সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকের একাধিক আইডি, পেজ ও গ্রুপে বিশাল আকৃতির একটি ফুলের ছবি পোস্ট করে বলা হচ্ছে, ছবিটি মরিয়ম ফুলের। এরকম কয়েকটি পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে ও এখানে।
গত ১৩ জুন "রংধনু-Rangdhanu" নামের একটি ফেসবুক পেজে এমন একটি ফুলের ছবি পোস্ট করে লেখা হয়, "মরিয়ম ফুল গাছ।মা শা আল্লাহ। সাত বছর পর একবার ফুল ফোটে ৭ দিন থাকে।" ফেসবুক পোস্টটির স্ক্রিনশট দেখুন--
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ দেখেছে, আলোচ্য পোস্টের দাবিটি সঠিক নয়। ছবিটি মরিয়ম ফুলের নয় বরং ব্রোমলিয়াড প্রজাতির এই ফুলটির নাম পুয়া রেমন্ডি। আন্দিজ পর্বতের পাদদেশ পেরু ও বলিভিয়ায় জন্মায় বলে এই ফুলটি আন্দিজ কুইন নামেও পরিচিত।
ছবিটির রিভার্স ইমেজ সার্চ করে আর্থলি মিশন নামের একটি ওয়েবসাইটে "Worlds largest bromeliad, 'Queen of the Andes;, Blooms once in century!" শিরোনামের একটি প্রতিবেদনে আলোচ্য ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়। ওই প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, অত্যন্ত দুষ্প্রাপ্য এবং বিপন্ন এই ফুলটি কুইন অব আন্দিজ নামে পরিচিত। ব্রোমলিয়াড প্রজাতির প্রায় ৩০ হাজার ধরণের ফুলের মধ্যে এই ফুলটি অন্যতম। ফুলটি মূলত উত্তর বা ল্যাটিন আমেরিকার দেশ পেরু এবং বলিভিয়ার আন্দিজ পাহাড়ের পাদদেশে জন্মায়। স্ক্রিনশট দেখুন--
আরো সার্চ করে ন্যাশনাল জিওগ্রাফির ওয়েবসাইটে ""EXTREME" BLOOM" শিরোনামে আলোচ্য ফুলটির কয়েকটি ছবি খুঁজে পাওয়া যায়। ন্যাশনাল জিওগ্রাফির ওই পোস্টেও বলা হয়, আলোচ্য ছবির ফুলটির আবাস দক্ষিণ আমেরিকার দেশ পেরু ও বলিভিয়ার পাহাড়ি অঞ্চলে। স্ক্রিনশট দেখুন--
এছাড়াও, অনলাইন ফটোস্টকার ওয়েবসাইট এডোব স্টকেও পুয়া রেমন্ডি ফুলের ফুটন্ত অবস্থার ছবি খুঁজে পাওয়া যায়। ছবিটির বর্ণনা অংশে ফুলটির নাম পুয়া রেমন্ডি বলেই জানানো হয়েছে। স্ক্রিনশট দেখুন--
ফটোস্টকার প্ল্যাটফর্ম এলামির ওয়েবসাইটেও একই বর্ণনায় আলোচ্য ফুলটির ছবি খুঁজে পাওয়া যায়।
অন্যদিকে, মরিয়ম ফুলের ব্যাপারে জানতে কি-ওয়ার্ড সার্চ করে ইসরায়েলভিত্তিক ওয়েবসাইট ফ্লাওয়ার্স অব ইসরায়েলে "Anastatica hierochuntica, Rose of Jericho, Resurrection plant, Virgin's Hand, Mary's flower" শিরোনামে একটি নিবন্ধ খুঁজে পাওয়া যায়। ওই নিবন্ধে মরিয়ম ফুলের ছবি এবং ফুলটির বর্ণনা করা হয়েছে। নিবন্ধটি থেকে জানা যায়, ফুলটি মরিয়ম ফুল, আয়েশার পাম গাছ, রোজ অব জেরিকো, রেজারেকশন প্ল্যান্ট , ভার্জিন'স হ্যান্ড, কাফ মারইয়াম, শাজারাত মারইয়াম ইত্যাদি নামে পরিচিত। স্ক্রিনশট দেখুন--
এছাড়াও, মোনাকো ন্যাচার এনসাইক্লোপেডিয়াতে মরিয়ম ফুলের বৈজ্ঞানিক নাম Anastatica hierochuntica শিরোনামে একটি গবেষণাপত্র খুঁজে পাওয়া যায়। ওই গবেষণাপত্রটিতে বলা হয়, মধ্যপ্রাচ্য, সাহারা মরুভূমি, এবং আফ্রিকা, ইরান, মিশর, ফিলিস্তিন, ইসরায়েল, ইরাক, জর্দান ও পাকিস্তানের কিছু এলাকায় এই ফুলটি ফোঁটে। এছাড়াও, প্রকাশিত ওই গবেষণাপত্রে মরিয়ম ফুল গাছের সবুজ অবস্থার ছবি খুঁজে পাওয়া যায়। স্ক্রিনশট দেখুন--
এবারে ফেসবুকে বিভ্রান্তিকর দাবিতে ছড়ানো আলোচ্য ফুলের ছবি ও প্রকৃত মরিয়ম ফুলের ছবির মধ্যে পাশাপাশি তুলনা দেখুন--
অর্থ্যাৎ উপরের তুলনামূলক ছবিটি থেকে স্পষ্ট প্রতীয়মান যে, আলোচ্য ফুলটি মরিয়ম ফুলের ছবি নয়। আলোচ্য ফুলের নাম পুয়া রেমন্ডি যা দক্ষিণ আমেরিকার আন্দিজ পর্বতমালা এবং এর পার্শ্ববর্তী দেশগুলোয় জন্মে। অন্যদিকে, মরিয়ম ফুল মূলত মধ্যপ্রাচ্যে ফোঁটে এবং পুয়া রেমন্ডি থেকে আকারে এবং দর্শনে সম্পূর্ণ ভিন্ন।
সুতরাং ভিন্ন একটি ফুলকে মরিয়ম ফুল বলে প্রচার করা হচ্ছে ফেসবুকে, যা বিভ্রান্তিকর।