সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকের একাধিক আইডি, পেজ ও গ্রুপে একটি অসুস্থ শিশুর ছবি দিয়ে দাবি করা হচ্ছে, শিশুটি গুরুতর অসুস্থ এবং দ্রুতই তার চিকিৎসা করাতে হবে। এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে ও এখানে।
গত ২৬ মে 'বিচিত্র এই বাংলাদেশ 🇧🇩' নামের একটি গ্রুপে 'Jannatul Islam' নামের একটি আইডি থেকে একটি ছবি পোস্ট করে লেখা হয়, 'হৃদয় বান ব্যক্তিরা দয়া করে এগিয়ে আসুন,,,আমার মেয়ের অবস্থা খুব খুব খারাপের দিকে ভাই একটু দয়া করুন প্লিজ আমার মেয়ের চিকিৎসা সম্পন্ন করতে ভাই একটু দয়া করুন প্লিজ ভাই আমি একজন এতিম অসহায় বাবা হয়ে আপনাদের সবার দুটি পায়ে ধরে আমার মেয়ের জীবন বাঁচাতে একটু ভিক্ষা চাইছি ভাই দয়া করুন প্লিজ'। উক্ত পোস্টে শিশুটির নাম, ঠিকানা ও পরিচয় বিস্তারিত কিছুই উল্লেখ করা হয়নি। স্ক্রিনশট দেখুন--
পোস্টে সংযুক্ত ছবিটি দেখুন আলাদাভাবে---
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, ছবিটি সাকিবা নামের এক শিশুর যার অসুস্থতার খবর পাঁচ বছর আগে অর্থাৎ ২০১৭ সাল থেকেই ইন্টারনেটে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে।
রিভার্স ইমেজ সার্চ করে যুক্তরাজ্যভিত্তিক পত্রিকা 'dailymail' এর অনলাইন ভার্সনে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট প্রকাশিত 'Toddler, 2, has a 6.6lb HAND that has left her barely able to stand or walk and shunned by villagers who worry their children will 'catch' the condition' শিরোনামে একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায় যেখানে ছবির শিশুটির ছবি খুঁজে পাওয়া যায়। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, 'হেমানজিওমা' নামক একটি রোগের দরুণ তার স্বাভাবিক বৃদ্ধি ব্যহত হয়েছে। এর ফলে সে স্বাভাবিকভাবে হাঁটতে পারে না, দৌড়াতে গেলে পড়ে যায়। স্ক্রিনশট দেখুন---
আবার, যুক্তরাজ্যভিত্তিক পত্রিকা 'THE SUN' ২০১৭ সালের ১ সেপ্টেম্বর একই শিশুর ছবি সংযুক্ত করে 'HORROR GROWTH Toddler struggles to walk and play because of her one giant arm – that weighs half a STONE' শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে যেখানে বলা হয়, জন্মের সময়ে সাকিবার ডান হাতের নিচে একটি ছো্ট গোটা ছিলো, যেটি পরবর্তীতে অনেকগুণে বৃদ্ধি পেয়ে বর্তমানে তার সমস্ত হাত এবং বুকে ছড়িয়ে পড়ছে। স্ক্রিনশট দেখুন--
এছাড়াও ইন্দোনেশিয়ান অনলাইন পোর্টাল 'TribunPekanbaru'-তেও একই শিশুর ছবি দিয়ে প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
মুলত সাকিবা চাঁপাইনবাবগঞ্জের আব্দুস সাত্তার ও সাবিনা বেগমের সন্তান। সে হেমানজিওমা নামক একটি রোগে আক্রান্ত হওয়ার ফলে তার ডান হাতের আকার বৃদ্ধি পায়। পাঁচ বছর আগেই এই সংবাদটি প্রচারিত হয়েছে।
অর্থ্যাৎ একটি শিশুর অসুস্থতার পাঁচ বছর আগের পুরোনো ছবি ও খবর নতুন করে ফেসবুকে প্রচার করার পাশাপাশি আর্থিক সাহায্য চাওয়া হচ্ছে। বুম বাংলাদেশ বর্তমানে ওই শিশু সাকিবার কি অবস্থা এবং তার আর্থিক সাহায্য প্রয়োজন কিনা তা আলাদাভাবে যাচাই করতে পারেনি।
সুতরাং পাঁচ বছরের পুরোনো সাকিবা নামের এক শিশুর ছবি দিয়ে নাম ঠিকানা ছাড়াই ফেসবুকে প্রচার করে আর্থিক সাহায্যের আবেদন করা হচ্ছে, যা প্রতারণাপূর্ণ।