সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকের একাধিক গ্রুপ, আইডি ও পেজ থেকে একটি পোস্ট করে দাবি করা হচ্ছে, 'সচিবালয়ে ৪০০ জন হিন্দু ‘সচিব’ কর্মরত আছেন। এছাড়া মাদ্রাসার ‘উপসচিব’ও একজন হিন্দু কর্মকর্তা। এরকম কয়েকটি পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে।
গত ৯ ফেব্রুয়ারি 'ডিগ্রি স্টুডেন্ট হেল্প লাইন এন্ড সাজেশন গ্রুপ' নামের একটি ফেসবুক গ্রুপে 'Md Shanowar Hossain' নামের একটি আইডি থেকে পোস্ট করে লেখা হয়, "সচিবালয়ে মুসলিম নেই বললেই চলে🙂 ৪০০ জন হিন্দু সচিব, মাদ্রাসার উপসচিব ও হিন্দু। বইয়ে সমকামিতার গল্প ছাড়া কি বা আসা করা যায়🙂।" নিচে পোস্টটির স্ক্রিনশট দেখুন--
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, দাবিটি সঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে, বর্তমানে সরকারের সচিব/সমমর্যাদাসম্পন্ন ও তদূর্ধ্ব পদমর্যাদার ৮৭ জন কর্মকর্তা রয়েছেন। তন্মধ্যে ৪ জন হিন্দু এবং ১ জন বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী, বাকী সবাই মুসলিম। এছাড়া, মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরে উপ-সচিব পদমর্যাদার কেউ দায়িত্ব পালন করছেন না আর কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগে উপ-সচিব পদমর্যাদার ১১ জন কর্মকর্তা দায়িত্বপালন করছেন, তবে তাদের সবাই মুসলিম।
সচিবালায়ে সচিবদের তালিকায় যারা আছেন:
কি-ওয়ার্ড সার্চ করে বাংলাদেশ সরকারের ওয়েবসাইট বাংলাদেশ জাতীয় তথ্য বাতায়নের মন্ত্রীপরিষদ বিভাগের সেকশনে গত ১৩ ফেব্রুয়ারি সর্বশেষ হালনাগাদকৃত সরকারের সচিব/সমমর্যাদাসম্পন্ন ও তদূর্ধ্ব পদমর্যাদার কর্মকর্তাবৃন্দের একটি তালিকা খুঁজে পাওয়া যায়। স্ক্রিনশট দেখুন--
পূর্ণাঙ্গ তালিকাটি যাচাই করে ৮৭ জন সচিব/সমমর্যাদাসম্পন্ন ও তদূর্ধ্ব পদমর্যাদার কর্মকর্তার মধ্যে নামের ধরণ বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ৮২ জন ইসলাম ধর্মাবলম্বী, ৪ জন হিন্দু ধর্মাবলম্বী এবং বাকি একজন বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী।
হিন্দু ও বৌদ্ধ ধর্মালম্বী সচিবদের তালিকায় যারা:
হিন্দু ধর্মাবলম্বী কর্মকর্তাদের মধ্যে রয়েছেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব জনাব তপন কান্তি ঘোষ, পরিকল্পনা বিভাগের সিনিয়র সচিব জনাব সত্যজিত কর্মকার, বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনের চেয়ারপারসন জনাব প্রদীপ রঞ্জন চক্রবর্তী এবং জাতীয় পরিকল্পনা ও উন্নয়ন একাডেমির মহাপরিচালক (সচিব) জনাব সুকেশ কুমার সরকার। তালিকায় থাকা একমাত্র বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ের সচিব সম্পদ বড়ুয়া।
মাদ্রাসা সংশ্লিষ্ট দুটি বিভাগে যারা আছেন:
কি-ওয়ার্ড সার্চ করে মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তর এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগ নামের দুটি ওয়েবসাইট খুঁজে পাওয়া যায়। তন্মধ্যে মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরে উপ-সচিব পদমর্যাদার কোনো কর্মকর্তা পদায়িত নেই। স্ক্রিনশট দেখুন--
আর কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের ওয়েবসাইটে দেওয়া কর্মকর্তাবৃন্দের তালিকায় উপ-সচিব পদে মোট ১১ জন ব্যক্তি নিয়োজিত আছেন এবং তাদের কেউই হিন্দু ধর্মাবলম্বী নন, সবাই মুসলিম। তালিকায় উপসচিব পদমর্যাদার কয়েকজনের প্রোফাইলের স্ক্রিনশট দেখুন--
অর্থাৎ সচিবালয়ে ৪০০ জন হিন্দু ধর্মাবলম্বী সচিব এবং মাদ্রাসার উপ-সচিব হিন্দু ধর্মাবলম্বী হওয়ার দাবিটি সঠিক নয়।
সুতরাং সচিবালয়ে হিন্দু ধর্মাবলম্বী সচিবের সংখ্যা নিয়ে এবং মাদ্রাসার উপ-সচিব হিন্দু ধর্মাবলম্বী বলে বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচার করা হচ্ছে ফেসবুকে।