সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকের একাধিক আইডি, পেজ ও গ্রুপে বাজপাখি এবং ম্যাপের ছবির কোলাজ পোস্ট করে বলা হচ্ছে, একটি বাজপাখির শরীরে ট্র্যাকিং যন্ত্র বসিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে ফিনল্যান্ড পর্যন্ত পাখিটির যাত্রাপথ পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে। ম্যাপটিতে দেখানো চিহ্নগুলো পাখিটির যাত্রাপথের। এরকম কয়েকটি পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে ও এখানে।
গত ৬ সেপ্টেম্বর "ATN" নামে একটি ফেসবুক পেজে একটি পোস্ট করে বলা হয়, "একটা বাজপাখি সাউথ আফ্রিকা থেকে ফিনল্যান্ডে উড়ে যাওয়ার সময় গবেষকরা তার শরীরে কিছু ছোট যন্ত্র লাগিয়ে দেন যাতে তার যাত্রাপথ লক্ষ্য করা যায়। আর পাশের ছবিতে স্যাটেলাইটের মাধ্যমে দেখা যাচ্ছে তার সেই যাত্রাপথের মানচিত্র। পাখিটি ৪২ দিনে ১৫,০০০ কিলোমিটার পথ উড়ে পাড়ি দিয়েছে। গড়ে প্রতিদিন ৩৫৭ কিলোমিটার উড়েছে প্রায় সমান্তরালভাবে। স্যাটেলাইটেী ম্যাপে তার যাত্রাপথ ভালোভাবে লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, বড় জলাশয় বা সমুদ্র সামনে আসলে সে সেখান থেকে পথ পরিবর্তন করেছে যেন বিশ্রাম নিতে চাইলে কাছাকাছি স্থলভুমি পায়। আবার, মিশর-সুদানের মরুভূমিকেও পাশ কাটিয়ে গিয়েছে যেন তৃষ্ণা পেলে পানির অভাবে না পরতে হয়। উভয় ক্ষেত্রেই সে সোজাসুজি যেতে পারতো। কিন্তু তা সে করেনি।..." ফেসবুকে পোস্টটির স্ক্রিনশট দেখুন--
অর্থাৎ পোস্টে দাবি করা হচ্ছে, একটি বাজপাখির শরীরে কিছু ট্র্যাকিং যন্ত্র বসিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে ফিনল্যান্ড পর্যন্ত পাখিটির যাত্রাপথ পর্যবেক্ষণ করা হয়। পোস্টে যুক্ত ম্যাপের ছবিকে বাজপাখিটির দীর্ঘ পথ পাড়ি দেয়ার পর্যবেক্ষণের চিহ্ন বলেও দাবি করা হচ্ছে।
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, আলোচ্য পোস্টের দাবিটি সঠিক নয়। আফ্রিকা মহাদেশের ভৌগোলিক সোমালি প্লেটের একটি টেকটোনিক ফল্ট লাইনের ম্যাপকে বাজপাখির দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে ফিনল্যান্ড যাত্রাপথের পর্যবেক্ষণের ম্যাপ বলে দাবি করা হচ্ছে। এছাড়া, বাজপাখির মধ্যে ট্র্যাকিং যন্ত্র বসিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে ফিনল্যান্ড পর্যন্ত এর যাত্রাপথ পর্যবেক্ষণের কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।
আলোচ্য পোস্টের সাথে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করে দক্ষিণ আফ্রিকাভিত্তিক গণমাধ্যম এসএপিপলের (SA People News) ওয়েবসাইটে "#DurbanTremor Caused by Formation of a New African Continent?" শিরোনামে ২০১৬ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে আলোচ্য পোস্টের ম্যাপের ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়। ওই প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, দক্ষিণ আফ্রিকার শহর ডারবানে ঘটা একটি ভূমিকম্পে ডারবানের ভূখণ্ডের নিচ দিয়ে পূর্ব আফ্রিকা থেকে শুরু হয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা হয়ে একটি ফল্ট লাইন তৈরি হয়েছে। আলোচ্য ম্যাপটি সেই ফল্টলাইনেরই একটি দৃশ্যায়ন। এছাড়াও প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, সোমালি প্লেট নামে ওই টেকটোনিক ফল্টলাইনটি ক্রমে আফ্রিকার মূল ভূখণ্ড থেকে সরে যাচ্ছে, যার ফলে কোনো এক সময় একটি আলাদা মহাদেশ তৈরি হতে পারে। গণমাধ্যমটির প্রতিবেদনে যুক্ত ম্যাপটির নিচে লেখা হয়, কাকতালীয়ভাবে এই ফল্টলাইনের ম্যাপকে দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে ফিনল্যান্ড পর্যন্ত পাখির গতিপথ পর্যবেক্ষণের বলে ফেসবুকে দাবি করা হচ্ছে। স্ক্রিনশট দেখুন--
এদিকে, বিভিন্ন কি-ওয়ার্ড দিয়ে বিভিন্ন সার্চ ইঞ্জিনে সার্চ করে বাজপাখিতে ট্র্যাকিং যন্ত্র বসিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে ফিনল্যান্ড পর্যন্ত এর যাত্রাপথ পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে এমন কোনো তথ্য বা খবর কোথাও খুঁজে পাওয়া যায়নি।
তবে একইরকম দাবি গত মার্চ মাসে আফ্রিকায় সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে আফ্রিকাভিত্তিক ফ্যাক্ট চেকিং অরগানাইজেশন ম্যান্ডি নিউজ "FACT CHECKFact Check: No, A Female Falcon Did Not Fly Nearly 10,000 Km In 42 Days From South Africa To Finland" শিরোনামে একটি ফ্যাক্ট চেকিং প্রতিবেদন প্রকাশ করে। ওই প্রতিবেদনে বাজপাখির দেহে ট্র্যাকিং যন্ত্র বসিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে ফিনল্যান্ডে পাখিটির যাত্রাপথ গবেষকদের পর্যবেক্ষণ করার দাবটি সঠিক নয় বলে চিহ্নিত করা হয়। স্ক্রিনশট দেখুন--
অর্থাৎ পোস্টে দেখানো ম্যাপটি কোনো বাজপাখির উড়ে যাওয়ার যাত্রাপথ পর্যবেক্ষণের নয় বরং এটি আফ্রিকা মহাদেশের ভৌগোলিক সোমালি প্লেটের একটি টেকটোনিক ফল্ট লাইনের ম্যাপ।
সুতরাং সম্পূর্ণ ভিন্ন উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত একটি ভৌগোলিক ম্যাপ পোস্ট করে তা দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে ফিনল্যান্ড পর্যন্ত বাজপাখির যাত্রাপথ পর্যবেক্ষণের বলে দাবি করা হচ্ছে ফেসবুকে, যা বিভ্রান্তিকর।