সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের বিভিন্ন আইডি, পেজ ও গ্রুপে মাটিতে একটি শিশুকে এক ব্যক্তির জড়িয়ে রাখার একটি ছবি পোস্ট করে দাবি করা হচ্ছে, তারা দু'জন বাবা-মেয়ে এবং দুর্ঘটনায় দু'জনই পানিতে ডুবে মারা যান। নিশ্চিত মৃত্যু জেনেও মেয়েকে ছাড়েননি বাবা। এরকম কয়েকটি পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে ও এখানে।
গত ১৪ এপ্রিল 'Sk Sohel Islam' নামের একটি অ্যাকাউন্ট থেকে ছবিটি পোস্ট করে উল্লেখ করা হয়, "মৃ'ত্যু নিশ্চিত জেনেও আদরের মেয়েকে বুক থেকে ছাড়েননি এই বাবা। পানিতে ডুবে মৃ"ত্যু হয় দুই' জনেরই। 😭😭😭 সন্তানের প্রতি একজন বাবার ভালোবাসা কতোটা তীব্র হতে পারে ছবিটি তারই একটি চিত্র যাদের বাবা নেই তারা বুঝতে পারে যে দুনিয়াটা কি রকম আর আমরা কি করি বাবা থাকা শর্তেও বাবাকে মূল্যায়ন করি না আল্লাহ সবাইকে বোঝার তৌফিক দান করো আমিন😭😭🤲🤲🤲 সংগ্রহীত।"। নিচে পোস্টটির স্ক্রিনশট দেখুন--
অর্থাৎ দাবি করা হচ্ছে, ছবিটি বাবা-মেয়ের মৃতদেহের। দুর্ঘটনার পর এভাবেই তাদের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, দাবিটি সঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে ২০২০ সালে এক সড়ক দুর্ঘটনায় এই মেয়ে শিশুটির মৃত্যু হলে তাকে এভাবে জড়িয়ে ধরে মাটিতে শুয়ে আর্তনাদ করেন তার চাচা।
ভাইরাল ছবিটির রিভার্স ইমেজ সার্চ করে "মৃত নয় জীবিত, বাবা নয় চাচা" শিরোনামে জাগোনিউজের ২০২০ সালের একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, "ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলার বাসিন্দা শাহজাহান এবং বেলী বেগম দম্পতির সাত বছরের শিশুসন্তান বুলবুলি এবং তার মা বেলী সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন। তিনি স্ত্রী-সন্তান, ভাই ও আত্মীয়দের নিয়ে শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলায় খালাতো ভাইয়ের জানাজায় অংশ নিতে যাচ্ছিলেন। বাবা শাহজাহান ও মেয়ে বুলবুলি ভেবে হৃদয়স্পর্শী ছবিটি শেয়ার করেন অনেকেই। কেউ কেউ বলেছেন বাবা-মেয়ে দুইজনের মারা গেছেন। এ নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়েন অনেকে।" প্রতিবেদনটিতে মেয়েটিকে জড়িয়ে ধরে রাখা ব্যক্তির পরিচয়ও দেওয়া হয়েছে। বলা হয়, "বুলবুলির চাচা শারফুলের (৩৬) কোনো সন্তান নেই। এজন্য ভাই শাহজাহানের মেয়ে বুলবুলিকে নিজের মেয়ের মতো আদর-যত্ন করতেন চাচা শারফুল। নালিতাবাড়ী উপজেলায় খালাতো ভাইয়ের জানাজায় অংশ নিতে যাচ্ছিলেন তিনিও। একই গাড়িতে ছিলেন তারা সবাই। দুর্ঘটনার পর জীবিত অবস্থায় ফিরে দেখেন আদরের ভাতিজিকে মৃত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে। বুলবুলির লাশ বুকে জড়িয়ে কাঁদতে কাঁদতে মাটিতে শুয়ে পড়েন তিনি।" স্ক্রিনশট দেখুন--
এর সূত্র ধরে কি-ওয়ার্ড সার্চ করে ২০২০ সালের ১৮ আগস্ট "আত্মীয়ের জানাজায় অংশ নিতে গিয়ে পথে লাশ হন ৮ জন" শিরোনামে দেশ রুপান্তরের একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। প্রতিবেদনে আলোচ্য ঘটনাটি সম্পর্কে আরো তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনে বলা হয়, শেরপুরের নালিতাবাড়িতে এক আত্মীয়ের জানাজায় অংশ নিতে গিয়ে ময়মনসিংহের ফুলপুর উপজেলায় সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন ৮ জন। মাইক্রাবাস খাদে পড়ে তারা ঘটনাস্থলেই মারা যান। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন ছয়জন। নিহতদের মধ্যে দু'জন হলেন, ভালুকা উপজেলার বাসিন্দা শাহজাহান মিয়ার স্ত্রী বেগম (৩০) ও শিশু কন্যা বুলবুলি (৫)। প্রতিবেদনে শাহজাহান (৪০) ও শারফুল (৩৬) আপন ভাই বলেও উল্লেখ করা হয়। তাদের খালাতো ভাই হাসেম এর জানাজায় যাচ্ছিলেন সবাই। স্ক্রিনশট দেখুন--
অর্থাৎ দুর্ঘটনায় নিহত মেয়েটিকে বুকে জড়িয়ে ধরা ব্যক্তি তার বাবা নয় বরং চাচা। এছাড়া মেয়েটি মৃত হলেও, তাকে জড়িয়ে ধরা তার চাচা মৃত নন। একই মাইক্রোবাসে থাকলেও মেয়েটির বাবা এবং চাচা মারা যাননি।
সুতরাং ছবিটি দুর্ঘটনায় নিহত বাবা-মেয়ের উল্লেখ করে হৃদয়স্পর্শী বর্ণনায় প্রচার করা হচ্ছে ফেসবুকে, যা বিভ্রান্তিকর।