সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকের বিভিন্ন পেজ এবং গ্রুপে টেলিভিশন সংবাদের আদলে তৈরি একটি ভিডিও পোস্ট করে বলা হচ্ছে, আগামীকাল ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠেয় দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন তিনমাস পেছানো হয়েছে। এরকম কয়েকটি পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে ও এখানে।
গত ৩ জানুয়ারি 'Top News Today' নামের ফেসবুক পেজ থেকে "৭জানুয়ারীর নির্বাচন কবে হতে যাচ্ছে || প্রধান নির্বাচক একি বললো || Bangladeshi Election News Update" ক্যাপশনে একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়। ভিডিওটির উপরে বড় অক্ষরে লেখা রয়েছে, "৩মাস পিছিয়ে গেলো নির্বাচন?"। ফেসবুক পোস্টটির স্ক্রিনশট দেখুন--
ভিডিওটিতে "৩ মাস পিছিয়ে গেলো নির্বাচন" শিরোনামের সাথে প্রশ্নবোধক চিহ্ন থাকলেও ভিডিওটির থাম্বনেইলে শিরোনামটি এবং ভিডিওটি উপস্থাপনার ক্ষেত্রে সিদ্ধান্তমূলক হিসেবে (ভঙ্গিমায়) উপস্থাপন করা হয়েছে। থাম্বনেইলটির স্ক্রিনশট দেখুন--
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, আলোচ্য পোস্টের দাবিটি সঠিক নয়। নির্বাচন তিনমাস পেছানো হয়নি বরং প্রধান নির্বাচন কমিশনারের একটি বক্তব্যের ভিডিওর বিভিন্ন অংশ কেটে যুক্ত করে বিভ্রান্তিকরভাবে ভিডিওটি প্রচার করা হয়েছে।
কয়েকটি ভিডিওর অংশ যুক্ত করে প্রচারিত আলোচ্য ভিডিওটির শুরুতেই একজন সংবাদ পাঠিকাকে বলতে দেখা যায়, "নির্বাচন তিনমাস পিছিয়ে দেওয়ার এখতিয়ার, জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল"।
কি-ওয়ার্ড সার্চ এর মাধ্যমে ইউটিউবে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল 'বাংলাভিশন' এর চ্যানেলে গত ১ জানুয়ারি "আস্থার সংকটের কারণ চৌদ্দ-আঠারোর নির্বাচন: সিইসি’" শিরোনামে মূল ভিডিওটি সহ একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
প্রতিবেদনে বাংলাভিশনের সংবাদ পাঠিকাকে বলতে শোনা যায়, "নির্বাচন তিনমাস পিছিয়ে দেওয়ার এখতিয়ার কমিশনের নেই বলে জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল"। আলোচ্য ভিডিওটির স্ক্রিনশট (বামে) ও বাংলাভিশনের প্রতিবেদনটির স্ক্রিনশট (ডানে) এর তুলনা দেখুন--
পাশাপাশি, কি-ওয়ার্ড সার্চ এর মাধ্যমে দৈনিক দেশ রূপান্তর এর অনলাইন সংস্করণে গত ২ জানুয়ারি "নির্বাচন পেছানোর এখতিয়ার কমিশনের নেই : সিইসি’'' শিরোনামে একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, "প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সমঝোতার জন্য অনেকেই নির্বাচন অন্তত তিন মাস পেছানোর কথা বলেন। কিন্তু তিন মাস নির্বাচন পেছানোর কোনো ধরনের এখতিয়ার নির্বাচন কমিশনের নেই"। প্রতিবেদনটির স্ক্রিনশট দেখুন--
অর্থাৎ রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সমঝোতার জন্য দলগুলোর বিভিন্ন মুখপাত্র কর্তৃক আসন্ন নির্বাচন অন্তত তিন মাস পেছানোর দাবির পরিপ্রেক্ষিতে এক বক্তব্যে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, "তিন মাস নির্বাচন পেছানোর কোনো ধরনের এখতিয়ার নির্বাচন কমিশনের নেই"। সেই বক্তব্যের ভিডিও এডিটের মাধ্যমে কাটছাট করে নতুন ভিডিও তৈরি করে নির্বাচন তিনমাস পেছানো হয়েছে বলে প্রচার করা হচ্ছে।
এদিকে, নানাভাবে কি-ওয়ার্ড সার্চ করেও নির্বাচন পেছানোর কোনো সংবাদ গণমাধ্যমে খুঁজে পাওয়া যায়নি। আগামীকাল ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠেয় দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন খুবই আলোচিত, এই নির্বাচন পেছানো হলে স্বাভাবিকভাবেই গণমাধ্যমে তা সবচেয়ে গুরুত্বের সাথে প্রচার করা হত।
সুতরাং এডিটেড ভিডিও ব্যবহার করে নির্বাচন তিনমাস পেছানো হয়েছে শিরোনামে ভিত্তিহীন দাবি প্রচার করা হচ্ছে; যা বিভ্রান্তিকর।