সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে একাধিক আইডি থেকে বাংলাদেশের পতাকার ছবিসম্বলিত একটি ত্রাণের বহরের ছবি পোস্ট করে বলা হচ্ছে, রমজান মাসের শুরুতে ইসরায়েলের হামলায় বিপর্যস্ত ফিলিস্তিনের গাজাবাসীর জন্য ত্রাণ পাঠিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। এরকম কয়েকটি পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে ও এখানে।
গত ১২ মার্চ 'Omi Rahman Pial' নামের একটি ফেসবুক আইডি থেকে পোস্ট করে বলা হয়, "বাংলার মুমিনরা যখন ইফতারের মেন্যু নিয়া বিচলিত, খেজুর খাইতে মানা করায় সরকারের চৌদ্দগুষ্ঠি উদ্ধার করতেছে, তখন তাগো মাথায় আসে না যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজার মুসলমানরা কেমন আছে! সরকার কিন্তু ভোলে নাই... #SaveGazaChildren #SaveGaza"। ওই পোস্টটিতে বাংলাদেশের পতাকার ছবিসম্বলিত একটি ত্রাণের বহরের ছবি পোস্ট করা হয়। ফেসবুক পোস্টটির স্ক্রিনশট দেখুন--
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, দাবিটি সঠিক নয়। ইসরায়েলের হামলায় বিপর্যস্ত ফিলিস্তিনের গাজাবাসীর জন্য রমজান মাসের শুরুতে ত্রাণ পাঠায়নি বাংলাদেশ সরকার। মিশরের আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত বাংলাদেশ সহ বিভিন্ন দেশের শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে সংগ্রহ করা অনুদানে বিশ্ববিদ্যালয়টির জাকাত ও চ্যারিটি ফান্ডের মাধ্যমে গাজায় এই ত্রাণ পাঠানো হয়।
কি-ওয়ার্ড সার্চ করে অনলাইন পোর্টাল জাগোনিউজের ওয়েবসাইটে গত ১৩ মার্চ "রমজানে গাজায় পৌঁছালো বাংলাদেশিদের ত্রাণ" শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, "পবিত্র রমজানে অসহায় গাজাবাসীদের জন্য খাবারসহ ব্যক্তিগত ব্যবহারিক সামগ্রী পাঠিয়েছে বিভিন্ন দেশ। এরমধ্যে বাংলাদেশেরও ত্রাণ রয়েছে।... মিসরের বিখ্যাত আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলাদেশি শিক্ষার্থী হোজাইফা খান বলেন, ‘দ্য ওয়ার্ল্ড অন উম্মাহ ফাউন্ডেশন’ চ্যারিটি ফান্ডের মাধ্যমে রমজানের শুরুতেই ৩৫ লাখ টাকার ত্রাণ পাঠানো হয়। এই অর্থ আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা ‘হিউম্যান ফার্স্ট, ‘আজহার ওয়েলফেয়ার সোসাইটি বাংলাদেশ’ ও ‘হোয়াট পিজন’ নামের ছাত্র সংগঠনের মাধ্যমে সংগ্রহ করে।" অর্থাৎ মিশরের আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত বাংলাদেশ সহ বিভিন্ন দেশের শিক্ষার্থীরা গাজাবাসীর সহায়তার উদ্দেশ্যে একাধিক সংগঠনের ব্যানারে এই ত্রাণের অর্থ সংগ্রহ করে। স্ক্রিনশট দেখুন--
আরো কি-ওয়ার্ড সার্চ করে গত ১৩ মার্চ দৈনিক পত্রিকা যুগান্তরের ওয়েবসাইটে "রমজানে গাজায় ত্রাণ পাঠাল বাংলাদেশ" শিরোনামে একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। ওই প্রতিবেদনেও বলা হয়, "পবিত্র রমজান মাস উপলক্ষ্যে মিসরের বিখ্যাত আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ভিত্তিক সংস্থা আল আজহার জাকাত অ্যান্ড চ্যারিটি হাউসের মাধ্যমে ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকার বাসিন্দাদের জন্য ত্রাণ হিসেবে ২ হাজার টন খাদ্য ও চিকিৎসা সামগ্রী পাঠিয়েছে বাংলাদেশসহ ৯ দেশ।" স্ক্রিনশট দেখুন--
উপরের প্রতিবেদনের সূত্র ধরে কি-ওয়ার্ড সার্চ করে মিশরভিত্তিক গণমাধ্যম আরহাম অনলাইনের ওয়েবসাইটে গত ১১ মার্চ "Al-Azhar Zakat and Charity House dispatches Ramadan convoy to Gaza" শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, মিশরের আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের জাকাত ও চ্যারিটি হাউজের তত্ত্বাবধানে গত ১১ মার্চ ফিলিস্তিনের গাজাবাসীর জন্য ২০০০ টন খাদ্য ও মানবিক সহায়তা পাঠানো হয়েছে। স্ক্রিনশট দেখুন--
এছাড়াও, ওই প্রতিবেদনে এই ত্রাণ সহায়তায় বাংলাদেশিদের অংশগ্রহণের ব্যাপারেও উল্লেখ করা হয়। এতে বলা হয়, ৮০ টি দেশ থেকে মানুষ এই ত্রাণের জন্য অর্থ পাঠিয়েছেন, তবে বাংলাদেশ সহ ৯টি দেশ থেকে সবচেয়ে বেশি পরিমাণে অর্থ সহায়তা এসেছে। স্ক্রিনশট দেখুন--
এছাড়াও ডেইলি স্টার, দৈনিক যুগান্তর, দি বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড এবং ঢাকা ট্রিবিউনের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকেও জানা যায় একই তথ্য।
অর্থাৎ চলতি রমজান মাসের শুরুতে মিশরের আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত বাংলাদেশ সহ বিভিন্ন দেশের শিক্ষার্থীদের পৃথক পৃথক উদ্যোগে সংগ্রহ করা আর্থিক অনুদানে গাজাবাসীর জন্য এই ত্রাণ পাঠানো হয়েছে। বাংলাদেশ সরকারের সাথে গাজায় এই ত্রাণের কোনো সম্পর্ক নেই।
সুতরাং বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে ইসরায়েলি হামলায় বিপর্যস্ত ফিলিস্তিনের গাজায় ত্রাণ পাঠানো হয়েছে বলে যে তথ্য প্রচার করা হচ্ছে ফেসবুকে, তা বিভ্রান্তিকর।