সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকের একাধিক আইডি ও পেজ থেকে উত্তাল সমুদ্রে একটি জাহাজের বিপদজ্জনক অবস্থার ভিডিও পোস্ট করে ভিডিওটি বঙ্গোপসাগরে ধারণ করা বলে দাবি করা হচ্ছে। এরকম কয়েকটি পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে ও এখানে।
গত ১৬ ফেব্রুয়ারি 'Explore The Bangladesh' নামে একটি ফেসবুক গ্রুপে 'Farhan Rifat' নামে একটি ফেসবুক একাউন্ট থেকে একটি ভিডিও পোস্ট করে বলা হয়, "এ মুহূর্তে এই জায়গায় আপনি থাকলে আপনি কি করতেন? লোকেশন বঙ্গোপসাগর ❤️"। ফেসবুক পোস্টটির স্ক্রিনশট দেখুন--
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, দাবিটি সঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে, এন্টার্কটিকা মহাদেশের দক্ষিণ মহাসাগরে নিউজিল্যান্ডের নেভির একটি জাহাজ থেকে ভিডিওটি ধারণ করা হয়।
আলোচ্য ভিডিওটি থেকে কি-ফ্রেম নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চ করে ছবি শেয়ারিং প্ল্যাটফর্ম ও সামাজিক মাধ্যম পিন্টারেস্টে 'Klipland' নামের একটি আইডি থেকে করা একটি পোস্টে কি-ফ্রেমের কাছাকাছি একটি ছবি খুঁজে পাওয়া যায়। ছবিটির বর্ণনায় লেখা হয়, "কয়েক সপ্তাহ আগে, একটি ভিডিও অনলাইনে ভাইরাল হয়েছে যেখানে একটি যুদ্ধজাহাজের ক্রুদেরকে একটি নাটকীয় বাস্তব দৃশ্য ধারণ করতে দেখা গেছে। সমুদ্রযাত্রার সময় তারা জাহাজকে প্লাবিত করার মত বিশাল ঢেউ দেখতে পান যেটাকে বেশ মজাচ্ছলেই নিয়েছেন তারা। দৃশ্যটি দক্ষিণ মহাসাগরে ধারণ করা হয়। নিউজিল্যান্ডের নাবিকরা যুদ্ধজাহাজ এইচএমএনজেডএস ওটাহোতে বেশ বিপজ্জনক পরিস্থিতিতেই যাত্রা করেছিল"। তবে এই পোস্টে ছবিটি কোথায় ধারণ করা হয়েছে বিস্তারিত বলা হলেও কবে ধারণ করা হয়েছে এ ব্যাপারে কোনো ধারণা দেয়া হয়নি। স্ক্রিনশট দেখুন--
এবারে, আলোচ্য ফেসবুক ভিডিওটি থেকে নেয়া স্ক্রিনশট (বামে) এবং পিন্টারেস্টের ছবিটি (ডানে) দেখুন পাশাপাশি--
একই সার্চে ভারতীয় গণমাধ্যম 'NDTV' এর অনলাইন ভার্সনে "A Wave 8-Floor High, Largest Ever Recorded, Forms Near New Zealand" শিরোনামে ২০১৮ সালের ১১ মে প্রকাশিত একটি ছবি সহ প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ছবিটির সাথে আলোচ্য ভিডিওটির মিল রয়েছে। প্রতিবেদনে যুক্ত ছবিটির উপরে লেখা রয়েছে, 'Alex Croucher' এর ইউটিউব ভিডিও থেকে স্ক্রিনশট নেয়া হয়েছে (অনূদিত)। আর ছবিটির ক্যাপশনে বলা হয়, "A monster wave, South of New Zealand, captured during a storm in 2015." অর্থাৎ নিউজিল্যান্ডের দক্ষিণে ২০১৫ সালে ঝড়ের সময় ধারণ করা দানবীয় ঢেউয়ের ছবি। এছাড়া প্রতিবেদনটির টাইমলাইনে বলা হয়, খবরটি ফরাসি বার্তা সংস্থা 'Agence France-Presse' বা AFP থেকে নেয়া হয়েছে। 'NDTV' এর প্রতিবেদনের স্ক্রিনশট দেখুন--
'NDTV' এর প্রতিবেদনে যুক্ত ছবিতে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী ইউটিউবে সার্চ করে 'Alex Croucher' নামের ইউটিউব চ্যানেলে আলোচ্য ভিডিওটির অরিজিনাল ভার্সন খুঁজে পাওয়া যায়। "Southern Ocean Storm" শিরোনামে ২০১৫ সালের ২৪ ডিসেম্বর আপলোড করা ভিডিওটির ডেসক্রিপশনে বলা হয়, "The RNZN vessel HMNZS Otago sailing through a storm in the Southern Ocean. 20m swells with 80KMph winds." অর্থাৎ নিউজিল্যান্ডের রয়াল নেভির জাহাজ এইচএমএনজেড ওটাগো দক্ষিণ মহাসাগরে ঝড়ের কবলে পড়ে, ৮০ কিলোমিটার ঝড়ো হাওয়ায় ২০ মিটার পর্যন্ত পানি ফুলে উঠেছিল। ভিডিওটি দেখুন--
এদিকে, উপরে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে ইউটিউবে কি-ওয়ার্ড সার্চ করে 'Licet Studios' নামের একটি ভেরিফায়েড ইউটিউব চ্যানেলে সাগরে ঝড়ের কবলে পড়া জাহাজের একটি কম্পাইলড ভিডিও পাওয়া যায়, "Ships in Storms | 10+ TERRIFYING MONSTER WAVES, Hurricanes & Thunderstorms at Sea" শিরোনামে ভিডিওটি ২০২০ সালের মার্চে আপলোড করা হয়। ইউটিউব ভিডিওটির ১ মিনিট ১৮ সেকেন্ড থেকে দুই মিনিট পর্যন্ত আলোচ্য ভিডিওটির সাথে হুবহু মিল রয়েছে। এখানে ভিডিওটির সাবটাইটেলে বলা হয়, "দক্ষিণ মহাসাগরে নিউজিল্যান্ডের একটি যুদ্ধ জাহাজ ঝড়ের কবলে পড়ে, হঠাৎ বিশাল এই ঢেউ দেখে জাহাজের ক্রুরা অবাক হন। দক্ষিণ মহাসাগর পৃথিবীর সবচেয়ে শীতল ও ঝড়ো হাওয়ার মহাসাগর।" ভিডিওটির ডেস্ক্রিপশনে ১ মিনিট ১৮ সেকেন্ডে শুরু হওয়া ভিডিও ক্লিপটি ধারণের স্থান হিসেবে এন্টার্কটিকা মহাদেশের দক্ষিণ মহাসাগর বলে উল্লেখ করা হয়। ভিডিওটি দেখুন--
অর্থাৎ আলোচ্য ভিডিওটি বঙ্গোপসাগরে ধারণ করার দাবিটি সঠিক নয় বরং এটি এন্টার্কটিকা মহাদেশের দক্ষিণ মহাসাগরে ঝড়ের কবলে পড়া নিউজিল্যান্ডের নেভির একটি জাহাজ থেকে ধারণ করা হয়েছে।
সুতরাং এন্টার্কটিকা মহাদেশের দক্ষিণ মহাসাগরে ধারণকৃত একটি ভিডিওকে বঙ্গোপসাগরে ধারণকৃত বলে প্রচার করা হচ্ছে ফেসবুকে, যা বিভ্রান্তিকর।