সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের বিভিন্ন আইডি ও পেজ থেকে পোস্ট করে দাবি করা হচ্ছে, বাংলাদেশ সচিবালয়ের নথিপত্র ভর্তি ট্রাক আটক করেছে বরিশালের সাধারণ মানুষ। এরকম কয়েকটি পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে।
গত ২৮ ডিসেম্বর ‘Mehedi Hasan Taposh’ নামের একটি আইডি থেকে পোস্ট করে উল্লেখ করা হয়, “সচিবালয়ের নথিপত্র ভর্তি ট্রাক আটক করেছে বরিশালের সাধারণ মানুষ। সূত্রঃ চ্যানেল ২৪।” নিচে পোস্টটির স্ক্রিনশট দেখুন--
আলোচ্য পোস্টে তথ্যসূত্র হিসেবে বেসরকারি সম্প্রচারমাধ্যম চ্যানেল টুয়েন্টি ফোরকে সূত্র হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে।
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, আলোচ্য দাবিটি সঠিক নয়। বাংলাদেশ সচিবলায় নয় বরং বরিশালে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের পুরাতন নথি ভর্তি দুটি ট্রাক সন্দেহজনকভাবে আটক করে স্থানীয় জনতা।
কি-ওয়ার্ড সার্চ করে আলোচ্য দাবির পক্ষে কোনো ধরণের প্রতিবেদন বা তথ্য পাওয়া যায়নি।
তবে সার্চ করে “বরিশালে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের দুই ট্রাক নথি আটকে দিলো জনতা” শিরোনামে অনলাইন সংবাদমাধ্যম ‘জাগোনিউজ’ এ একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। যেই প্রতিবেদনে উল্লেখ্য করা হয়, ২৭ ডিসেম্বর রাত ৮টার দিকে বরিশাল নগরীর পাশে সদর উপজেলার চরবারিয়া ইউনিয়নের কাগাসুরা বাজারে বরিশাল শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের দুই ট্রাক পুরাতন নথি আটক করে স্থানীয় জনতা। আগুনে পুড়িয়ে ফেলার জন্য ওই নথি নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। প্রতিবেদনে বরিশাল শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শহিদুল ইসলামের উদ্ধৃতি দিয়ে আরো বলা হয়, ১৯৯২ সালের পর থেকে জমা হওয়া বিভিন্ন শিডিউলের ফটোকপি অফিসে জমা হয়েছিল। রুম খালি করার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলাপ করে নথিগুলো পুড়িয়ে ফেলার জন্য ময়লার ভাগাড়ে পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু সেগুলো ভাগাড়ে না নিয়ে ভাড়াটে শ্রমিকরা বিক্রির উদ্দেশ্যে অন্য কোথাও নিয়ে যায়। পরে জনতা আটক করলে পুলিশের সহায়তায় আবার ফিরিয়ে আনা হয়েছে। পরবর্তীতে জেলা প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। প্রতিবেদনটিতে কোথাও নথিগুলো বাংলাদেশ সচিবালয়ের বলে উল্লেখ্য নেই। স্ক্রিনশট দেখুন--
একই সার্চে “নথি গায়েব হচ্ছে সন্দেহে দুই ট্রাক আটক” শিরোনামে দৈনিক ‘কালবেলা’র অনলাইনে একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। যেখানে বলা হয়, বরিশাল শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের পুরোনো নথিপত্র নিয়ে যাওয়া দুটি ট্রাক আটক করে পুলিশের কাছে সোপর্দ করেছে স্থানীয় জনতা। গত শুক্রবার রাতে সদর উপজেলার চরবাড়িয়া ইউনিয়নের কাগাশুরা বাজারে এ ঘটনা ঘটে। পরে ট্রাক দুটি শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। চরবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক চেয়ারম্যান জিয়াউল ইসলাম সাবু বলেন, সচিবালয়ে আগুন দিয়ে নথিপত্র পুড়িয়ে ফেলার ঘটনাকে কেন্দ্র করে স্থানীয়দের মধ্যে সন্দেহ হয়; সেই ধরনের কোনো ঘটনা কি না। এ কারণে তারা ট্রাক দুটি আটকে পুলিশে খবর দেয়। পুলিশ এসে সংশ্লিষ্ট দপ্তর প্রধানকে বিষয়টি জানায়। এরপর ঘটনাস্থলে এসে নির্বাহী প্রকৌশলী সবাইকে বলেন, এগুলো বরিশাল শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের পুরোনো কাগজ এবং আসবাবপত্র। পুড়িয়ে ফেলার জন্য পাঠানো হয়েছিল। বিষয়টি বিশ্বাসযোগ্য হওয়ার পর ট্রাক দুটি ছেড়ে দেয় স্থানীয় জনতা। এই প্রতিবেদনটিতেও কোথাও নথিগুলো বাংলাদেশ সচিবালয়ের বলে উল্লেখ্য নেই। স্ক্রিনশট দেখুন--
চ্যানেল ২৪ এর প্রতিবেদনে কি বলা হয়েছে?
এদিকে আলোচ্য পোস্টে চ্যানেল ২৪ কে সূত্র হিসেবে ব্যবহার করা হয়। পরবর্তীতে কি-ওয়ার্ড সার্চ করে “সচিবালয়ের নথি সন্দেহে দুই ট্রাক পুরাতন নথি আটকে দিয়েছে বরিশালের স্থানীয়রা” শিরোনামে ‘চ্যানেল ২৪’ এর ইউটিউব চ্যানেলে একটি ভিডিও প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। যেই প্রতিবেদনের বর্ণনায় বলা হয়, সচিবালয়ের নথি সন্দেহে দুই ট্রাক পুরাতন নথি আটকে দিয়েছে বরিশালের স্থানীয়রা। যার মূল ভিডিওতে বলা হয়, নথিগুলো বরিশাল শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের। সচিবালয়ের দুর্ঘটনার পরে মানুষ সচেতন হওয়ায় তারা সন্দেহের ভিত্তিতে নথীপত্র ভর্তি ট্রাক দুইটি আটক করে। চ্যানেল ২৪ এর অরিজিনাল ভিডিও প্রতিবেদনটি দেখুন--
অর্থাৎ আটককৃত দুই ট্রাক ভর্তি নথিগুলো বাংলাদেশ সচিবালয়ের নয় বরং এগুলো বরিশালের শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের পুরোনো নথিপত্র।
সুতরাং বরিশালের শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের পুরোনো নথিপত্র বাংলাদেশ সচিবালয়ের দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে ফেসবুকে, যা বিভ্রান্তিকর।