সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে বিভিন্ন গণমাধ্যমের পেজ সহ সাধারণ পেজ এবং গ্রুপে পোস্ট করে বলা হচ্ছে, ভারতের ঐতিহাসিক বাবরি মসজিদ ভেঙ্গে সে জায়গায় নির্মিত বহুল আলোচিত রামমন্দির উদ্বোধনের আগে, ওই অনুষ্ঠানের জন্য আতশবাজি বহনকারী ট্রাকে আগুন লেগেছে। এরকম কয়েকটি পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে ও এখানে।
গত ১৭ জানুয়ারি বেসরকারি টেলিভিশন 'চ্যানেল ২৪' এর ভেরিফাইড ফেসবুক পেজ 'Channel 24' থেকে "বাবরি মসজিদের জায়গায় রামমন্দির উদ্বোধনের আতশবাজির ট্রাকে আগুন, অযোধ্যায় লঙ্কাকাণ্ড" লেখা ফটকার্ড যুক্ত করে একটি পোস্ট করা হয়। ফেসবুক পোস্টটির স্ক্রিনশট দেখুন--
বিষয়টি নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করেছে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল ২৪ ও আরটিভি সহ আরো কয়েকটি গণমাধ্যম।
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, আলোচ্য পোস্টের দাবিটি সঠিক নয়। ট্রাকটি অযোধ্যার রামমন্দির উদ্বোধনের জন্য আতশবাজি বহন করছিল না বরং উত্তর প্রদেশের দোকানে সরবরাহের জন্য আতশবাজি পরিবহন করছিল। ভারতীয় গণমাধ্যম ও স্থানীয় পুলিশ ট্রাকটি উত্তর প্রদেশের দোকানে সরবরাহের জন্য আতশবাজি পরিবহণ করছিল বলে নিশ্চিত করেছে।
'চ্যানেল ২৪' এর আলোচ্য প্রতিবেদনে ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম ইন্ডিয়া টুডের এক প্রতিবেদনের বরাতে উল্লেখ করা হয়েছে 'ভারতের বাবরি মসজিদের জায়গায় বহুল আলোচিত রামমন্দির উদ্বোধনের আগেই অনুষ্ঠানের আতশবাজির ট্রাকে আগুন লেগেছে। মঙ্গলবার (১৬ জানুয়ারি) রাতে অযোধ্যার কাছাকাছি উত্তরপ্রদেশের উন্নাওয়ে এ দুর্ঘটনা ঘটে '। পরবর্তীতে সার্চ করে ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম ইন্ডিয়া টুডের সেই প্রতিবেদনটি (ভিডিও) খুঁজে পাওয়া যায়। ইন্ডিয়া টুডের প্রতিবেদনটির (আর্কাইভ) স্ক্রিনশট দেখুন--
তবে এরইমধ্যে ইন্ডিয়া টুডে তাদের প্রতিবেদন সংশোধন করে হালনাগাদ করেছে। তাদের সংশোধিত প্রতিবেদেনের স্ক্রিনশট দেখুন--
এদিকে, কি-ওয়ার্ড সার্চ এর মাধ্যমে ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম 'টাইমস অব ইন্ডিয়া'-তে গত ১৮ জানুয়ারি "তামিলনাড়ু থেকে বাহরাইচের উদ্দেশ্যে যাত্রা করা আতশবাজি বহনকারী ট্রাকে আগুন" (অনূদিত) শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, "ট্রাকটি তামিলনাড়ু থেকে শুরু করে উত্তর প্রদেশের বাহরাইচের দিকে যাচ্ছিল"। তবে এই প্রতিবেদনে ট্রাকটির সাথে অযোধ্যার রামমন্দিরের সংশ্লিষ্টতার কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। প্রতিবেদনটির স্ক্রিনশট দেখুন--
পাশাপাশি, সামাজিক মাধ্যম টুইটারে উন্নাও পুলিশের ভেরিফাইড এক্স (সাবেক টুইটার) একাউন্ট থেকে এ বিষয়ে একটি পোস্ট করা হয়। পোস্টে জানানো হয়েছে, "গত ১৭ জানুয়ারি সকাল ৪:০০ টার দিকে আতশবাজি বোঝাই ট্রাক নম্বর TN 28 AL 6639 পূর্বা থানার অন্তর্গত খড়গিখেদা গ্রামের কাছে অজ্ঞাত কারণে আগুন ধরে যায়। ট্রাকটি তামিলনাড়ু থেকে বাহরাইচ যাচ্ছিল এবং এতে দোকানে সরবরাহের জন্য আতশবাজি, শিশুদের পোস্টার, চলচ্চিত্র শিল্পীদের পোস্টার এবং ধর্মীয় পোস্টার বোঝাই করা ছিল" (অনূদিত ও সংক্ষেপিত)। টুইটারে এক সাংবাদিকের একাউন্টে প্রকাশিত উন্নাও পুলিশের ডেপুটি এসপি সোনম সিং'য়ের এ বিষয়ে দেয়া বক্তব্যের একটি ভিডিও পাওয়া গেছে। উন্নাও পুলিশের পোস্টটির স্ক্রিনশট দেখুন--
এছাড়াও কি-ওয়ার্ড সার্চ এর মাধ্যমে ভারতীয় তথ্য যাচাই প্রতিষ্ঠান 'বুমলাইভ'-এ গত ১৯ জানুয়ারি "Did A Truck Carrying Firecrackers For Ayodhya Ram Temple Catch Fire? FactCheck" শিরোনামে একটি তথ্য যাচাই প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। প্রতিবেদনে উন্নাও পুলিশের প্রতিনিধির বরাতে উল্লেখ করা হয়েছে, "ট্রাকটি উত্তরপ্রদেশের বাহরাইচ যাচ্ছিল, অযোধ্যার দিকে নয়। ট্রাকে সংরক্ষিত আতশবাজিগুলি তামিলনাড়ুর শিবাকাশী থেকে লোড করা হয়েছিল এবং ট্রাকটি বাহরাইচের পথে ছিল। অযোধ্যায় রামমন্দিরের অনুষ্ঠানের সাথে এই আতশবাজির কোনও সম্পর্ক ছিল না"।
অর্থাৎ ট্রাকটিতে অযোধ্যার মন্দিরের অনুষ্ঠানের আতশবাজি পরিবহন করা হচ্ছিলনা।
সুতরাং গণমাধ্যমসহ ফেসবুকের বিভিন্ন পেজ ও গ্রুপে রামমন্দির উদ্বোধনের আতশবাজির ট্রাকে আগুন--এমন দাবি প্রচার করা হচ্ছে; যা বিভ্রান্তিকর।