সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ময়নাতদন্তের একটি ছবি পোস্ট করে দাবি করা হচ্ছে, রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদের মৃত্যু গুলিতে নয় বরং মাথায় আঘাতের কারণে হয়েছে। এরকম কয়েকটি পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে ও এখানে।
গত ২২ সেপ্টেম্বর 'Shirin Afroz' নামের আইডি থেকে ছবিটি পোস্ট করে বলা হয়, "গুড নিউজ। আসেন পড়েন। আপনাদের জাতির পিতা আপনাদের নিষ্পাপ নবী আবু সাইদের ময়না তদন্ত রিপোর্ট - সে গুলিতে নয়, মাথায় আঘাতের কারণে মারা গেছে। পুলিশের এবং আবু সাইদের সম্পুর্ণ ঘটনাটা আমরা দেখেছি। এখন প্রশ্নটা হলো, মাথায় কে আঘাত করলো? রাবার বুলেটে কেউ মরেনা। এটা আমি শুরু থেকে বলে এসেছি। এবং আমি নিজে আমার জীবনে বিভিন্ন আন্দোলনে সাতটা রাবার বুলেট খাইছি। আমাকে শেখাইলেন রাবার বুলেটে শিবিরের পিগ আবু সাইদ মরছে।স কার্টেসীঃ শাহাদাত রাসএল।” নিচে পোস্টটির স্ক্রিনশট দেখুন--
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, আলোচ্য পোস্টের দাবিটি সঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদের মৃত্যু পুলিশের ছররা গুলিতেই হয়েছে বলে ময়নাতদন্তের রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে।
কি-ওয়ার্ড সার্চ করে আলোচ্য দাবির পক্ষে কোনো ধরণের প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়নি। এমনকি রংপুর মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের ময়নাতদন্তের রিপোর্টেও ভাইরাল দাবির পক্ষে কোনো প্রমাণ মেলেনি।
এদিকে, কি-ওয়ার্ড সার্চ করে "পুলিশের ছররা গুলিতেই আবু সাঈদের মৃত্যু" শিরোনামে 'প্রথম আলোর' একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। ২৫ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, "রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদের মৃত্যুকে হত্যাকাণ্ড হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সাঈদের মুখ থেকে ঊরু পর্যন্ত ছিল ছররা গুলির চিহ্ন। ছররা গুলি ঢুকে তাঁর শরীরের ভেতরের বিভিন্ন অংশে গর্ত তৈরি করেছিল। এ কারণে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে তাঁর মৃত্যু হয়। তবে তাঁর মাথার বাঁ দিকেও আঘাতের কারণে রক্তজমাট ছিল।" স্ক্রিনশট দেখুন--
পাশাপাশি, একই সার্চে "আবু সাঈদের শরীরে শটগানের গুলির চিহ্ন, রক্তক্ষরণে মৃত্যু" শিরোনামে 'ইত্তেফাকের' একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। যেখানে ময়নাতদন্তের রিপোর্টের একটি ছবিও প্রকাশ করা হয়। যেখানে বলা হয়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-আন্দোলন চলাকালে রংপুরে নিহত শিক্ষার্থী আবু সাঈদের শরীরে মিলেছে শটগানের গুলির চিহ্ন। এতে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে মৃত্যু হয় তার। মৃত্যুর আড়াই মাস পর পাওয়া ময়নাতদন্তের রিপোর্টে এসব তথ্য উঠে এসেছে। স্ক্রিনশট দেখুন--
অর্থাৎ কোটা সংস্কার আন্দোলনে নিহত বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ মাথায় আঘাতের কারণে মারা যাননি; বরং তিনি পুলিশের ছররা গুলিতে মারা গেছেন।
সুতরাং মাথায় আঘাতের কারণে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদের মৃত্যু হয়েছে বলে প্রচার করা হচ্ছে ফেসবুকে, যা বিভ্রান্তিকর।