সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের একাধিক আইডি, পেজ ও গ্রুপ থেকে একটি ফটোকার্ড পোস্ট করে দাবি করা হচ্ছে, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সোমালি জলদস্যুদের ভাড়া করে বাংলাদেশি পণ্যবাহী জাহাজ ও ২৩ নাবিককে জিম্মি করেছে। এরকম কয়েকটি পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে ও এখানে।
১৩ মার্চ 'Bangla News Point' নামের একটি পেজ থেকে একটি ফটোকার্ড পোস্ট করা হয়। ওই ফটোকার্ডটিতে লেখা থাকতে দেখা যায়, "সোমালিয়ার জলদস্যুদের ভাড়া করে বাংলাদেশি পণ্যবাহী জাহাজ ও ২৩ নাবিককে জিম্মি করেছে তারেক। দাবি করেছে ৫ মিলিয়ন মুক্তিপণ।" ফটোকার্ডটিতে "৫০ লাখ ডলার মুক্তিপণ দাবি, চলছে দরকষাকষি" শিরোনামে একটি প্রতিবেদনের স্কিনশর্টও যুক্ত করা হয়েছে। নিচে পোস্টটির স্ক্রিনশট দেখুন--
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, আলোচ্য দাবিটি ভিত্তিহীন। মূলত সোমালিয়ার জলদস্যুরা ভারত মহাসাগরে বাংলাদেশের পতাকাবাহী জাহাজ এমভি আব্দুল্লাহকে ছিনতাই করেছে বলে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে বলা হয়েছে। এসব সংবাদে এ ঘটনায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের জড়িত এমন কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
কি-ওয়ার্ড সার্চ করে "জিম্মি ২৩ নাবিককে মুক্তি দিতে ‘৫০ লাখ ডলার দাবি’ জলদস্যুদের" শিরোনামে সময় টিভির ওয়েবসাইটে একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, ভারত মহাসাগরে জলদস্যুদের কবলে পড়া বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহতে জিম্মি ২৩ নাবিককে মুক্তি দিতে ৫০ লাখ ডলার মুক্তিপণ দাবি করেছে সোমালিয়ার জলদস্যুরা। পণ্যবাহী জাহাজটি কয়লা নিয়ে ভারত মহাসাগর হয়ে মোজাম্বিক থেকে আরব আমিরাতের আল-হামরিয়া বন্দরের দিকে যাচ্ছিল। স্ক্রিনশট দেখুন--
প্রতিবেদনটিতে সোমালিয়ার জলদস্যুদের ছিনতাই এবং মুক্তিপণের বিষয়ে তথ্য থাকলেও সেখানে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের জড়িত থাকার ব্যাপারে কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।
কি-ওয়ার্ড সার্চ করে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরায় "Pirates seize control of cargo ship near Somalia, say owners" শিরোনামে একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। এতে বলা হয়, ১৫ থেকে ২০ জনের একটি সোমালি জলদস্যুদল বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহকে জিম্মি করে। যেই জাহাজে ২৩ জন নাবিক ছিল। জাহাজটি মোজম্বিকের রাজধানী মাপুটো থেকে ৫৫ হাজার টন কয়লা নিয়ে আরব আমিরাতের উদ্দেশ্যে যাচ্ছিল। ভারত মহাসাগরে এই ঘটনা ঘটে। জাহাজটি চট্টগ্রামের কবির গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান এসআর শিপিং লিমিটেডের মালিকানাধীন। প্রতিবেদনটিতে গ্রুপটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মেহেরুল করিম এবং ইউনাইটেড কিংডম মেরিটাইম ট্রেড অপারেশনস (UKMTO) এর বক্তব্য যুক্ত করা হয়। যেখানে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে নিয়ে কোনো তথ্য উল্লেখ নেই। স্ক্রিনশট দেখুন--
এদিকে, ভাইরাল হওয়া ফটোকার্ডটিতে "৫০ লাখ ডলার মুক্তিপণ দাবি, চলছে দরকষাকষি" শিরোনামের একটি প্রতিবেদনের স্ক্রিনশট যুক্ত করা হয়। কি-ওয়ার্ড সার্চ করে আলোচ্য শিরোনামের সঙ্গে বাংলাদেশি সংবাদমাধ্যম প্রতিদিনের বাংলাদেশ পত্রিকার ওয়েবসাইটে পাওয়া সংশ্লিষ্ট একটি প্রতিবেদনের শিরোনামের সঙ্গে মিল খুঁজে পাওয়া যায়। প্রতিবেদনে অন্যান্য গণমাধ্যমে পাওয়া তথ্যের সঙ্গে মিল রয়েছে, তবে এতে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান জড়িত থাকার কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি। প্রতিবেদনটির স্ক্রিনশট দেখুন--
ভাইরাল হওয়া ফটোকার্ডে যুক্ত করা প্রতিবেদনের স্ক্রিনশট (বামে) এবং প্রতিদিনের বাংলাদেশ পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনের স্ক্রিনশট (ডানে) পাশাপাশি তুলনা দেখুন--
এতে স্পষ্ট যে, আলোচ্য ফটোকার্ডে যুক্ত সংবাদের স্ক্রিনশটটি প্রতিদিনের বাংলাদেশ পত্রিকার প্রতিবেদন থেকে নেয়া হয়েছে। এই প্রতিবেদনে জাহাজ ছিনতাইয়ের ঘটনায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান জড়িত কিংবা কোনো রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার কথা উল্লেখ করা হয়নি। তাই উক্ত ফটোকার্ডে এই প্রতিবেদনের স্ক্রিনশট দেয়াও কোনো অর্থ বহন করেনা। বরং এই সংবাদের স্ক্রিনশট যুক্ত করে ফটোকার্ডে তারেক রহমান বাংলাদেশি জাহাজ ছিনতাইয়ে সোমালি জলদস্যু ভাড়া করেছেন বলে দাবি করা বিভ্রান্তিকর।
অর্থাৎ বাংলাদেশি জাহাজ ছিনতাইয়ের ঘটনায় সোমালি জলদস্যুদের তারেক রহমান ভাড়া করার দাবিটি ভিত্তিহীন।
সুতরাং বাংলাদেশি জাহাজ ছিনতাইয়ের ঘটনায় বিএনপি নেতা তারেক রহমানকে জড়িয়ে ভিত্তিহীন তথ্য প্রচার করা হচ্ছে ফেসবুকে, যা বিভ্রান্তিকর।