
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে বিভিন্ন আইডি ও পেজ থেকে একটি ফটোকার্ড পোস্ট করে দাবি করা হচ্ছে, বাংলাদেশের ড. মুহাম্মদ ইউনূস সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করায় জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের ছয় কর্মকর্তাকে বহিষ্কার করা হয়। এরকম কয়েকটি পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে ও এখানে।
গত ৬ এপ্রিল ‘Bangladesh Awami League’ নামক পেজ থেকে ফটোকার্ডটি পোস্ট করে উল্লেখ করা হয়, “আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ফার-রাইট অ্যাক্টিভিস্ট লরা লুমারের সাথে ওভাল অফিসে একটি সাক্ষাতের পর ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিল (এনএসসি) থেকে ছয় কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করেছেন। “দ্য গার্ডিয়ান” -এর প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, লুমার ট্রাম্পের সামনে বিভিন্ন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যাক্তিগত তদন্ত প্রতিবেদন উপস্থাপন করেছিলেন। তিনি দাবি করেছেন যে, এরা ট্রাম্প প্রশাসনের নীতিবিরুদ্ধ কাজ করছিল। এছাড়া অভিযুক্ত ও বরখাস্থদের বিরুদ্ধে আবাধ্যতা;, অমান্যতা, ট্রাম্পের বিরুদ্ধে প্রচারণাসহ একাধিক অভিযোগ উত্থাপন করেছিলেন লরা লুমার।” নিচে পোস্টটির স্ক্রিনশট দেখুন--
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, আলোচ্য দাবিটি সঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে বাংলাদেশের ইউনূস সরকারের সঙ্গে যোগাযোগের কারণে নয় বরং যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সরকার অবাধ্যতার অভিযোগ এনে জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের ছয় কর্মকর্তাকে চাকরিচ্যুত করে।
কি-ওয়ার্ড সার্চ করে “Trump fires six national security staffers after meeting with far-right activist Laura Loomer” শিরোনামে ব্রিটিশ গণমাধ্যম ‘The Guardian’ এর ওয়েবসাইটে একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। ৩ এপ্রিল প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, ওভাল অফিসে বৈঠকের পর ডোনাল্ড ট্রাম্প জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের ছয়জন কর্মীকে বরখাস্ত করেছেন। বৈঠকে ডানপন্থী কর্মী লরা লুমার বেশ কয়েকজন কর্মীর বিরুদ্ধে বিরোধী গবেষণা উপস্থাপন করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন যে তারা মার্কিন রাষ্ট্রপতির প্রতি আনুগত্যহীন ছিলেন। আলোচ্য প্রতিবেদনে কোথাও বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করার কথা উল্লেখ্য নেই। স্ক্রিনশট দেখুন--
পাশাপাশি কি-ওয়ার্ড সার্চ করে “White House national security officials fired, sources say, in Trump's first purge” শিরোনামে ব্রিটিশ সংবাদ সংস্থা ‘Reuters’ এর ওয়েবসাইটে একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। ৪ এপ্রিল প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, ছয় কর্মকর্তাকে কেন অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে তা স্পষ্ট নয়। তবে তিনটি সূত্র জানিয়েছে, বেশ কয়েকজনকে বলা হয়েছে যে তাদের ব্যাকগ্রাউন্ড যাচাইয়ের পর সমস্যা দেখা গিয়েছে। একটি সূত্র জানিয়েছে , গণমাধ্যমে তথ্য ফাঁস হওয়ার বিষয়েও উদ্বেগ রয়েছে, অন্যদিকে দুটি সূত্র জানিয়েছে, বহিষ্কারের এই ঘটনা মূলত সেইসব কর্মকর্তাদের লক্ষ্য করে করা হয়েছে যারা ট্রাম্পের মিত্রদের পছন্দের তুলনায় খুব বেশি হস্তক্ষেপকারী হিসেবে বিবেচিত। স্ক্রিনশট দেখুন--
এছাড়াও ‘The New York Times’, ‘CBS News’, ও ‘DW’ গণমাধ্যমগুলোর ওয়েবসাইটেও একই প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। এসব প্রতিবেদনে বরখাস্তের কারণ হিসেবে ট্রাম্প প্রশাসনের অবাধ্যতার কথা উল্লেখ্য থাকলেও সেখানে ড. ইউনূস সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করার বিষয়ে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
অর্থাৎ মার্কিন ছয় কর্মকর্তাকে বহিষ্কারের সঙ্গে ড. ইউনূস সরকারের সঙ্গে যোগাযোগের কোনো সম্পর্ক নেই। বরং তাদেরকে ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে অবাধ্যতার অভিযোগ এনে বহিষ্কার করা হয়।
সুতরাং, ইউনূস সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করায় মার্কিন ছয় কর্মকর্তাকে বহিষ্কার করা হয়েছে বলে যে দাবি প্রচার করা হচ্ছে ফেসবুকে, যা বিভ্রান্তিকর।