সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের একাধিক আইডি ও পেজ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলারের একটি সংবাদ সম্মেলনের ভিডিও পোস্ট করা হচ্ছে। যেখানে দাবি করা হচ্ছে, বিএনপির কার্যক্রমকে 'সন্ত্রাসী' কর্মকাণ্ড উল্লেখ করে মন্তব্য করেছে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর। এরকম কযেকটি পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে।
গত ১৫ ডিসেম্বর 'Yasin Arafath' নামের একটি পেজ থেকে ভিডিওটি পোস্ট করে তার ক্যাপশনে বলা হয়, "বিএনপির সন্ত্রাসী কর্মকান্ড নিয়ে মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া #সন্ত্রাসী #সংগঠন-#বিএনপির #কর্মকান্ড।" নিচে স্ক্রিনশট দেখুন--
ভিডিও প্রতিবেদনটির দাবি:
ভিডিওটিতে একজন প্রতিবেদককে বলতে শোনা যায়, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি’র সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড নিয়ে মন্তব্য করেছেন মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার। প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির লাগাতার হরতাল, অবরোধের সময় যানবাহন ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় বাংলাদেশের নির্বাচন বাধাগ্রস্ত হবে কিনা এমন প্রশ্ন উঠে আসে সংবাদ সম্মেলনে। স্থানীয় (যুক্তরাষ্ট্র) সময় বৃহস্পতিবার (১৪ ডিসেম্বর ২০২৩) সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, আলোচ্য দাবিটি সঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে, বিএনপি 'সন্ত্রাসী' কর্মকাণ্ড করছে- এমন কোনো 'প্রশ্ন এবং এর জবাব' সম্প্রতি মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলারের সংবাদ সম্মেলনে উঠে আসেনি।
কি-ওয়ার্ড সার্চ করে যুক্তরাষ্ট্রের ডিপার্টমেন্টর অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে ১৪ ডিসেম্বর ২০২৩ আয়োজিত স্টেট ডিপার্টমেন্টের নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনের একটি ভিডিও এবং ইংরেজি ট্রান্সক্রিপ্ট পাওয়া যায়। ওই সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্ন করা হয়- "QUESTION: — and another one – yeah, Israel and Palestine. A wave of arson attacks on buses full of passengers and trucks, displacing rail tracks, petrol bombing train coaches during blockades, witnessed bus helpers burned alive with scored – injured to derail the election. Does U.S. consider such action undermine the prelude to free and fair election in Bangladesh?" (প্রশ্ন: যাত্রীবাহী বাস এবং ট্রাকে অগ্নিসংযোগ করা হচ্ছে, রেলের লাইন উৎপাটন করা হচ্ছে, অবরোধের সময় ট্রেনে পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ করা হচ্ছে, বাসের হেলপার আগুনে পুড়ে মারা যাচ্ছেন, যার উদ্দেশ্য নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করা। যুক্তরাষ্ট্র কি মনে করে যে, এ ধরণের হামলা বাংলাদেশে একটি অবাধ এবং সুষ্টু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার ক্ষেত্রে অন্তরায়?)
যার উত্তরে ম্যাথিউ মিলার বলেন, "MR MILLER: So you have heard me say consistently from this podium that we want to see free and fair elections held in Bangladesh, and one of the components of a free and fair election is that that election be conducted without violence." (মিলার: আপনি শুনে থাকবেন যা আমি ধারাবাহিকভাবে এই পোডিয়ামে দাঁড়িয়ে বলেছি যে, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে একটি সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন দেখতে চায়। এবং অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের একটি মূল উপাদান হচ্ছে যে, সেটা পুরোপুরি সহিংসতামুক্ত হতে হবে।) স্ক্রিনশট দেখুন--
সংবাদ সম্মেলনে ম্যাথিউ মিলারকে বিএনপি নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে দেখা যায়নি।
এছাড়াও, কি-ওয়ার্ড সার্চ করে U.S. Embassy Dhaka এর ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে ১৪ ডিসেম্বর একটি ম্যাথিউ মিলারের সংবাদ সম্মেলনের একটি ভিডিও পোস্ট করতে দেখা যায়। ওই পোস্টে বলা হয়, "সরকারের, বিরোধী দলের হাজার হাজার সদস্যকে গণগ্রেফতার ও কারাগারে নির্যাতনের খবরে আমরা অত্যন্ত উদ্বিগ্ন। আমরা সকল পক্ষকে সংযম প্রদর্শন এবং সহিংসতা এড়ানোর আহ্বান জানাই।" - ম্যাথু মিলার, মুখপাত্র ("We are deeply concerned by the reports of mass arrests of thousands of opposition members and reports of torture in prison. We urge all sides to exercise restraint and avoid violence." - Matthew Miller, Spokesperson. পোস্টটি দেখুন--
আলোচ্য পোস্টেও তাকে বিএনপির কার্যক্রমকে 'সন্ত্রাসী' কর্মকাণ্ড উল্লেখ করে কোনো মন্তব্য করতে দেখা যায়নি।
অর্থাৎ যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের সংবাদ সম্মেলনে ম্যাথিউ মিলার বিএনপির কর্মকাণ্ডকে 'সন্ত্রাসী' হিসেবে আখ্যা দিয়ে কোনো মন্তব্য করেননি।
সুতরাং ম্যাথিউ মিলারের ভিডিও ফেসবুকে পোস্ট করে তাঁর বরাতে বিএনপি 'সন্ত্রাসী' কর্মকাণ্ড করছে বলে প্রচার করা হচ্ছে, যা বিভ্রান্তিকর।