সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের একাধিক গ্রুপ ও আইডি থেকে দাবি করা হচ্ছে, আমেরিকা এবং ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের (ইইউ) প্রতিনিধিদলের সাথে কয়েক দফা আলোচনার পর শর্তসাপেক্ষে পদত্যাগে রাজি হলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে।
গত ১২ জুলাই ‘তারেক রহমান বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি’ নামের একটি ফেসবুক গ্রুপ থেকে পোস্ট করে বলা হয়, "ব্রেকিং নিউজ। আমেরিকা এবং ইইউ প্রতিনিধিদের সাথে কয়েক দফা আলোচনার পর শর্তসাপেক্ষে পদত্যাগে রাজী অবৈধ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার।- সূত্র বিবিসি বাংলা।" ফেসবুকে পোস্টটির স্কিনশট দেখুন--
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, আলোচ্য পোস্টে করা দাবিটি সঠিক নয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শর্তসাপেক্ষে পদত্যাগে রাজি বিবিসি বাংলার বরাতে প্রচার করা হলেও খবরটি ভিত্তিহীন। এ ধরণের কোনো সংবাদ প্রচারিত হয়নি বলে বিবিসি বাংলার পক্ষ থেকেও নিশ্চিত করা হয়েছে।
কি ওয়ার্ড সার্চ করে জানা যায়, গত ৯ জুলাই ইউরোপীয় ইউনিয়নের ৬ সদস্যের নির্বাচন পর্যবেক্ষক প্রতিনিধি দল ঢাকায় আসেন। তবে, তাদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বৈঠকের কোন তথ্য গণমাধ্যমে খুঁজে পাওয়া যায়নি। অন্যদিকে, গত ১১ জুলাই সন্ধ্যায় যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের বেসামরিক নিরাপত্তা, গণতন্ত্র ও মানবাধিকারবিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়ার নেতৃত্বে ঢাকায় আসেন মার্কিন প্রতিনিধিদল। আজ ১৩ জুলাই সকালে গণভবনে জাতীয় নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হওয়ার গুরুত্ব, মানবাধিকার, শরণার্থী পরিস্থিতিসহ বিভিন্ন বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাঙ্গে আলোচনা করেন তারা। বৈঠক শেষে উজরা জেয়ার টুইটের সূত্র ধরে দৈনিক প্রথম আলোর অনলাইন ভার্সনে "প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক নিয়ে উজরা জেয়ার টুইট" শিরোনামে খবর থেকে জানা যায়, প্রধানমন্ত্রীর সাথে তাদের ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। তবে শর্তসাপেক্ষে প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগে রাজি এমন কোনো তথ্য খবরে পাওয়া যায়নি। প্রথম আলোর খবরের স্ক্রিনশট দেখুন--
এদিকে, একই বৈঠকের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিমের সাংবাদিকদের ব্রিফিং নিয়ে দৈনিক প্রথম আলোর অনলাইন ভার্সনে "বিএনপিই দেশে ভোট কারচুপি করেছিল: প্রধানমন্ত্রী" শিরোনামে খবর প্রকাশিত হয়। এতে বলা হয়, বৈঠকে দেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানে অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, "বিএনপিই দেশে ভোট কারচুপি শুরু করেছিল, যা বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার পরিবর্তন করেছে। নির্বাচনের জন্য স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স চালু করা হয়েছে।" দেখুন--
অর্থ্যাৎ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও মার্কিন প্রতিনিধিদলের মধ্যে বৈঠকের বিষয়ে উভয়পক্ষ থেকে পাওয়া খবর থেকে "শর্তসাপেক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগে রাজি" এমন কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। কি-ওয়ার্ড সার্চ করেও কোনো গণমাধ্যমে এমন কোনো খবরের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি।
এদিকে, বিবিসির বরাতে খবরটি প্রচারিত হওয়ায় বিবিসি বাংলার অনলাইন ভার্সনে গতকাল ১২ জুলাই ও আজ ১৩ জুলাই প্রকাশিত সব খবর চেক করে দেখেছে বুম বাংলাদেশ। কিন্তু "শর্তসাপেক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগে রাজি" এমন কোনো খবর বিবিসি বাংলায় খুঁজে পাওয়া যায়নি।
এ বিষয়ে আরো নিশ্চিত হতে বিবিসি বাংলা বিভাগের সাথে যোগাযোগ করা হলে আলোচ্য দাবিটি বা এ সংক্রান্ত খবর প্রকাশের বিষয়টি সত্য নয় বলে সংবাদমাধ্যমটির পক্ষ থেকে বুম বাংলাদেশকে নিশ্চিত করা হয়।
অর্থাৎ ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও মার্কিন প্রতিনিধি দলের সাথে বৈঠকের পর "শর্তসাপেক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগে রাজি" খবরটি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন।
সুতরাং বিবিসি বাংলার বরাতে শর্তসাপেক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগে রাজি বলে যে খবর ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে, তা বিভ্রান্তিকর।