সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকের একাধিক আইডি, পেজ ও গ্রুপে একটি ভিডিও শেয়ার করে বলা হচ্ছে, ভিডিওটি সম্প্রতি রংপুরের একজন আওয়ামী লীগ সমর্থকের ছেলেকে গুলি করে হত্যার সময়ে ধারণ করা হয়েছে। এরকম কয়েকটি ফেসবুক পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে ও এখানে।
গত ১২ ফেব্রুয়ারি 'জনতার আদালত' নামে একটি ফেসবুক গ্রুপে 'Khan Baba' নামে একটি ফেসবুক একাউন্ট থেকে একটি ভিডিও পোস্ট করে বলা হয়, "প্রকাশ্য আওয়ামী লীগের নেতাকে ডেকে এনে জঙ্গি পুলিশ গুলি করে রংপুরের পীরগাছায় আওয়ামী সমর্থীত এক ইউপি মেম্বারের ছেলেকে বাসা থেকে ঢেকে এনে গুলি করে হত্যা!💔 এভাবেই চলছে আওয়ামী নিধন!💔💔"। ফেসবুক পোস্টটির স্ক্রিনশট দেখুন--
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, আলোচ্য পোস্টের দাবিটি সঠিক নয়। গতবছরের ৫ আগস্ট সরকার পতনের এক দফা আন্দোলন চলাকালে গাজীপুরের কোনাবাড়ীতে গুলি করে কলেজছাত্র মো. হৃদয়কে হত্যা করা হয়। হৃদয়কে হত্যার সময়ে ধারণকৃত ভিডিওকে আওয়ামী লীগ সমর্থকের ছেলেকে সম্প্রতি গুলি করে হত্যা করার ভিডিও বলে প্রচার করা হচ্ছে।
আলোচ্য ভিডিওটির ব্যাপারে জানতে ভিডিওটি থেকে কি-ফ্রেম কেটে নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চ করে অনলাইন পোর্টাল ঢাকা টাইমসের ওয়েবসাইটে গত বছরের ৭ সেপ্টেম্বর "কোনাবাড়ীতে ছাত্র হত্যায় কনস্টেবল আকরাম গ্রেপ্তার" শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত প্রতিবেদনে আলোচ্য ভিডিওটির মত দেখতে একটি ফ্রেম খুঁজে পাওয়া যায়। প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে গাজীপুরের কোনাবাড়ীতে গুলি করে কলেজছাত্র মো. হৃদয়কে হত্যা করে পুলিশ কনস্টেবল মো. আকরাম হোসেন। গাজীপুরের কোনাবাড়ী এলাকায় গতবছরের ৫ আগস্ট হৃদয় সরকার বিরোধী বিভিন্ন স্লোগান দেন। এ সময় কয়েকজন পুলিশের উপস্থিতি দেখতে পেয়ে হৃদয় রাস্তার পাশে অবস্থান নেন। ওই সময় শিল্প পুলিশে কর্মরত কিছু পুলিশ সদস্য হৃদয়কে রাস্তার পাশ থেকে ধরে নিয়ে চড়থাপ্পড় মারেন। একপর্যায়ে পুলিশ কনস্টেবল আকরাম অতি উৎসাহী হয়ে তার পেছন দিক থেকে গুলি করলে ঘটনাস্থলেই হৃদয়ের মৃত্যু হয়। স্ক্রিনশট দেখুন--
পরবর্তীতে কি-ওয়ার্ড সার্চ করে বেসরকারি সম্প্রচার মাধ্যম যমুনা টেলিভিশনের ইউটিউব চ্যানেলে গতবছরের ৭ সেপ্টেম্বর "পিঠে অস্ত্র ঠেকিয়ে গুলি করে হত্যা; গ্রেফতার হলো সেই পুলিশ সদস্য | Gazipur Constable | Jamuna TV" শিরোনামে একটি ভিডিও প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। ওই প্রতিবেদনটিতে আলোচ্য ভিডিওটির মত হুবহু দৃশ্য খুঁজে পাওয়া যায়। প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, গাজীপুরের কোণাবাড়িতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে কলেজছাত্র হৃদয় হত্যা মামলায় পুলিশ কনস্টেবল আকরাম হোসেনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। নিহত কলেজছাত্র হৃদয় অটোরিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন। গত ৫ আগস্ট কোণাবাড়িতে আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে বিভিন স্লোগান দিচ্ছিলো সে। পরে, শিল্প পুলিশে কর্মরত কিছু সদস্য তাকে ধরে নিয়ে চড়থাপ্পড় দেয়। একপর্যায়ে কনস্টেবল আকরাম অতি উৎসাহী হয়ে হৃদয়ের পেছন দিক থেকে গুলি করে। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় তার। ইউটিউব ভিডিওটি দেখুন--
এছাড়াও যমুনা টেলিভিশনে প্রচারিত অন্য সংবাদ থেকেও আলোচ্য ভিডিওটির ব্যাপারে একই তথ্য জানা যায়।
অর্থাৎ আলোচ্য পোস্টের দাবিটি সঠিক নয়। আলোচ্য ভিডিওটি কোনো আওয়ামী লীগ সমর্থকের ছেলেকে হত্যার ভিডিও নয়। গতবছরের ৫ আগস্ট সরকার পতনের এক দফা আন্দোলন চলাকালে হৃদয় নামে এক ছাত্রকে পুলিশের গুলি করে হত্যার আলোচ্য ভিডিওটি ধারণ করা হয়।
সুতরাং গত আগস্টে সরকার বিরোধী আন্দোলনকারী কলেজছাত্র হৃদয়কে হত্যার ভিডিওকে সম্প্রতি আওয়ামী লীগ সমর্থকের ছেলেকে হত্যার ভিডিও বলে প্রচার করা হচ্ছে ফেসবুকে, যা বিভ্রান্তিকর।