সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকের বিভিন্ন অ্যাকাউন্ট ও গ্রুপে আযানের একটি ভিডিও পোস্ট করে বলা হচ্ছে; এটি বাংলাদেশে বৃহৎ আকৃতির মাইক দিয়ে আজান দেওয়ার দৃশ্য। একই ভিডিও পোস্ট করে অন্য একটি পোস্টে দাবি করা হয়, বাংলাদেশ বেতারের মাইক যা এশিয়ার সর্ববৃহৎ মাইক, সেটি দিয়ে আযান দেওয়ার দৃশ্য। এরকম কয়েকটি পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে ও এখানে।
গত ২ এপ্রিল 'Md Aiyub Islam Rasel' নামের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে ভিডিওটি পোস্ট করা হয়। পোস্টে বলা হয়, "পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ধনী আযানের ধ্বনি বাংলাদেশ সেই চিরচেনা বেতারের আজানের সুর যতই শুনি ততই ভালো লাগে"। ফেসবুক পোস্টটির স্ক্রিনশট দেখুন--
অর্থাৎ বলা হচ্ছে এটি একটি বিশাল আকৃতির মাইক যা দিয়ে বাংলাদেশ বেতারের আযান দেয়া হত এবং এটিকে এশিয়ার সর্ববৃহৎ মাইক বলা হচ্ছে। ভিডিওতে ছবিটি স্থিরভাবে ব্যবহার করে আবহে আযান প্রচার করা হয়।
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, দাবিগুলো সঠিক নয়। এটি ইন্দোনেশিয়ার একটি কালচারাল সেন্টারে সংরক্ষিত করে রাখা একটি ট্রাম্পেটের (এক প্রকার বাদ্যযন্ত্র) ছবি। এছাড়া এটি দিয়ে আযান দেওয়া হয়না।
ভিডিও থেকে স্থিরচিত্র নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চ এর মাধ্যমে ভ্রমণ বিষয়ক সাইট 'ট্রাভেল ও পিডিয়া'-এ "3,000 km adventure exploring mainland Sulawesi (অনূদিত)'' শিরোনামে প্রকাশিত আলোচ্য বস্তুটির ভিন্ন কোণ থেকে ধারণ করা ছবি সহ একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। এতে উল্লেখ করা হয়, ছবিটি বিশ্বের সবচেয়ে বড় ট্রাম্পেট বা ভেঁপু/শিঙ্গা'র (এক প্রকার বাদ্যযন্ত্র)। এটি সুলাওয়েসি দ্বীপের (ইন্দোনেশিয়া) 'প্যা ডিওর' নামের সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের মধ্যকার একটি আলাদা ধরণের একটি বাদ্যযন্ত্র [অনূদিত ও সংক্ষেপিত]। প্রতিবেদনটির স্ক্রিনশট দেখুন--
প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী সার্চ করে 'প্যা ডিওর' এর গুগল ম্যাপ নির্দেশনা থেকে এর সত্যতা পাওয়া যায়। জায়গাটির গুগল ম্যাপ পয়েন্টে দর্শনার্থীদের আপলোড করা বেশকিছু ছবিও পাওয়া যায় যেখানে দেখা যায় যে আলোচ্য ট্রাম্পেটি ইন্দোনেশিয়ার উওর সুলাওয়েসি এর 'প্যা ডিওর কালচারাল সেন্টার' এ অবস্থিত। প্যা ডিওর এর নিজস্ব সাইটেও ট্রাম্পেটটির ছবি ও এ বিষয়ে তথ্য পাওয়া গেছে। গুগল ম্যাপের ছবিগুলো দেখুন এখানে। এছাড়াও জায়গাটির ৩৬০ ডিগ্রি ভিউ দেখুন--
পরবর্তীতে 'গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস' কর্তৃপক্ষের সাইটে ইন্দোনেশিয়ার এই ট্রাম্পেটটির রেকর্ডের বিষয়ে সার্চ করে এটিকে সবচেয়ে বড় ট্রাম্পেট (বাজানো যায় এমন) হিসেবেও দেখতে পাওয়া যায়। ২০০৯ সালে ইন্দোনেশিয়ার এই ট্রাম্পেটটিকে পৃথিবীর বৃহত্তম ট্রাম্পেট হিসেবে স্বীকৃতি দেয় গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস। ট্রাম্পেটটি সহ আরো কয়েকটির গিনেস রেকর্ড এর তথ্য সম্বলিত ছবি দেখুন এখানে। গিনেস রেকর্ডের স্ক্রিনশট দেখুন--
অর্থাৎ ছবিটি বাংলাদেশের কোনো মাইকের নয় বরং ইন্দোনেশিয়ার একটি কালচারাল সেন্টারে প্রদর্শনীর জন্য রাখা একটি বিশালাকার বাদ্যযন্ত্রের। এছাড়াও প্রদর্শনীর জন্য রাখা হলেও বিশালাকার বাদ্যযন্ত্রটি সচল তথা এটি দিয়ে বাদ্য বাজানোও যায়। এটি এশিয়ার সবচেয়ে বড় মাইক নয় বরং 'গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস' অনুযায়ী এটি বিশ্বের সবচেয়ে বড় ট্রাম্পেট।
এদিকে, নানাভাবে কি-ওয়ার্ড সার্চ করে গ্রহণযোগ্য কোনো মাধ্যমে এই ট্রাম্পেটটি ব্যবহার করে আযান দেওয়ার কোনো তথ্যও পাওয়া যায়না। তাই বলা যায়, আলোচ্য ফেসবুক পোস্টগুলোতে ইন্দোনেশিয়ার ট্রাম্পেট এর ছবির সাথে আযানের অডিও যুক্ত করে ট্রাম্পেটের (পোস্টকারীদের ভাষায়; মাইক) মাধ্যমে আযানের ভিডিও হিসেবে প্রচার করা হয়েছে। তবে অন্তত এই ট্রাম্পেটটির সাথে বাংলাদেশ বেতারের আযানের কোনো সম্পর্ক খুঁজে পাওয়া যায়নি।
সুতরাং সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে ইন্দোনেশিয়ার ট্রাম্পেট এর ছবির সাথে আবহে আযানের অডিও যুক্ত করে বিভিন্ন অসত্য তথ্য প্রচার করা হচ্ছে; যা বিভ্রান্তিকর।