সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থ্রেডস’এ একাধিক অ্যাকাউন্ট থেকে পোস্ট করে দাবি করা হচ্ছে, সেনেগাল সরকার ফ্রেঞ্চ ভাষার পরিবর্তে আরবিকে অফিশিয়াল ভাষা হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে। এরকম কয়েকটি পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে।
গত ১ মে 'itx_caybee' নামের একটি থ্রেডস একাউন্ট থেকে পোস্ট করে উল্লেখ করা হয়, "BREAKING: Senegal to adopt Arabic as its official language, abandoning French." নিচে পোস্টটির স্ক্রিনশট দেখুন--
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, দাবিটি সঠিক নয়। ফ্রেঞ্চই সেনেগালের অফিশিয়াল ভাষা হিসেবে বিদ্যমান রয়েছে, সম্প্রতি অফিশিয়াল ভাষা পরিবর্তনের কোনো উদ্যোগ বা পদক্ষেপও নেয়নি দেশটির সরকার।
কোনো দেশ যদি তার অফিশিয়াল ভাষা পরিবর্তন করে, তা সেদেশের সরকারি ওয়েবসাইট, সংশ্লিষ্ট দপ্তর ও রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম থেকে তা প্রচার হওয়ার কথা এবং জাতীয় গণমাধ্যমেও সে খবর গুরুত্বের সাথে প্রচার হওয়ার কথা। কারণ অফিশিয়াল ভাষা একটি জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কিন্তু কি-ওয়ার্ড সার্চ করে সেনেগালের সরকারি ওয়েবসাইটে এ ধরণের কোনো ঘোষণা বা তথ্য পাওয়া যায়নি। এমনকি দেশটির রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা সেনেগাল নিউজ এজেন্সিতে এ সম্পর্কে কোনো প্রতিবেদনও খুঁজে পাওয়া যায়নি। পাশাপাশি দেশটির স্থানীয় জাতীয় গণমাধ্যমেও এ সংক্রান্ত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
তবে সংশ্লিষ্ট কি-ওয়ার্ড সার্চ করে ফরাসি ভিত্তিক আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ও ফ্যাক্ট চেক সংস্থা 'The France 24 Observers' এ "No, Senegal hasn’t made Arabic its official language" শিরোনামের এক প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। ইংরেজি, ফরাসি, আরবি ও ফার্সি--এই চারটি ভাষায় সংবাদ প্রকাশ করে থাকে প্যারিস ভিত্তিক এই সংস্থাটি। এই প্রতিবেদনে বলা হয়, সেনেগালের রাষ্ট্রপতির কার্যালয় থেকে FRANCE 24 পর্যবেক্ষক দলকে জানিয়েছে, দেশটি তার রাষ্ট্রীয় ভাষা পরিবর্তন করেনি। স্ক্রিনশট দেখুন--
এদিকে, কি-ওয়ার্ড সার্চ করে পশ্চিম আফ্রিকার দেশ নাইজেরিয়া ও ঘানার ফ্যাক্ট চেক সংস্থা 'Dubawa' এর ওয়েবসাইটে "False! Senegal did not change its official language from French to Arabic" শিরোনামে একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। এতে বলা হয়, আফ্রিকার দেশগুলো উপনিবেশিকতা থেকে ১৯৫০ এবং ৬০ এর দশকে স্বাধীন হওয়ার পরও উপনিবেশকারীদের কাছ থেকে রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক এবং অর্থনৈতিক নীতি গ্রহণ করেছিল। তন্মধ্যে ঔপনিবেশিকদের ভাষা রাষ্ট্রীয় ভাষা হিসেবে গ্রহণ ছিল উল্লেখযোগ্য। স্বাধীনতা সুরক্ষিত করার অঙ্গীকার নিয়ে সম্প্রতি বাসিরু দিওমায়ে ফায়ে সেনেগালের নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর, দেশটির এক সময়ের ঔপনিবেশিক দেশ ফ্রান্সের প্রতি তিনি এখনো তার অবস্থান স্পষ্ট করেননি। তাই সেনেগালের নতুন প্রেসিডেন্টকে ফ্রান্স সংক্রান্ত বিষয়ে জড়িয়ে ভুল তথ্য সামাজিক মাধ্যমে প্রায়ই প্রচার করা হচ্ছে।
এই প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, বিশ্বাসযোগ্য সংবাদ সংস্থা নয় বরং একটি ব্লগ সাইট থেকে তথ্য নিয়ে দুটি গণমাধ্যম আরবিকে সেনেগালের অফিশিয়াল ভাষা হিসেবে ঘোষণা দেয়ার খবর প্রকাশ করে। পরে মিডল ইস্ট মনিটরও একই খবর প্রকাশ করে জানায়, গত ২৮ এপ্রিল (রোববার) মন্ত্রিসভার বৈঠকের পর এই ঘোষণা আসে। যদিও মিডল ইস্ট মনিটর প্রতিবেদনটি পরবর্তীতে সরিয়ে ফেলেছে (আর্কাইভ ভার্সন দেখুন এখানে)। তবে দেশটির সরকারি ওয়েবসাইট ও গণমাধ্যমে ২৮ এপ্রিল মন্ত্রিসভার কোনো বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার তথ্য পাওয়া যায়নি এবং অফিশিয়াল ভাষা পরিবর্তন সংক্রান্ত কোনো খবরও পাওয়া যায়নি। স্ক্রিনশট দেখুন--
এদিকে কি-ওয়ার্ড সার্চ করে "Senegal's official language is French, not Arabic" শিরোনামে 'রয়টার্স' এর একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। প্রতিবেদনে বলা হয়, সামাজিক মাধ্যমে সেনেগাল সরকার ফরাসি ভাষার পরিবর্তে আরবি ভাষাকে তাদের অফিশিয়াল ভাষা হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে, তা সঠিক নয়।
এছাড়া সেনেগালের সরকার দেশটির অফিশিয়াল ভাষা পরিবর্তন করলে স্বাভাবিকভাবেই তাদের সরকারি ওয়েবসাইটের ভাষা পরিবর্তিত হত। কিন্তু কি-ওয়ার্ড সার্চ করে দেশটির সরকারি ওয়েবসাইট এ প্রবেশ করে দেখা যায়, ওয়েবসাইটে একমাত্র বিদ্যমান অফিশিয়াল ভাষা ফ্রেঞ্চ ভাষাতেই সব লেখা রয়েছে।
আবার কি-ওয়ার্ড সার্চ করে সেনেগালের নতুন রাষ্ট্রপতি 'Bassirou Diomaye Faye' এর ব্যক্তিগত এক্স একাউন্ট এবং দেশটির প্রেসিডেন্টের অফিশিয়াল এক্স একাউন্ট 'Présidence Sénégal' -এ ফ্রেঞ্চ ভাষাতেই নিয়মিত বিভিন্ন পোস্ট করতে দেখা যায়, আরবি ভাষায় নয়। সেনেগালের অফিশিয়াল ভাষা ফ্রেঞ্চের বদলে আরবি করা হলে, পরিবর্তিত আরবি ভাষাতেই তা পরিচালিত হত, ফরাসি ভাষায় নয়।
অর্থাৎ সেনেগাল সরকার ফরাসির পরিবর্তে আরবি ভাষাকে অফিশিয়াল ভাষা হিসেবে ঘোষণা করেনি।
সুতরাং সেনেগাল ফ্রেঞ্চ ভাষার পরিবর্তে আরবিকে অফিশিয়াল ভাষা হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে যে দাবি প্রচার করা হচ্ছে থ্রেডসে, তা বিভ্রান্তিকর।