত্নরক্ষা বিষয়ক অনুশীলন'। পোস্টটি দেখুন--
কেএ আর্মি'র পূর্নরূপ হলো, 'দ্য কারেনি আর্মি'। এটি মিয়ানমারের কারেনি ন্যাশনাল প্রোগ্রেসিভ পার্টির সশস্ত্র শাখা হিসাবে কাজ করে। কারেনি আর্মি মিয়ানমারের কায়াহ রাজ্যে কারেনি জাতিসত্ত্বার স্বাধিকারের দাবিতে মিয়ানমার সরকারের সাথে সশস্ত্র সংঘাতে লিপ্ত।
এই সূত্র ধরে সার্চ করার পর, একই ভিডিওটি মিয়ানমারের আরেকটি বড় সশস্ত্র গোষ্ঠী কারেন ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মির অফিশিয়াল ইউটিউব চ্যানেলে চলতি বছরের ১৩ জুন পোস্ট করতে দেখা যায়। সেখানেও ভিডিওটি কারেনি আর্মির বলে উল্লেখ করা হয়েছে। মিয়ানমারের কায়িন রাজ্য ও পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে কারেন জনগোষ্ঠীর আত্মনিয়ন্ত্রণের জন্য লড়াই করা মিয়ানমারের সবচেয়ে বড় 'সশস্ত্র গেরিলা' সংগঠন কারেন ন্যাশনাল ইউনিয়নের সামরিক শাখা কারেন ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি। ভিডিওটি দেখুন--
ইউটিউবের এই ভিডিওর সাথে ফেসবুকে ভাইরাল ভিডিওটির হুবহু মিল খুঁজে পাওয়া যায়। ইউটিউব ভিডিও থেকে নেয়া স্ক্রিনশট এবং বিভ্রান্তিকর দাবির ফেসবুক ভিডিওর স্ক্রিনশটের পাশাপাশি তুলনা দেখুন--
আলোচ্য ভিডিওতে দৃশ্যমান সামরিক তৎপরতা, ভাষাসহ একাধিক বিষয় যাচাই করে বর্তমানে থাইল্যান্ডে বসবাসরত কারেনি আর্মির একজন সদস্য ব্যক্তিগত ভাবে বুম বাংলাদেশেকে আলোচ্য ভিডিওটি কারেনি আর্মির সামরিক অনুশীলনের বলে নিশ্চিত করেছেন। পাশাপাশি মিয়ানমারে অভ্যন্তরে অবস্থান করা একটি নির্ভরযোগ্য সূত্রও বুম বাংলাদেশেকে জানিয়েছে "এটা কারেনি আর্মির একটি সাধারণ সামরিক অনুশীলন। প্রায়ই জরুরি অবস্থা মোকাবেলায় সৈনিকদের দক্ষতা যাচাই করতে এরকম বিভিন্ন মহড়া পরিচালনা করে কারেনি আর্মি।"
এছাড়া বুম বাংলাদেশের পক্ষ থেকে কারেনি ন্যাশনাল প্রোগ্রেটিভ পার্টির মুখপাত্রের সাথেও যোগাযোগ করা হয়েছে। জবাব পাওয়া মাত্র প্রতিবেদনটি আপডেট করা হবে।
অর্থাৎ ভিডিওটি পার্বত্য চট্টগ্রামে বাংলাদেশের সামরিক বাহিনী বা যৌথ বাহিনীর কোনো অভিযানের নয়।
সুতরাং মিয়ানমারের বিদ্রোহী গোষ্ঠী কারেনি আর্মির একটি অনুশীলনের ভিডিওকে বাংলাদেশের যৌথ বাহিনীর অভিযান দাবি করা হচ্ছে সামাজিক মাধ্যমে, যা বিভ্রান্তিকর।