সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকের বিভিন্ন পেজ ও আইডি থেকে পোস্ট করে বলা হচ্ছে, চাঁদে পাঠানো ভারতের চন্দ্রযান প্রজ্ঞান রোভারের চাকায় অঙ্কিত রয়েছে অশোক স্তম্ভের ছবি। তাই চাঁদের ভূপৃষ্ঠে পথচলা শুরু করতেই চাঁদে অঙ্কিত হচ্ছে অশোক স্তম্ভের চিহ্ন, যাতে রয়েছে শান্তির প্রতীক মহামানব বুদ্ধের ধর্মচক্র। রোভার প্রজ্ঞানের ৬টি চাকার শেষের চাকায় অঙ্কিত রয়েছে এই ধর্মচক্র। পোস্টগুলোতে কয়েকটি ছবির পাশাপাশি অশোক স্তম্ভের সাথে ইসরোর লোগো সম্বলিত একটি সাদাকালো ছবিও যুক্ত করা হয়েছে। এরকম কয়েকটি পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে ও এখানে।
গত ২৬ আগস্ট 'Atish Dipankar অতীশ দীপঙ্কর' নামের একটি ফেসবুক পেজ থেকে "চাঁদের বুকে অঙ্কিত হল বুদ্ধ প্রবর্তিত ধর্মচক্র" শিরোনামে কয়েকটি ছবিসহ একটি পোস্ট করা হয়। তন্মধ্যে বৌদ্ধ ধর্মের অশোক স্তম্ভের সাদাকালো একটি ছবি দেখা যায়। দৃশ্যত মনে হচ্ছে কোথাও তা প্রিন্ট হচ্ছে। এটিকে দাবি করা হচ্ছে, ভারতের চন্দ্রযান প্রজ্ঞান রোভারের চাকায় অঙ্কিত অশোক স্তম্ভের চিহ্নের কারণে চাঁদের ভূপৃষ্ঠে অশোক স্তম্ভের চিহ্ন অঙ্কিত হচ্ছে। ফেসবুক পোস্টের স্ক্রিনশট দেখুন--
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, পোস্টে যুক্ত আলোচ্য অশোক স্তম্ভের ছবিটি বাস্তব নয় বরং এটি একটি ডিজিটাল আর্টওয়ার্ক।
রিভার্স ইমেজ সার্চ এর মাধ্যমে সামাজিক মাধ্যম 'ইনস্টাগ্রাম'-এ 'krishanshugarg' নামের একটি প্রোফাইলে আলোচ্য ছবি সম্বলিত একটি পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়। পোস্টের ক্যাপশনে উল্লেখ করা হয়, "I'm deeply grateful for the overwhelming response to my artwork, and I want to express my appreciation for your support in making it go viral! However I've seen a lot of people claiming it to be "Real Imprints" shared by ISRO."। অর্থাৎ, ছবিটি “Krishanshu Garg” নামক একজনের তৈরি একটি আর্টওয়ার্ক।
পোস্টটির স্ক্রিনশট দেখুন--
পাশাপাশি, কি-ওয়ার্ড সার্চ এর মাধ্যমে ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম 'এই সময়'-এ গত ২৮ আগস্ট প্রকাশিত "চাঁদের মাটিতে অশোকস্তম্ভের ছাপ? জানুন ভাইরাল ছবির সত্যতা" শিরোনামে আলোচিত ছবি সম্বলিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, "কৃষাণু গর্গ নামে এক ব্যক্তি ২৩ অগস্ট সেটি এক্স (টুইটার) হ্যান্ডেলে পোস্ট করেন। তারপর থেকেই সেটি ভাইরাল হতে থাকে। কৃষাণু গর্গের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তিনি জানান, পোস্ট করা ছবিটি কাল্পনিক দৃষ্টিভঙ্গিতে ফটোশপের মাধ্যমে বানিয়েছেন।"
এমনকি ছবিটি ফটোশপের মাধ্যমে তৈরি করেছেন বলে বুম বাংলাদেশকে নিশ্চিত করেছেন ছবিটির ক্রিয়েটর গর্গ।
এছাড়াও, রিভার্স ইমেজ সার্চ করে www.hiclipart.com সাইটে আলোচ্য ছবিতে ব্যবহৃত ভেক্টরের ছবিটিও খুঁজে পাওয়া গেছে। ভেক্টর ও আলোচ্য ছবিটির তুলনা দেখুন--
অর্থাৎ চাঁদের ভূপৃষ্ঠে অশোক স্তম্ভের ছাপ দাবিতে প্রচারিত ছবিটি বাস্তব নয় বরং এটি একটি আর্টওয়ার্ক।
সুতরাং একটি ডিজিটাল আর্টওয়ার্ককে চাঁদের ভূপৃষ্ঠে অঙ্কিত অশোক স্তম্ভের বাস্তব ছবি দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে ফেসবুকে, যা বিভ্রান্তিকর।