সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের একাধিক গ্রুপ ও পেজ থেকে একটি প্রাসাদের ছবি পোস্ট করে দাবি করা হচ্ছে, এই প্রাসাদটি বসাবসের জন্য মালয়েশিয়া সরকার ভারতীয় বংশোদ্ভুত ইসলামি বক্তা ও বিতার্কিক ড. জাকির নায়েককে উপহার হিসেবে দিয়েছে। এরকম কয়েকটি পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে।
গত ১৪ ডিসেম্বর 'মিজানুর রহমান আজহারী সাপোর্টার' নামের একটি গ্রুপ থেকে 'Shamim' নামের একটি আইডি থেকে পোস্ট করে বলা হয়, "এই সুন্দর বাড়িটা মালয়েশিয়া সরকার ড. জাকির নায়েককে দিয়েছেন। এটা উনার বাসভবন।" নিচে পোস্টটির স্ক্রিনশট দেখুন--
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, আলোচ্য পোস্টে করা দাবিটি সঠিক নয়। এই প্রাসাদটির নাম ইসতানা দারুল ইহসান, যা মালয়েশিয়ার ফেডারেল সরকার সেলাঙ্গর রাজাকে উপহার হিসেবে দেয় এবং এই প্রাসাদটি জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত নয়।
রিভার্স ইমেজ সার্চ করে স্টক ফটোর ওয়েবসাইট অ্যালামি-তে প্রাসাদটির অনুরূপ একটি ছবি খুঁজে পাওয়া যায়। ছবির বিবরণে বলা হয়, "প্রাসাদটির নাম ইসতানা দারুল ইহসান। এটি মালয়েশিয়ার সেলাঙ্গর রাজ্যের সুলতানের বাসভবন।" স্ক্রিনশট দেখুন--
এদিকে রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে স্টক ফটোর ওয়েবসাইট ফ্লিকারে বাসভবনটি সম্পর্কে আরও তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়। ছবিটির বিস্তারিত বিবরণীতে বলা হয়, প্রাসাদটি ২০০০ সালে পুত্রজায়া লেকের পাশে নির্মাণ করা হয়। ধূসর রঙ্গের বিশাল এই প্রাসাদ মালয়েশিয়ার ফেডারেল সরকার সেলাঙ্গর রাজাকে উপহার হিসেবে দেয়। এটি জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত নয়। স্ক্রিনশট দেখুন--
তবে এটি জাকির নায়েককে বসবাসের জন্য দিয়েছে এরকম কোনো তথ্য কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে খুঁজে পাওয়া যায়নি।
অন্যদিকে কি-ওয়ার্ড সার্চ করে মালয়েশিয়া সরকার ডা. জাকির নায়েককে প্রাসদটি দিয়েছে বলে কোনো তথ্য খুঁজে না পাওয়া গেলেও তাকে নাগরিকত্ব দিয়েছে বলে গণমাধ্যমে প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। "মালয়েশিয়ায় স্থায়ী নাগরিকত্ব পেয়েছেন জাকির নায়েক" শিরোনামে নয়াদিগন্তের এক প্রতিবেদনে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মুহাম্মদের উদ্ধিৃতি দিয়ে বলা হয়, "যতদিন পর্যন্ত জাকির নায়েক মালয়েশিয়ায় সমস্যা সৃষ্টি না করছেন, ততদিন তাঁকে ভারতে ফেরানোর কথা ভাবছে না মালয়েশিয়া সরকার। কারণ তাকে ইতিমধ্যেই স্থায়ী নাগরিকত্ব দিয়েছে মালয়েশিয়া সরকার। জাকির নায়েক এদেশে আসার পর কোনো সমস্যা তৈরি হয়নি ৷ স্থায়ী বসবাসের অনুমতি দেওয়ার পর তাকে ভারতের হাতে তুলে দেওয়া যাবে না।" স্ক্রিনশট দেখুন--
অর্থাৎ, প্রাসাদটি বসবাসের জন্য মালয়েশিয়ার সরকারের ডা. জাকির নায়েককে দেয়নি।
প্রসঙ্গত, ড. জাকির নায়েক ২০১৬ সালে বাংলাদেশে হলি আর্টিজান রেস্টুরেন্টে জঙ্গি হামলা ঘটনার পর মালয়েশিয়া যান। পরবর্তীতে দেশটির সরকার তাকে মালয়েশিয়ায় স্থায়ীভাবে থাকার অনুমতি দেয়। যদিও মালয়েশিয়া সরকার জাকির নায়েককে কোনো প্রাসাদ দিয়েছে এমন কোনো তথ্য নানাভাবে কি-ওয়ার্ড সার্চ করে খুঁজে পাওয়া যায়নি।
সুতরাং ড. জাকির নায়েককে বসবাসের জন্য মালয়েশিয়া সরকার দারুল ইহসান প্লেসটি দিয়েছে দাবিতে ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে, যা ভিত্তিহীন।