সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকের একাধিক পেজ ও আইডি থেকে একটি ভিডিও ফুটেজ পোস্ট করে দাবি করা হচ্ছে, রাজধানীর বঙ্গবাজারে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাটি ইচ্ছে করা ঘটানো হয়েছে, যার প্রমাণ রয়েছে ভিডিওটিতে। আলোচ্য ভিডিওতে একটি সিসিটিভি ফুটেজ জুড়ে দেয়া হয়েছে যেখানে, মোটরবাইক'সহ দুই ব্যক্তিকে দেখতে পাওয়া যায়। এরকম কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে।
গত ৪ এপ্রিল "Team with Riyad faruki" নামের একটি ফেসবুক পেজ থেকে ভিডিওটি পোস্ট করে ক্যাপশনে লেখা হয়েছে, "বঙ্গবাজারে আগুন ইচ্ছে করেই লাগিয়েছে || Bango Bazar News।" ভিডিওটি কেবল একটি পোস্ট থেকেই ১২ মিলিয়নবার দেখা হয়েছে। ভিডিওটিতে বক্তাকে বলতে শোনা যায়, "আসসালামু আলাইকুম, ইতিমধ্যে আপনারা শুনতে পারছেন বঙ্গবাজারে আগুন লাগছে। তবে আমি যদি বলি আগুন লাগে নাই বরং আগুন লাগানো হইসে। উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এই আগুনটা লাগিয়েছে। আপনারা বিশ্বাস করবেন না তাই আপনাদের জন্যে সিসিটিভি ফুটেজ বা বিভিন্ন তথ্য আমি রেখেছি। ....." স্ক্রিনশট দেখুন--
অর্থাৎ দাবি করা হচ্ছে, সিসিটিভি ফুটেজটি বঙ্গবাজারের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার এবং এটি প্রমাণ করে, আগুন লাগার ঘটনাটি পরিকল্পিত।
আবার, গত ৫ এপ্রিল সংবাদমাধ্যম কালবেলার ফেসবুক পেজ থেকে “বঙ্গবাজারে বাইকে ২ জন এসে আগুন লাগিয়েছে: বলছেন ব্যবসায়ীরা” শিরোনামে ইউটিউব চ্যানেলে লিংক পোস্ট করা হয়। ইউটিউবে প্রকাশিত খবরের থাম্বনেইল আলোচ্য সিসিটিভি ফুটেজের ছবি ব্যবহার করা হয়েছে। কালবেলার ভিডিওতে দুজন ব্যক্তি বলতে শোনা যায় যে, দুজন ব্যক্তি বাইকে করে এসে আগুন লাগিয়ে পালিয়ে গেছে বলে তারা ইন্টারনেটে দেখেছেন (১ মিনিট ৩৩ সেকেন্ড ও ২ মিনিট ৫৬ সেকেন্ডে অংশে)। অর্থাৎ তারাও সূত্র হিসাবে আলোচ্য ভিডিওটির বর্ননা দিচ্ছেন।
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, সিসিটিভি ফুটেজটি অন্তত বছর খানেক পুরোনো।
ভিডিওটি থেকে সিসিটিভি ফুটেজ অংশের কি-ফ্রেম কেটে একাধিকবার রিভার্স সার্চ করে ,'SKL-Oxotic' নামের একটি ফেসবুক পেজে আলোচ্য ভিডিওর একটি দীর্ঘ সংস্করণ পাওয়া যায়। যা ২০২২ সালের ৯ এপ্রিল পোস্ট করা হয়েছে। ভিডিওটি ক্যাপশনে Bhoot #bhoothakaalam #bhootboss #bhootni ইত্যাদির মত ভূত বা ভৌতিক বিষয় সংক্রান্ত বেশ কিছু হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করা হয়েছে। তবে ভিডিওটি স্থান সম্পর্কে বিস্তারিত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
ফেসবুকে প্রচারিত ভিডিওটি (বামে) এবং মূল ভিডিওর পাশাপাশি তুলনা দেখুন--
অর্থাৎ নিশ্চিতভাবেই সিসিটিভির ফুটেজটি অন্তত এক বছর পুরোনো এবং এর সাথে বঙ্গবাজারের সাম্প্রতিক অগ্নিকাণ্ডের সাথে এর কোনো সম্পর্ক নেই।
প্রসঙ্গত, গত মঙ্গলবার (৪ এপ্রিল) ভোরে রাজধানীর বঙ্গবাজারে পোশাকের দোকানে আগুন লাগে। সেনাবাহিনীর সম্মিলিত সাহায্যকারী দল, বিমানবাহিনীর সাহায্যকারী দল ও একটি হেলিকপ্টার কাজ করার পর আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। তবে অগ্নিকাণ্ডের উৎস জানতে এখনো তদন্ত চলমান আছে।
সুতরাং অন্তত এক বছর পুরোনো একটি সিসিটিভি ফুটেজকে সূত্রহীনভাবে সম্প্রতি বঙ্গবাজারে আগুন লাগানোর ফুটেজ বলে দাবি করা হচ্ছে সামাজিক মাধ্যমে, যা বিভ্রান্তিকর।