সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকের একাধিক পেজে একটি ভিডিও শেয়ার করে বলা হচ্ছে, শ্বশুরবাড়ির লোকেদের উপর রাগ করে শ্বশুরবাড়ি থেকে পাওয়া মোটরসাইকেল মাটিতে পুঁতে ফেলেছেন একব্যক্তি। এরকম দুটি ফেসবুক পোস্ট দেখুন এখানে ও এখানে।
গত ১৭ জুন "চিত্র মিডিয়া পাড়া" নামে একটি ফেসবুক পেজে একটি ভিডিও আপলোড করে লেখা হয়, "শ্বশুর বাড়ীর উপর রাগ করে বাইক মাটি চাপা দিলো এক যুবক! #viralvideo #virals #viralpost"। ওই ভিডিওটিতে একটি মোটরসাইকেলকে মাটিতে পুঁতে ফেলতে দেখা যায়। এক পর্যায়ে ইনসেটে ভিডিওটি চলাকালে এক ব্যক্তিকে ঘটনার বর্ণনা দিতে দেখা যায়। বর্ণনায় দাবি করা হয়, শ্বশুরবাড়ি থেকে পছন্দের গাড়ি (বাইক) না পাওয়ায় রাগে ক্ষোভে বাড়ির উঠানে সেই গাড়ি গর্ত করে মাটিচাপা দিয়েছে ময়মনসিংহের এক যুবক। এসময় যৌতুক বিরোধী বক্তব্যও দেয়া হয়। ফেসবুক পোস্টটির স্ক্রিনশট দেখুন--
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, আলোচ্য পোস্টের দাবিটি সঠিক নয়। শ্বশুরবাড়ির উপর রাগ করে মোটরসাইকেল মাটিচাপা দেওয়ার ঘটনাটি সত্য নয়। একটি একটি সাজানো ঘটনা, যা ফেসবুকে ভাইরাল হওয়ার উদ্দেশ্যে বানানো হয়েছে।
আলোচ্য ঘটনাটির সত্যতা জানার জন্যে সার্চ করে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল আরটিভির অনলাইন ভার্সনে "মোটরসাইকেল কবর দেওয়ার ঘটনা সাজানো নাটক" শিরোনামে একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। ওই প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, আকিকুল বাশার ও ইলিয়াস আহমেদ নামে দুই যুবক ভাইরাল হওয়ার জন্য ওই ভিডিওটি কনটেন্ট হিসেবে তৈরি করেন। তারা দুজনেই পেশায় কনটেন্ট ক্রিয়েটর। এছাড়াও, আরটিভিকে আকিকুল বাশার জানিয়েছেন, "আমরা বিডি আকিকুল ও মেজো ভাই পেজে নিয়মিত কনটেন্ট আপলোড করি। সেই ধারবাহিকতায় প্রথমে বাইক নিয়ে একটি ভিডিও বানাই। কিন্তু সেটি ভাইরাল হয়নি। পরে যৌতুককে কেন্দ্র করে বাইক কবর দেওয়ার ঘটনা সাজানো হয়। আমি আসলে বিয়েই করিনি।" অর্থ্যাৎ ফেসবুকে চটকদার ক্যাপশনে বাইক মাটির নিচে চাপা দেওয়ার ওই ভিডিও ভাইরাল হওয়ার উদ্দেশ্যে তৈরি করা হয়। স্ক্রিনশট দেখুন--
এছাড়া, অনলাইন পোর্টাল ডেইলি বাংলাদেশের ওয়েবসাইটেও "মোটরসাইকেল কবর দেওয়ার ঘটনা সাজানো নাটক" শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকেও একই তথ্য পাওয়া যায়। এই প্রতিবেদন থেকে আরো জানা যায়, মেজো ভাই নামে একটি পেজ থেকে দুইদিন আগে প্রকাশ করা হয় একটি ভিডিও। সেখানে দেখানো হয়, একটি মোটরসাইকেল কবরস্থ করা হচ্ছে। কারণ শ্বশুরবাড়ি থেকে পছন্দের বাইক পাননি আকিকুল নামের ওই যুবক। তাই তিনি ক্ষোভে মোটরসাইকেলটি কবরস্থ করেন। এমন আরও অনেক কথা বলা হয়েছে ভিডিওতে। সেই ভিডিওটি দুই দিনে এক কোটি ২০ লাখ মানুষ দেখেছেন। মন্তব্য করেছেন ৫৪ হাজারের বেশি ফেসবুক ব্যবহারকারী। যাদের প্রায় সবাই সমালোচনামূলক মন্তব্য করেছেন। স্ক্রিনশট দেখুন--
এছাড়াও, দৈনিক সংবাদ পত্রিকার অনলাইন ভার্সনে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকেও জানা যায় একই তথ্য।
এদিকে, আলোচ্য ভিডিওটি ফেসবুকে ভাইরাল হলে 'মেজো ভাই' নামের ওই ফেসবুক পেজের সাথে যোগাযোগ করা হয়। ফেসবুক পেজটি থেকে জানানো হয়, তাদের বাইক মাটিচাপা দেওয়ার ভিডিওটি মুছে ফেলা হয়েছে। নেটিজেনদের নেগেটিভ কমেন্টের কারণ হিসেবে তারা নিজেদেরকে দায়ী হিসেবে স্বীকার করে বুম বাংলাদেশকে জানিয়েছে, বাইক মাটিচাপা দেওয়ার ভিডিওটি সাজানো নাটক ছিল।
অর্থ্যাৎ যৌতুক হিসেবে পছন্দের বাইক না পেয়ে বাইক মাটিচাপা দেওয়ার সাজানো নাটকের ভিডিও ফেসবুকে প্রচার করে মেজো ভাই নামের একটি ফেসবুক পেজ। সেই ভিডিওটি পরবর্তীতে বাস্তব দাবিতে ছড়িয়ে পড়ে।
সুতরাং শ্বশুরবাড়ি থেকে পছন্দের বাইক না পেয়ে শ্বশুরবাড়ি থেকে পাওয়া বাইক মাটিতে পুঁতে ফেলার সাজানো একটি নাটকের ভিডিওকে সত্য বলে প্রচার করা হচ্ছে ফেসবুকে, যা বিভ্রান্তিকর।