সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে বিভিন্ন পেজ এবং গ্রুপে একটি ভাল্লুক ছানা অপর এক হিংস্র প্রাণী থেকে নিজেকে রক্ষার প্রাণপণ চেষ্টার একটি ভিডিও পোস্ট করে বলা হচ্ছে, ভিডিওটি গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসের জন্য মনোনীত হয়েছে। এরকম কয়েকটি পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে ও এখানে।
গত ১ জানুয়ারি 'রৌদ্রছায়া' নামের ফেসবুক পেজ থেকে "নতুন এই ভিডিওটি সম্প্রতি গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে মনোনীত হয়েছে --- ভিডিওগ্রাফারের পেশাদারিত্ব দেখুন।” ক্যাপশনে এমন একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়। ফেসবুক পোস্টটির স্ক্রিনশট দেখুন--
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, আলোচ্য পোস্টের দাবিটি সঠিক নয়। ভিডিওটি গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসের জন্য মনোনীত হয়নি বলে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস কর্তৃপক্ষ বুম বাংলাদেশকে নিশ্চিত করেছে।
প্রাথমিকভাবে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস কর্তৃপক্ষের সাইটে মনোনয়ন পাওয়ার প্রক্রিয়া বা মনোনীত হওয়ার কোনো উদাহরণ পাওয়া যায়নি; তবে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস কর্তৃপক্ষ রেকর্ড এর স্বীকৃতি দেওয়ার উদাহরণ পাওয়া গেছে। আলোচ্য ভিডিওটির মূল সিনেমাটি কোনো ক্ষেত্রে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসের স্বীকৃতি পেয়েছে কিনা সার্চ করে স্বীকৃতির কোনো তথ্যও পাওয়া যায়নি।
পরবর্তীতে ভিডিওটির কি-ফ্রেম নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চ এর মাধ্যমে ভিয়েতনামের সংবাদ ভিত্তিক ওয়েবসাইট 'nguoiduatin.'-এ ২০২০ সালের ৫ নভেম্বর "Clip: Dramatic bear cub being chased by a lion earned more than 37 million views (অনূদিত)'' শিরোনামে আলোচ্য ভিডিওর কিছু স্থিরচিত্র সহ একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, "ভিডিওটি 'দ্য বিয়ার' (১৯৮৮) শিরোনামের একটি ফরাসি চলচ্চিত্রের, যা জিন-জ্যাক অ্যানাউড পরিচালনা করেছেন।"। প্রতিবেদনটির স্ক্রিনশট দেখুন--
প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী কি-ওয়ার্ড সার্চ এর মাধ্যমে ভিডিও শেয়ারিং সাইট ইউটিউবে 'Onipsi' নামের ইউটিউব চ্যানেলে "L'Ours (1988) - the cougar scene" শিরোনামে ২০০৭ সালের ১ নভেম্বর প্রকাশিত আলোচ্য ভিডিওটি খুঁজে পাওয়া যায়। ইউটিউব ভিডিওটির স্ক্রিনশট দেখুন--
পাশাপাশি, ভারতীয় তথ্য-যাচাই প্রতিষ্ঠান 'BOOM'-এ ২০২৩ সালের ২১ মার্চ "১৯৮৮ এর সিনেমা 'দ্য বিয়ার'-এর দৃশ্য গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডের মনোনীত হওয়ার তথ্যটি সত্য নয় (অনূদিত ও সংক্ষেপিত)" শিরোনামে প্রকাশিত একটি তথ্য যাচাই প্রতিবেদন পাওয়া যায়।
পরবর্তীতে ভিডিওটির বিষয়ে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস কর্তৃপক্ষের কাছে ইমেইলের মাধ্যমে জানতে চাইলে তাদের পাবলিক রিলেশন্স এক্সিকিউটিভ Alina Polianskaya "ভিডিওটি গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডেসের সাথে সম্পর্কিত নয়" বলে বুম বাংলাদেশকে জানিয়েছেন।
অর্থাৎ ভিডিওটি ফরাসী সিনেমা 'দ্য বিয়ার' এর একটি অংশ এবং এটি গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস-এ মনোনীত হওয়ার সুযোগ নেই এবং ভিডিওটির মূল সিনেমাটিও গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসের কোনো স্বীকৃতি পায়নি।
উল্লেখ্য, James Oliver Curwood এর 'The Grizzly king' উপন্যাসের উপর ভিত্তি করে নির্মিত ফরাসি সিনেমাটির মূল নাম L’Ours (১৯৮৮)। সিনেমার ডাটাবেজ বিষয়ক সাইট 'আইএমডিবি' অনুযায়ী আলোচ্য ভিডিওটি নয় তবে ভিডিওটির মূল সিনেমাটি একাডেমি অ্যাওয়ার্ড, BAFTA অ্যাওয়ার্ড এবং আমেরিকান সোসাইটি অব সিনেমাটোগ্রাফার অ্যাওয়ার্ড সহ বেশকিছু অ্যাওয়ার্ড পেয়েছে। তবে কোথাও গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসের সাথে সম্পৃক্ততার বিষয় পাওয়া যায়নি।
সুতরাং সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে 'দ্য বিয়ার' সিনেমার দৃশ্য গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে মনোনীত হয়েছে বলে প্রচার করা হচ্ছে; যা বিভ্রান্তিকর।