সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের একাধিক আইডি, পেজ ও গ্রুপ থেকে সিরাজগঞ্জের একটি হিন্দু পরিবারের তিন সদস্যের হত্যাকাণ্ডের ঘটনার ছবি প্রচার করা হচ্ছে। একাধিক পোস্টে BangladeshiHindus-এর মত বেশ কিছু হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করে দাবি করা হচ্ছে, সাম্প্রদায়িক সহিংসতার কারণে এই হত্যাকাণ্ড ঘটেছে এবং এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত মুসলিম সম্প্রদায়ের লোকজন। এমন কয়েকটি পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে।
৩১ জানুয়ারি 'Polash Das Adhi' নামের একটি ফেসবুক আইডি থেকে তিনজনের ছবি পোস্ট করে ক্যাপশনে লেখা হয়, "তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি সেই সব মানুষ কে যারা বলে হিন্দু মুসলিম ভাই ভাই এখন আপনারা কোথায়???? যারা বলেন হিন্দুরা আমার ভাই বোন.... মুখে দেন মধু আর গলায় দেন রশি 😡😡😡😡এই আপনাদের ভালোবাসা 🤔🤔🤔🤔 শুধু জানতে চাই আর কত বলি দিব এই দেশে থাকার অপরাধে...জানতে চাই কি অপরাধ আমাদের? সিরাজগঞ্জ জেলার তারাশ উপজেলায় এক হিন্দু পরিবারের তিনজনকে গলা কেটে নৃশংস ভাবে হত্যা করেছে দুর্বিত্তরা। আমি সেই সব নেতাদের বলতে চাই যারা ভোটপর সময় এসে বলেন যে হিন্দু ভাইরা বোনরা আমার ঘরের মানুষ,,,,, যারা বলেন যে আপনাদের সুরক্ষা দেওয়ার দায়িত্ব আমার....এটাই কি আপনাদের নেতৃত্ব???? এটাই কি আপনাদের ভালোবাসা সংখ্যা লগুর প্রতি।" নিচে পোস্টটির স্ক্রিনশট দেখুন--
একই ঘটনা উল্লেখ করে ১ ফেব্রুয়ারি 'Eugene Struthers’' নামের একটি ফেসবুক পেজ থেকে ইংরেজিতে ক্যাপশন দিয়ে দাবি করা হচ্ছে, বাংলাদেশে একটি হিন্দু পরিবারের তিন ব্যক্তিকে গলাকেটে হত্যা করেছে ইসলামপন্থীরা (অনূদিত)। পোস্টটি দেখুন এখানে। স্ক্রিনশট দেখুন--
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, আলোচ্য দাবিগুলো সঠিক নয়। মূলত, সিরাজগঞ্জের একই হিন্দু পরিবারের তিন সদস্য খুনের ঘটনার সাথে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার সম্পর্ক নেই। এ ঘটনায় জড়িত ব্যক্তি রাজিব ভৌমিক ভিন্ন কোনো সম্প্রদায়ের নয় বরং নিহতদের ঘনিষ্ঠ আত্মীয় ও একই ধর্মের ব্যক্তি।
আলোচ্য পোস্টের কোলাজ ছবিটি নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চ করে "ঋণ শোধ করতে না পেরে মামা-মামি-মামাতো বোনকে হত্যা করেন ভাগ্নে" শিরোনামে গত ৩১ জানুয়ারি ডেইলি স্টারের একটি প্রতিবেদনে ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়। প্রতিবেদনে প্রকাশিত নিহতদের ছবির সঙ্গে ফেসবুকে পোস্ট করা নিহত তিন ব্যক্তির ছবির হুবহু মিল পাওয়া যায়। প্রতিবেদন এবং ফেসবুক পোস্টটির ঘটনাস্থল হিসেবে সিরাজগঞ্জ জেলার নাম উল্লেখ করা হয়। ডেইলি স্টারে প্রকাশিত ছবি (বামে) এবং ফেসবুক ভাইরাল হওয়া ছবি (ডানে) দুটি পাশাপাশি দেখুন--
ডেইলি স্টারের ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, "সিরাজগঞ্জের তাড়াশে একই পরিবারের তিন জনকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় জড়িত রাজিব ভৌমিক নামের এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে পুলিশ। রাজিব নিহত বিকাশ সরকারের ভাগ্নে। মামার কাছ থেকে নেওয়া ঋণ শোধ করতে না পেরে দায় থেকে মুক্তি পেতে মামা, মামি ও তাদের মেয়েকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছেন বলে পুলিশের কাছে স্বীকার করে রাজিব।" স্ক্রিনশট দেখুন--
কি-ওয়ার্ড সার্চ করে গত ৩১ জানুয়ারি প্রথম আলোর "ভাগনেই শেষ করে দিল পরিবারটিকে" শিরোনামে আরও একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। যেখানে বলা হয়, "সিরাজগঞ্জের তাড়াশে একই পরিবারের তিনজনকে গলা কেটে হত্যার ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। সেই সঙ্গে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত অস্ত্রও উদ্ধার করা হয়েছে। গ্রেপ্তার আসামি পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে হত্যার কথা স্বীকার করেছেন এবং তিনজনকে হত্যার কারণ জানিয়েছেন। আজ বুধবার বেলা সাড়ে তিনটার দিকে সিরাজগঞ্জ পুলিশ সুপার মো. আরিফুর রহমান মণ্ডল সংবাদ সম্মেলন করে এ তথ্য জানিয়েছেন। পুলিশ সুপারের সম্মেলনকক্ষে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। গ্রেপ্তার ওই আসামির নাম রাজীব কুমার ভৌমিক (৩৫)। তিনি হত্যার শিকার বিকাশ সরকারের (৪৫) আপন ভাগনে।" স্ক্রিনশট দেখুন--
এদিকে, বাংলাদেশের সিরাজগঞ্জের একই হিন্দু পরিবারের তিনজনকে খুনের ঘটনাটি সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনা বলে ভারতের সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে, তা যাচাই করে সঠিক নয় বলে ফ্যাক্ট চেক প্রতিবেদন প্রকাশ করে ফ্যাক্ট চেক সংস্থা বুমলাইভ। সিরাজগঞ্জের পুলিশ সুপার আরিফুর রহমান মণ্ডলের বরাতে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ঘটনাটি সাম্প্রদায়িক কোনো ঘটনা নয়, নিহত ব্যক্তিরা ও খুনী একই সম্প্রদায়ের।
অর্থাৎ সিরাজগঞ্জে একই হিন্দু পরিবারের তিন সদস্য খুনের ঘটনাটি সাম্প্রদায়িক সহিংসতার নয়।
সুতরাং সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে সিরাজগঞ্জে একই হিন্দু পরিবারের তিন সদস্যের হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটি সাম্প্রদায়িক সংঘাতের ঘটনা বলে প্রচার করা হচ্ছে, যা বিভ্রান্তিকর।