সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকের বিভিন্ন পেজ এবং আইডিতে কয়েকজন ব্যক্তির একটি ছবি পোস্ট করে একজনের প্রতি হলুদ রংয়ের সংকেত দিয়ে দাবি করা হচ্ছে, তিনি ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য। এরকম কয়েকটি পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে।
গত ৭ জানুয়ারি 'Hussain Ahmed হুসাইন আহমদ' নামের একটি ফেসবুক পেজ থেকে এমন একটি ছবি পোস্ট করে ক্যাপশনে লেখা হয়, "শরীফা কে পাওয়া গেছে। হলুদ দাগ দেওয়া উনি ব্রাক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, সম্ভবত উনিই শরীফা!!! শরীফ নাকি শরিফা??? দেখেনতো বুঝেন কিনা।" নিচে পোস্টটির স্ক্রিনশট দেখুন--
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, আলোচ্য পোস্টের দাবিটি সঠিক নয়। ছবিতে দৃশ্যমান হলুদ চিহ্ন দেয়া এই নারী ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বা ভিসি নন বরং তিনি বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রক্টর হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তাঁর নাম ডক্টর রুবানা আহমেদ।
ব্রাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি কে:
কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে গিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টির ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক সৈয়দ মাহফুজুল আজিজের ব্যাপারে তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়। অধ্যাপক আজিজ ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর হিসেবে যোগদান করেন। একই সঙ্গে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়টির ভারপ্রাপ্ত ভাইস-চ্যান্সেলরের দায়িত্বও পালন করছেন। স্ক্রিনশট দেখুন--
আলোচ্য পোস্টে চিহ্নত ব্যক্তির পরিচয়:
সম্প্রতি ট্রান্সজেন্ডার ইস্যুকে কেন্দ্র করে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষককে চাকরিচ্যুত করার প্রতিবাদে আন্দোলন করে প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থীরা। কি-ওয়ার্ড সার্চ করে জানা যায়, চলাকালে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলতে আসেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কয়েকজন শিক্ষক। যার একটি ভিডিও গত ২৩ ডিসেম্বর সংবাদমাধ্যম যায়যায়দিনের অফিশিয়াল ইউটিউব চ্যানেলে পোস্ট করা হয়। ভিডিওটিতে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ইস্যুতে তাদের সাথে বিশ্ববিদ্যালয়টির একজন শিক্ষককে কথা বলতে দেখা যায়। যার সাথে ভাইরাল হওয়া ছবিটির হুবহু মিল রয়েছে। ভিডিওটি দেখুন--
ফেসবুকে আলোচ্য পোস্টের ছবি (বামে) এবং যায়যায়দিন পত্রিকার ইউটিউব চ্যানেলে পোস্ট করা ভিডিও থেকে নেওয়া স্ক্রিনশট (ডানে) পাশাপাশি দেখুন--
এই ভিডিও থেকে নিশ্চিত হওয়া যায়, হলুদ চিহ্ন দিয়ে নির্দেশ করা ব্যক্তি ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের প্রতিনিধি হিসেবে আন্দালনরত শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলছেন। পরবর্তীতে সার্চ করে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে ২০২৩ সালের ১২ অক্টোবর ফল ২০২৩ সেশনের নবীন বরণ অনুষ্ঠান সম্পর্কিত বেশ কিছু ছবি পাওয়া যায়। এর মধ্যে বক্তব্যরত এক শিক্ষকের ছবির সাথে আলোচ্য ছবির চিহ্নিত ব্যক্তির মিল খুঁজে পাওয়া যায়। মুখে মাস্ক থাকলেও আলোচ্য ছবিটির চিহ্নিত ব্যক্তির চশমা, কানের দুল ও চুলের ধরণের সাথে ফেসবুক পোস্টে পাওয়া বক্তব্যরত শিক্ষকের ছবির মধ্যে সাদৃশ্য পাওয়া যায়। স্ক্রিনশট দেখুুন--
পরবর্তীতে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে গিয়ে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ফেসবুক পেজের পোস্টে পাওয়া ছবিতে বক্তব্যরত শাড়ি পরা এই শিক্ষকের প্রোফাইল খুঁজে পাওয়া যায়। ওয়েবসাইটে পরিচয় হিসেবে তাকে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর এবং অর্থনীতি ও সামাজিক বিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। তথ্য অনুযায়ী ওই ব্যক্তির নাম রুবানা আহমেদ। ছবি দেখে নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে দু'জন ব্যক্তি একই। স্ক্রিনশট দেখুন--
এ বিষয়ে আরো নিশ্চিত হতে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে যোগাযোগ করে বুম বাংলাদেশ। বিশ্ববিদ্যালয়টির জনসংযোগ বিভাগের কর্মকর্তা ফাতিয়াস ফাহমিদ জানান, ছবিতে যাকে ভিসি হিসেবে দেখানো হয়েছে তিনি মূলত বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ডক্টর রুবানা আহমেদ।
অর্থাৎ আলোচ্য পোস্টের ছবিতে চিহ্নিত ব্যক্তি ব্রাক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নন বরং তিনি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর।
সুতরাং ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরকে রুবানা আহমেদকে বিশ্ববিদ্যালটির উপাচার্য বলে ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে, যা বিভ্রান্তিকর।