সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকের একাধিক আইডি ও পেজে একটি ছবি পোস্ট করে বলা হচ্ছে, এটি হিমালয়ের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ এভারেস্টে আরোহণ করতে গিয়ে মৃত দুজন ব্যক্তির ছবি। এরকম কয়েকটি ফেসবুক পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে ও এখানে।
গত ২৭ মে 'Ujjal Das' নামের একটি ফেসবুক একাউন্ট থেকে একটি ছবি পোস্ট করে লেখা হয়, "The dead zone of mount Everest,মাউন্ট এভারেস্ট জয় করা এতো সহজ নয়. হয়তো তাদের নাম ও দেশের পতাকা দিয়ে পুরো বিশ্বকে দেখিয়ে তাদের নামখানি ইতিহাসে থাকতো কিন্তুু পড়ে রইলো নিথর দেহখান,আবেগ ও বিবেকের সমাহারে প্রশান্তির জন্য ট্রাভেলিং,পেশায়ে বেকার নেশায়ে পাহাড়ি। ভালো থেকো চূড়ায় থাকা স্বপ্নহীন মানুষের নিথর দেহ...😖🗻"। ফেসবুক পোস্টটির স্ক্রিনশট দেখুন--
অর্থাৎ আলোচ্য ছবিটি এভারেস্ট শৃঙ্গে আরোহণ করতে গিয়ে মৃত ব্যক্তিদের বলে দাবি করা হচ্ছে।
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, দাবিটি সঠিক নয়। আলোচ্য ছবিটি মৃতদেহের নয় এবং হিমালয়ের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ এভারেস্টে আরোহণকালেও ছবিটি ধারণ করা হয়নি। ইউরোপের পিরিনিজ পর্বতমালার ভিগনিমেল পর্বতে আরোহণকালে তীব্র ঠাণ্ডায় বিশ্রাম নেয়ার জন্য তৈরি ডুভে (এক ধরণের বিশেষ পোশাক) পরা অবস্থায় ছবিটি তোলা হয়।
ছবিটি নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চ করে ২০২২ সালের ৩০ নভেম্বর 'itshimalayas' নামে একটি ইনস্টাগ্রাম একাউন্ট থেকে করা পোস্টে আলোচ্য ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়। পোস্টটিতে "Le Vignemale 3298 M" কে লোকেশন হিসেবে উল্লেখ করে এবং johan_maze এবং antoine___baduel নামের দুটি ইনস্টাগ্রাম একাউন্টকে ট্যাগ করে ওই পোস্টটি করা হয়।
উক্ত ইনস্টাগ্রাম পোস্টে উল্লিখিত লোকেশনের ব্যাপারে কি-ওয়ার্ড সার্চ করে জানা যায়, ভিগনিমেল হল ইউরোপের পিরিনিজ পর্বতশ্রেণীর অন্যতম একটি পর্বত, যা ৩২৯৮ মিটার উঁচু। 'itshimalayas' ইনস্টাগ্রাম একাউন্টটির ব্যবহারকারীর নাম ও পরিচয় জানা যায়নি, তবে তিনি ওই পোস্টে এই ছবিটি নিয়ে বিস্তারিত উল্লেখ করেছেন। একাউন্টি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায় এর চার লাখের বেশি ফলোয়ার রয়েছে এবং বিভিন্ন সময়ে তিনি বিভিন্ন স্থান ভ্রমণের অসংখ্য ছবি আপলোড দিয়েছেন।
এই ব্যবহারকারী বলেন, ভিগনিমেল পর্বতে বিশেষ অস্থায়ী নিবাসে অবস্থানকালে আলোচ্য ছবিটি ধারণ করেন জোহান মেইজ। যাত্রাপথে তাদের আরেক সঙ্গী ছিলেন এন্টোইন বাডুয়েল। পর্বতে আরোহণকালে একদিন আবহাওয়া খারাপ হয়ে গেলে তারা সকাল ১০ টা পর্যন্ত ডুভে'র ভিতরে অবস্থান করেন। ডুভে'র ভিতরে অবস্থান করায় তিনি যথেষ্ট উষ্ণ ছিলেন। তবে তিনি সতর্ক করেন, পর্যাপ্ত প্রস্তুতি না নিয়ে বেরিয়ে পড়া উচিত নয় এবং অবশ্যই পর্বতের এসব জায়গা সম্পর্কে আগে থেকেই ভালো ধারণা নেয়া দরকার। পোস্টটি দেখুন--
উপরের পোস্টের সূত্র ধরে, ছবিটির আলোকচিত্রী হিসেবে উল্লেখিত johan_maze নামের ইনস্টাগ্রাম একাউন্টটিতে গিয়ে দেখা যায়, নিজেকে আলপাইন (ইউরোপের আল্পস পর্বতমালা) বিশেষজ্ঞ, প্যারাগ্লাইডিং পাইলট ও আলোকচিত্রী হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন জোহান। তার ইনস্টাগ্রাম একাউন্টে বিভিন্ন পরিস্থিতিতে তোলা একাধিক ডুভে'র ছবিও খুঁজে পাওয়া যায়। স্ক্রিনশট দেখুন--
পরে 'itshimalayas' নামের ওই ইনস্টাগ্রাম একাউন্টের পোস্টে ট্যাগ করা আরেকটি ইন্সটাগ্রাম একাউন্ট 'antoine___baduel'-এ গিয়ে দেখা যায়, একাউন্টটিতে ২০২২ সালের ২১ নভেম্বর ওই একই ছবি জোহান মেজকে ট্যাগ করে পোস্ট করা হয়েছে। পোস্টের ক্যাপশনে লেখা থাকতে দেখা যায়, "Bivouac at the top of Vignemale" (ভিগনিমেল পর্বতে অস্থায়ী নিবাস)। একাউন্টটি থেকে প্রাপ্ত তথ্য থেকে জানা যায়, এন্টোইন বাডুয়েল একজন পর্বত গাইড এবং স্নো বোর্ডার। ওই ইন্সটাগ্রাম পোস্টে হ্যাশট্যাগ করে ভিগনিমেল এবং পিরিনিজ লেখা থাকতে দেখা যায়। ইন্সটাগ্রাম পোস্টটি দেখুন--
অর্থাৎ আলোচ্য ছবিটি এভারেস্টে আরোহণকালে মৃত ব্যক্তিদের নয় বরং ইউরোপের পিরিনিজ পর্বতমালা ভিগনিমেল পর্বতে বৈরী আবহাওয়ায় ডুভে পরে দু'জন পর্বতারোহীর শুয়ে থাকার সময়ে তাদের আরেক সঙ্গী ছবিটি ধারণ করেন।
সুতরাং পর্বত আরোহণের সময়ে প্রতিকূল পরিস্থিতিতে ডুভে পরা দুই ব্যক্তির ছবিকে এভারেস্ট ভ্রমণকালে মৃত ব্যক্তিদের ছবি বলে প্রচার করা হচ্ছে ফেসবুকে, যা বিভ্রান্তিকর।