সম্প্রতি সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকের একাধিক আইডি ও পেজ থেকে একটি ছবি শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে, নারায়ণগঞ্জে বিএনপি নেতাকর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষের সময় টিয়ার গ্যাসের শেল ও শটগানের পাশাপাশি চায়নিজ রাইফেল দিয়েও গুলি ছোড়া পুলিশ কর্মকর্তার নাম রাহুল পাটওয়ারী। এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে।
গত ৩ সেপ্টেম্বর 'Feroz Khan' নামের একটি ফেসবুক আইডি থেকে এমন একটি ছবি শেয়ার করে ক্যাপশনে লেখা হয়, "নারায়ণগঞ্জের খুনি।! রাহুল পাটওয়ারী, সহকারী পুলিশ সুপার , গোয়েন্দা শাখা, নারায়ণগঞ্জ। মুক্তিযোদ্ধা কোটায় চাকরি। এই সব লাইসেন্সধারী সন্ত্রাসীদের ভাইরাল করুন। যাতে ভবিষ্যতে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠিত হলে এদের বিচার আওতায় আনা হয়।" পোস্টের স্ক্রিনশট দেখুন--
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, ভিডিওর ক্যাপশনে করা দাবিটি সঠিক নয়। নারায়ণগঞ্জে বিএনপি-পুলিশ সংঘর্ষে বিএনপি কর্মীদের লক্ষ্য করে গুলি চালানো পুলিশ কর্মকর্তা রাহুল পাটওয়ারী নন। সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী ওই পুলিশ কর্মকর্তার নাম মাহফুজুর রহমান কনক।
সামাজিক মাধ্যমে নারায়ণগঞ্জে বিএনপি-পুলিশ সংঘর্ষে বিএনপি কর্মীদের লক্ষ্য করে গুলি চালানো পুলিশ কর্মকর্তার নাম রাহুল পাটওয়ারী দাবি করে একাধিক পোস্ট ছড়িয়ে পড়লে রাহুল নিজেই গত ৩ সেপ্টেম্বর ব্যক্তিগত ফেসবুক একাউন্টে পোস্ট করে দাবিটি অসত্য বলে জানান। 'Rahul Patwary' নামের ফেসবুক আইডি থেকে লেখা হয়, "গত ১লা সেপ্টেম্বর নারায়ণগঞ্জের একটি ঘটনায় সারাদেশ ব্যাপী বিভিন্ন ব্যাক্তিগত প্রোফাইল এবং বিভিন্ন ফেইসবুক পেইজ, ফেইসবুক গ্রুপ হতে একটি দলের কর্মী, সমর্থক এবং বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ আমার নাম ঠিকানা ব্যবহার করে মিথ্যা প্রচারণায় লিপ্ত থেকে মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে।
এর মধ্য দিয়ে তারা শুধু আমার বিরুদ্ধেই মিথ্যাচার করছে না, তারা বাংলাদেশ পুলিশের বিরুদ্ধেও মিথ্যাচারে লিপ্ত আছে। আপনাদের জ্ঞাতার্থে জানাচ্ছি যে বাবা মায়ের ট্রিটমেন্ট এর জন্য বহিঃবাংলাদেশ ছুটিতে বাবা মাকে নিয়ে গত ১৮ই আগস্ট হতে আমি ইন্ডিয়ার চেন্নাইতে আছি। ট্রিটমেন্ট শেষ করে দেশে ফিরতে আরো ৩/৪ দিন সময় লাগবে। মিথ্যা অপপ্রচারকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।" ফেসবুক পোস্টটি দেখুন--
পাশপাশি, সামাজিক মাধ্যম ও সংবাদমাধ্যমে প্রচারিত অস্ত্রহাতে দৃশ্যমান নারায়ণগঞ্জের ঐ পুলিশ কর্মকর্তার ছবির সাথেও ফেসবুক আইডিতে পাওয়া রাহুল পাটওয়ারীর ছবির কোনো মিল পাওয়া যায়নি। তুলনা দেখুন--
ফেসবুক পোস্টে রাহুল পাটওয়ারী বাবা মায়ের চিকিৎসার জন্য ১৮ই আগস্ট থেকে ছুটিতে থাকার কথা উল্লেখ্য করেন। বুম বাংলাদেশ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা শাখার উপসচিব ধনঞ্জয় কুমার দাস স্বাক্ষরিত রাহুল পাটওয়ারীর ছুটি মঞ্জুর সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন খুঁজে পেয়েছে। প্রজ্ঞাপন থেকে আরও জানা যায়, রাহুল পাটওয়ারী পুলিশের বিশেষ শাখার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হিসেবে ঢাকায় কর্মরত আছেন। অর্থাৎ তিনি নারায়ণগঞ্জের গোয়েন্দা শাখায় কর্মরত নন যেমনটি ফেসবুক পোস্টগুলোতে দাবি করা হচ্ছে। প্রজ্ঞাপনের স্ক্রিনশট দেখুন--
নারায়ণগঞ্জে বিএনপি-পুলিশ সংঘর্ষে বিএনপি কর্মীদের লক্ষ্য করে গুলি চালানো পুলিশ কর্মকর্তা কে?
সার্চ করার পর, জাতীয় দৈনিক সমকালের অনলাইন সংস্করণে গত ৩ সেপ্টেম্বর "চায়নিজ রাইফেল দিয়ে গুলি করেন ডিবির এসআই কনক" শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, "নারায়ণগঞ্জে বিএনপি নেতাকর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষের সময় পুলিশ টিয়ার গ্যাসের শেল ও শটগানের পাশাপাশি চায়নিজ রাইফেল দিয়েও গুলি ছুড়েছে। ডিবি পুলিশের এসআই মাহফুজুর রহমান কনককে চায়নিজ রাইফেল দিয়ে পরপর তিন রাউন্ড গুলি করতে দেখা গেছে। এ ব্যাপারে নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, কনকের নামে কোনো রাইফেল ইস্যু নেই, আছে পিস্তল। তিনি অন্য কারও রাইফেল দিয়ে গুলি ছুড়লে তা নিয়মের ব্যত্যয়। বৃহস্পতিবারের ওই সংঘর্ষের সময় গুলিতে শাওন আহমেদ রাজা নামে এক যুবদল কর্মী নিহত এবং ২৫ জনের বেশি গুলিবিদ্ধসহ বহু নেতাকর্মী আহত হন।" স্ক্রিনশট দেখুন--
দৈনিক প্রথম আলোর অনলাইন সংস্করণে একই দিনে অর্থাৎ ৩ সেপ্টেবর "নারায়ণগঞ্জে সংঘর্ষে রাইফেল হাতে ছবিটি ডিবির এসআই মাহফুজের" নামে আরও একটি প্রতিবেদন খুঁজে পেয়েছে বুম বাংলাদেশ। প্রতিবেদনে লেখা হয়েছে, "নারায়ণগঞ্জে গত বৃহস্পতিবার পুলিশ–বিএনপি সংঘর্ষের সময় রাইফেল দিয়ে একজনকে গুলি করতে দেখা যায়। পরদিন প্রথম আলোসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে রাইফেল ব্যবহারের ছবিও ছাপা হয়। এমনকি রাইফেল দিয়ে গুলি চালানো হচ্ছে—এমন ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। নারায়ণগঞ্জ পুলিশের একাধিক সদস্য নিশ্চিত করেছেন, রাইফেল দিয়ে গুলি করতে দেখা যাওয়া ব্যক্তি জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) উপপরিদর্শক (এসআই) মাহফুজুর রহমান।" স্ক্রিনশট দেখুন--
অর্থাৎ রাহুল পাটওয়ারী নন, আলোচিত ওই পুলিশ কর্মকর্তার নাম মাহফুজুর রহমান কনক। এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত তিনি নারায়ণগঞ্জ জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) উপপরিদর্শক (এসআই) হিসাবে কর্মরত আছেন।
প্রসঙ্গত গত ৪ সেপ্টেম্বর দেশের একাধিক সংবাদমাধ্যমে নারায়ণগঞ্জে পুলিশ-বিএনপি সংঘর্ষে যুবদলের কর্মী শাওন নিহতের ঘটনায় আদালতে জেলা গোয়েন্দা পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) মাহফুজুর রহমান কনককে প্রধান আসামি করে বিএনপির পক্ষ থেকে মামলার আবেদন করার খবর প্রকাশিত হয়েছে।
সুতরাং নারায়ণগঞ্জ জেলা গোয়েন্দা পুলিশের এসআই মাহফুজুর রহমান কনকের ছবি দিয়ে পুলিশের বিশেষ শাখার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাহুল পাটওয়ারী দাবি করা হচ্ছে সামাজিক মাধ্যমে, যা বিভ্রান্তিকর।