সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ট্যানেল ছিদ্র হয়ে পানি প্রবেশ করার একটি ভিডিও পোস্ট করে দাবি করা হচ্ছে, ভিডিওটি চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর নিচে নির্মিত দেশের অন্যতম মেগা প্রজেক্ট বঙ্গবন্ধু টানেলের। বলা হচ্ছে সম্প্রতি ঘূর্ণিঝড় রেমালের কারণে টানেল ছিদ্র হয়ে পানি প্রবেশ করছে। এরকম কয়েকটি পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে ও এখানে।
গত ২৭ মে 'Hannan Aslam' নামক একটি আইডি থেকে ভিডিওটি পোস্ট করে উল্লেখ করা হয়, "কর্ণফুলী ট্যানেলে পানি ঢুকায় প্রমানিত উন্নয়নের জোয়ারে ভাসছে চট্টগ্রাম।" পোস্টটির স্ক্রিনশট দেখুন--
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, দাবিটি সঠিক নয়। ভিডিওটি চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর নিচে নির্মিত বঙ্গবন্ধু টানেলের নয় বরং চীনের অন্যতম বৃহৎ শহর ছংছিং এর তুঝু টানেলের। তিন বছর আগে উদ্বোধন করা এই টানেলটি গত ২৬ মে ছিদ্র হয়ে পানি প্রবেশ করে এবং তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিয়ে কর্তৃপক্ষ ছিদ্র বন্ধ করে দেয়।
ভিডিওটি থেকে কি-ফ্রেম নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চ করে "A tunnel in Chongqing is leaking like a water curtain cave. It has been open to traffic for less than 3 years" শিরোনামে কানাডা থেকে পরিচালিত চাইনিজ নিউজ পোর্টাল 'yorkbbs' ওয়েবসাইটে ছবিসহ একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। প্রতিবেদনে ব্যবহৃত ছবিটির সঙ্গে ভাইরাল ভিডিওর মিল পাওয়া যায়। প্রতিবেদনে বলা হয়, গত ২৬ মে চীনের ছংছিং শহরের তুঝু টানেল ছিদ্র হয়ে পানি প্রবেশ করে। তাৎক্ষণিক দেশটির জরুরী ব্যবস্থাপনা বিভাগ ঘটনাস্থলে এসে সমস্যা সমাধান করে। স্ক্রিনশট দেখুন--
একই সার্চে 'CCTV: Critical China True View' নামের একটি ওয়েবসাইটে "Shoddy construction projects reappear in China: Chongqing tunnel built three years ago leaks immediately after heavy rain" শিরোনামে ৪ সেকেন্ডের একটি ভিডিওসহ একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। যেই ভিডিওর সঙ্গে ভাইরাল ভিডিওটির মিল খুঁজে পাওয়া যায়। প্রতিবেদনে বলা হয়, তিন বছর আগে উদ্বোধন করা চায়নার ছংছিং শহরের তুঝু টানেলে ছিদ্র হয়ে পানি প্রবেশ করে। স্ক্রিনশট দেখুন--
এছাড়া, বাংলাদেশের গণমাধ্যমে প্রকাশিত বঙ্গবন্ধু টানেলের ছবির সাথে আলোচ্য ভিডিওটির দৃশ্যের যথেষ্ট বৈসাদৃশ্য লক্ষ্য করা যায়। নিচে দুটি টানেলের পার্থক্য দেখুন পাশাপাশি--
এছাড়া কি-ওয়ার্ড সার্চ করে আলোচ্য দাবির পক্ষে কোনো প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়নি। তবে ঘূর্ণিঝড়ের কারণে ক্ষয়ক্ষতির আশংকায় গত ২৬ মে সন্ধ্যা ছয়টা থেকে ২৭ মে সকাল ছয়টা পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু টানেল বন্ধ করে রাখা হয় এবং পরবর্তীতে ২৭ তারিখ সকাল নয়টায় যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হয়। চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর নিচে নির্মিত দেশের অন্যতম মেগা প্রজেক্ট বঙ্গবন্ধু টানেলে এমন কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে সে খবর দেশের গণমাধ্যমে গুরুত্বের সাথে প্রচারিত হত।
অর্থাৎ টানেলের ভেতর পানি প্রবেশের ভাইরাল ভিডিওটি বঙ্গবন্ধু টানেলের নয় বরং চীনের ছংছিং শহরের তুঝু টানেলের ভেতর পানি প্রবেশের ভিডিও এটি।
সুতরাং চীনের একটি টানেলের ভেতর পানি প্রবেশের ভিডিওকে বঙ্গবন্ধু টানেলের ভিডিও বলে প্রচার করা হচ্ছে ফেসবুকে, যা বিভ্রান্তিকর।