সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকের একাধিক আইডি, পেজ ও গ্রুপে পোস্ট করে বলা হচ্ছে, সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাজধানী আবুধাবিতে দেশটির প্রথম মন্দির নির্মিত হয়েছে। এরকম কয়েকটি ফেসবুক পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে ও এখানে।
গত ২ ফেব্রুয়ারি '🙏💞🪷জয় শ্রী রাম🪷💞🙏' নামে একটি ফেসবুক গ্রুপে '𝕪𝕒𝕛𝕟𝕒' নামের একটি ফেসবুক একাউন্ট থেকে একটি কোলাজ ছবি পোস্ট করে লেখা হয়, "আবু ধাবিতে তৈরি হয়েছে প্রথম হিন্দু মন্দির। সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাজধানীতে মন্দিরটির ভিত্তিপ্রস্তর উন্মোচন করেছিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এবার সেই মন্দিরের উদ্বোধনও করবেন তিনিই। ২০২৪ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি মোদির হাতেই উদ্বোধন হবে মন্দিরটির। মন্দির কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, প্রধানমন্ত্রী আবুধাবী যাওয়ার আমন্ত্রণ গ্রহণ করেছেন। ২০২০ সালে শুরু হয় মন্দির নির্মাণের কাজ। মোট ৫৫ হাজার বর্গমিটার জমিতে তৈরি হয়েছে মন্দিরটি। এটিই সংযুক্ত আরব আমিরাতে নির্মিত প্রথম হিন্দু মন্দির। ১৮ ফেব্রুয়ারি থেকে মন্দিরটি সর্বসাধারণের জন্য খুলে দেওয়া হবে।" ফেসবুক পোস্টটির স্ক্রিনশট দেখুন--
এছাড়াও ভিন্ন ফেসবুক পোস্টে বলা হচ্ছে, সংযুক্ত আরব আমিরাতের আবুধাবিতে নির্মিত BAPS শ্রী স্বামীনারায়ণ মন্দিরটিই দেশটির প্রথম মন্দির। স্ক্রিনশট দেখুন--
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, দাবিটি সঠিক নয়। সম্প্রতি সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাজধানী আবুধাবিতে হিন্দুদের জন্য মন্দির তৈরি করা হলেও এটিই দেশটির প্রথম হিন্দু মন্দির নয়।
সংযুক্ত আরব আমিরাতে নির্মিত প্রথম মন্দিরের ব্যাপারে জানতে কি-ওয়ার্ড সার্চ করে 'krishnatempledubai' নামে একটি ওয়েবসাইট খুঁজে পাওয়া যায়। ওয়েবসাইটটিতে পাওয়া তথ্য থেকে জানা যায়, থাট্টাই ভাটিয়া নামে একদল হিন্দু ব্যবসায়ী ১৮০০ সালের শুরুর দিকে দুবাই পৌঁছেন। তারা ছিলেন মূলত মুক্তা, কাপড় এবং খাদ্য ব্যবসায়ী। ধর্মীয় আচার পালনের জন্য তাদের কোনো নির্দিষ্ট স্থান না থাকায় জ্যাঠানন্দ লালচাঁদ রায়পাঁচোলিয়া এবং চান্দুমল ওহাবীর উদ্যোগে ১৯০০ সালের শুরুর দিকে 'শ্রীনাথজি হাভেলি' নামে একটি মন্দিরের গোড়াপত্তন করা হয়। পরবর্তীতে দুবাইয়ের শেখ রাশিদ বিন মাকতুম মন্দির তৈরির জন্য ওই ভূমিটি দান করলে শ্রীনাথজি হাভেলি নামের ওই মন্দিরটির সংস্কার করা হয়। শ্রী কৃষ্ণ মন্দির হিসেবে পরিচিত ওই মন্দিরটিই আরব আমিরাতের প্রথম মন্দির বলে ওয়েবসাইটটিতে দাবি করা হয়েছে। স্ক্রিনশট দেখুন--
একইভাবে আরো সার্চ করে মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক গণমাধ্যম গালফ নিউজের ওয়েবসাইটে ২০২০ সালের ৩০ নভেম্বর "UAE National Day 2020: Seeds of religious tolerance sown in UAE even before the union was formed" শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। ওই প্রতিবেদনে শ্রীনাথজী হাভেলির চেয়ারম্যান ললিত কে কারানির বরাতে বলা হয়, ১৯৩৫ সালে শ্রীনাথজী হাভেলি নামে ওই কৃষ্ণমন্দিরটি সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই শহরে নির্মিত হয়েছিল। এমনকি স্থানীয়রা মনে করেন, মন্দিরটি ১৯০২ সাল থেকেই প্রতিষ্ঠিত আছে। স্ক্রিনশট দেখুন--
এছাড়াও আরব আমিরাতভিত্তিক গণমাধ্যম দা আমিরাতি টাইমসের ওয়েবসাইটে গত ১৫ ফেব্রুয়ারি "The first Hindu temple in the UAE, opened 1958 at Bur Dubai" শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনেও ওই মন্দিরটির ব্যাপারে বলা হয়েছে। এতে বলা হয়, কৃষ্ণমন্দির এবং গুরুদুয়ারা সম্বলিত ওই মন্দিরটি ১৯৫৮ সালে দুবাইয়ের শেখ রাশিদ বিন সাঈদ আল মাকতুমের সহায়তায় পুনরায় সংস্কার করা হয়। স্ক্রিনশট দেখুন--
একই সার্চে ভারতীয় গণমাধ্যম দা ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসে ২০২২ সালের ৫ অক্টোবর "Dubai Hindu temple inaugurated, open for people of all faiths from October 5" শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে আরব আমিরাতে প্রতিষ্ঠিত হওয়া আরেকটি মন্দির সম্পর্কে জানা যায়। ওই মন্দিরটি ২০২২ সালে অর্থাৎ বিএপিএস হিন্দুমন্দিরের আগে প্রতিষ্ঠিত হয়। স্ক্রিনশট দেখুন--
এছাড়াও, আরব আমিরাতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের জন্য প্রতিষ্ঠিত প্রথম মন্দির হিসেবে ১৯৫৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়া একটি মন্দিরের ব্যাপারে বলা হয়েছে। উপরে প্রাপ্ত তথ্য থেকেও জানা যায়, ১৯৫৮ সালেই শ্রীনাথজি মন্দির প্রতিষ্ঠিত হয়। স্ক্রিনশট দেখুন--
এছাড়া সার্চ করে বিএপিএস হিন্দুমন্দির এবং বিএপিএস স্বামীনারায়ণ সংস্থার ওয়েবসাইটেও বিএপিএস মন্দিরটি আরব আমিরাতের প্রথম মন্দির হওয়ার কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।
অর্থাৎ বিএপিএস মন্দির আরব আমিরাতের হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের জন্য নির্মিত প্রথম মন্দির নয়। উক্ত মন্দিরটি নির্মিত হওয়ার অনেক আগে থেকেই দেশটিতে একাধিক মন্দির নির্মিত হয়েছে।
সুতরাং আরব আমিরাতে নবনির্মিত বিএপিএস মন্দিরকে দেশটির প্রথম মন্দির বলে যে তথ্য ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে, তা বিভ্রান্তিকর।