সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের বিভিন্ন আইডি এবং পেজ থেকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের নামে একটি মন্তব্য পোস্ট করা হচ্ছে। যেখানে দাবি করা হচ্ছে, জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বলেছেন, শেখ হাসিনা জনগনের লাশের বন্যা ও মৃত্যু চাননি সেজন্য তিনি ভারতে চলে যান। এরকম কয়েকটি পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে।
গত ২৬ অক্টোবর 'Barrister Johirul Islam' নামের একটি পেজ থেকে পোস্ট করে বলা হয়, "মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা জনগনের লাশের বন্যা ও মৃত্যু চাননি সে জন্যে তিনি ভারতে চলে যান। সেনাপ্রধান ওয়াকার উজজামান । সেনাপ্রধান ওয়াকার উজজামান, মিডিয়ার সাথে এক সাক্ষাৎকারে বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চাইলে লাশের বন্যা বয়ে যেতো,যাঁদের জন্য দেশের এতো উন্নয়ন করেছেন তাদের মৃত্যু চাননি,তাই তিনি পদত্যাগ না করেই ভারতে চলে যান। ——————————————- প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চাইলে / ডাক দিলেই সারা দেশের আওয়ামী লীগ ৫ তারিখ সকাল থেকেই সারা দেশের রাজপথ দখল করে রাখতে পারত ৷ সারা দেশের ৮০% সাধারন জনগন শেখ হাসিনার পক্ষে রাস্তায় নামত / থাকত ৷। একই বক্তব্য ফটোকার্ডেও উল্লেখ করা রয়েছে।“ নিচে পোস্টটির স্ক্রিনশট দেখুন--
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, আলোচ্য দাবিটি সঠিক নয়। পোস্টে উল্লিখিত এমন কোনো মন্তব্য বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান করেননি। কোনো ধরণের তথ্যসূত্র ছাড়াই ওয়াকার-উজ-জামানের নামে এমন মন্তব্য প্রচার করা হচ্ছে।
কি-ওয়ার্ড সার্চ করে বাংলাদেশের কোনো সংবাদমাধ্যমে ওয়াকার-উজ-জামানের এমন মন্তব্য সংক্রান্ত কোনো সংবাদ খুঁজে পাওয়া যায়নি।
তবে, কি-ওয়ার্ড সার্চ করে “জাতির উদ্দেশ্যে যা বললেন সেনাপ্রধান” শিরোনামে ‘যমুনা টেলিভিশনের’ ইউটিউব চ্যানেলে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশ ছাড়ার পর জাতির উদ্দেশে দেওয়া সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের একটি বক্তব্যের পুরো ভিডিওটি পাওয়া যায়। যেখানে কোথাও সেনাপ্রধানকে শেখ হাসিনার দেশত্যাগ নিয়ে কথিত মন্তব্যটি করতে শোনা যায়নি।
এদিকে, কি-ওয়ার্ড সার্চ করে “Bangladesh army chief strongly backs interim government, eyes elections within 18 months” শিরোনামে ব্রিটিশ সংবাদ সংস্থা ‘রয়টার্সে’ সেনাপ্রধান ওয়াকারের একটি সাক্ষাৎকার খুঁজে পাওয়া যায়। যেখানে তিনি অভ্যুত্থানে সেনাবাহিনীর ভুমিকা, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সর্বোচ্চ সাপোর্টসহ বিভিন্ন বিষয়ে কথা বললেও হাসিনার দেশত্যাগ নিয়ে আলোচ্য মন্তব্য করতে দেখা যায়নি। স্ক্রিনশট দেখুন--
কি-ওয়ার্ড সার্চ করে “নাগরিক টিভির সাথে কথোপকথনে দেশবাসীকে ধৈর্য ধরার আহ্বান জানালেন সেনাপ্রধান” শিরোনামে নাগরিক টিভিতে একটি সাক্ষাৎকার পাওয়া যায়। যেখানে সেনাপ্রধান হাসিনার পালিয়ে যাওয়ার আগমুহুর্ত সম্পর্কে জানতেন না বলে জানান। তিনি বলেন, শেখ হাসিনার পালিয়ে যাওয়ার বিষয়টি আগে থেকে জানা ছিল না। ৫ আগস্ট পরিস্থিতি দেখে তিনি যখন রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করছিলেন, ঠিক তখন তাঁকে জানানো হয় শেখ হাসিনা চলে যাচ্ছেন।
কি-ওয়ার্ড সার্চ করে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) ওয়েবসাইটে খুঁজেও শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশ ছাড়া নিয়ে সেনাপ্রধানের কথিত ভাইরাল মন্তব্যটির সত্যতা পাওয়া যায়নি। শেখ হাসিনার দেশত্যাগ নিয়ে সেনাপ্রধান কোনো মন্তব্য করে থাকলে সেটি মূলধারার সংবাদমাধ্যমে প্রচার হওয়াটাই স্বাভাবিক।
অর্থাৎ শেখ হাসিনার পদ ও দেশত্যাগ নিয়ে সেনাপ্রধানের আলোচ্য মন্তব্য ভিত্তিহীন।
সুতরাং শেখ হাসিনা জনগনের লাশের বন্যা ও মৃত্যু চাননি সেজন্য তিনি ভারতে চলে যান বলে সেনা প্রধানের নামে যে মন্তব্য প্রচার করা হচ্ছে ফেসবুকে, তা বিভ্রান্তিকর।