সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের বিভিন্ন আইডি থেকে কোটা আন্দোলনে নিহত ফারহান ফাইয়াজের ছবি পোস্ট করে দৈনিক কালবেলা পত্রিকার সূত্র দিয়ে বলা হচ্ছে, ঢাকা রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজের শিক্ষার্থী ফারহান ফাইয়াজকে কোটা আন্দোলনে নিয়ে গিয়ে তাকে কৌশলে হত্যা করে ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রশিবিরের সাহিত্য সম্পাদক আবির হোসাইন। এরকম দুটি পোস্ট দেখুন এখানে ও এখানে।
গত ১৮ জুলাই 'Yasmin Sultana Pollen' নামের ফেসবুক আইডি থেকে পোস্ট করে বলা হয়, "রেসিডেন্সিয়াল কলেজের মেধাবী ছাত্র ফারহান ফাইয়াজকে টিউশনি পড়াতো ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রশিবিরের সাহিত্য সম্পাদক আবির হোসাইন। ফারহানের পরিবার জানতো না তার শিক্ষক সরাসরি শিবিরের রাজনীতির সাথে জড়িত। আজ সকালে ফারহানকে কল দিয়ে ঘুরতে বের হবে বলে নিয়ে যায় বাসা থেকে। তারপর কৌশলে ফারহানকে হত্যা করে। সুত্র: কালবেলা নিউজ। শিবিরের এরকম নোংরা রাজনীতির জন্য আর কত মায়ের বুক খালি হবে। এদেরকে ছাড় দেয়া হবেনা। বি:দ্র: ফারহান আওয়ামী পরিবারের লোক।” নিচে পোস্টটির স্ক্রিনশট দেখুন--
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, আলোচ্য দাবিটি সঠিক নয়। ঢাকা রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজের শিক্ষার্থী ফারহান ফাইয়াজ কোটা আন্দোলনে পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষের সময় নিহত হন। তাছাড়া, ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রশিবিরের সাহিত্য সম্পাদক আবির হোসাইন ফাইয়াজকে কোটা আন্দোলনে নিয়ে গিয়ে কৌশলে হত্যা করেছেন- কালবেলা এমন কোনো প্রতিবেদন করেনি বলে পত্রিকাটির পক্ষ থেকে বুম বাংলাদেশকে নিশ্চিত করা হয়েছে।
আলোচ্য দাবির পক্ষে কি-ওয়ার্ড সার্চ করে দৈনিক কালবেলার ওয়েবসাইটে এমন কোনো প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়নি। তবে, "ধানমন্ডিতে সংঘর্ষে ঢাকা রেসিডেনসিয়ালের শিক্ষার্থীর মৃত্যু" শিরোনামে পত্রিকাটির ওয়েবসাইটে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। যেখানে বলা হয়, "রাজধানীর ধানমন্ডিতে কোটা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশ ও ছাত্রলীগের দফায় দফায় সংঘর্ষে ঢাকা রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজের শিক্ষার্থী মো. ফারহানুল ইসলাম ইসলাম ভূঁইয়া (ফারহান ফায়াজ) নিহত হয়েছেন। তার বয়স ১৮ বছর।" স্ক্রিনশট দেখুন--
আলোচ্য প্রতিবেদনে ছাত্রশিবিরের সাহিত্য সম্পাদক আবির হোসাইন ফাইয়াজকে কোটা আন্দোলনে নিয়ে গিয়ে কৌশলে হত্যা করেছেন বলে কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।
এদিকে, কি-ওয়ার্ড সার্চ করে বিভিন্ন গণমাধ্যমে ফারহান ফাইয়াজের নিহত হওয়ার ব্যাপারে তার মায়ের একটি ফেসবুক পোস্ট নিয়ে প্রতিবেদন পাওয়া যায়। "ছেলে হত্যার বিচার চান ফারহানের মা" শিরোনামে যুগান্তরের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, "সন্তানের মৃত্যুর খবর জানিয়ে ফেসবুকে বৃহস্পতিবার বিকালে এক পোস্টে ফায়াজের মা নাজিয়া খান জানিয়েছেন, তারা আমার শিশুকে হত্যা করেছে। এমনকি তার বয়স ১৮ বছরও ছিল না। আমি ফারহান ফাইয়াজ এর হত্যার বিচার চাই।" স্ক্রিনশট দেখুন--
উক্ত প্রতিবেদনেও আলোচ্য দাবির পক্ষে কোনো অভিযোগ বা তথ্য পাওয়া যায়নি।
এদিকে কালবেলার সূত্র ব্যবহারের বিষয়ে নিশ্চিত হতে বুম বাংলাদেশের পক্ষ হতে সংবাদপত্রটির চিফ রিপোর্টার কবির হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি আলোচ্য দাবিটি গুজব বলে জানান।
এছাড়াও, নানাভাবে কি-ওয়ার্ড সার্চ করে আলোচ্য দাবির পক্ষে অন্যকোনো গণমাধ্যমেও কোনো প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়নি।
অর্থাৎ কোটা আন্দোলনে গিয়ে ফারহান ফাইয়াজ পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষের সময়ে নিহত হন। আর শিবিরের কোনো নেতা তাকে ডেকে নিয়ে কৌশলে হত্যা করেছেন মর্মে কোনো প্রতিবেদন প্রকাশ করেনি কালবেলা পত্রিকা।
সুতরাং আবির হোসাইন নামের এক শিবির নেতা ফারহান ফাইয়াজকে কোটা আন্দোলনে ডেকে নিয়ে কৌশলে তাকে হত্যা করেন- কালবেলা পত্রিকার সূত্রে ফেসবুকে যে প্রচার করা হচ্ছে, তা বিভ্রান্তিকর।