সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকের একাধিক আইডি ও পেজ থেকে একটি সংবাদের লাইভ ভিডিও শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে, চট্টগ্রামে সন্ত্রাসীদের হাতে হত্যাকাণ্ডের শিকার কলেজছাত্র শিবলী সাদিক হৃদয়ের হত্যাকারীদের ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছে এবং ভিডিওটি ফাঁসি কার্যকরের পর ধারণ করা লাইভ সংবাদের। এরকম কয়েকটি পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে ও এখানে।
গত ১৮ ডিসেম্বর 'Md Robel YT' নাম একটি ফেসবুক আইডি থেকে একটি ভিডিও শেয়ার করে বলা হয়, "আলহামদুলিল্লাহ আজ হৃদয়ের হত্যাকারীদের ফাঁসি দিয়েছেন @সবাই বলেন আমিন#"। ফেসবুক পোস্টটির স্ক্রিনশট দেখুন--
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, আলোচ্য পোস্টের দাবিটি সঠিক নয়। গত ২৭ জুলাই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক এস তাহের আহমেদ হত্যা মামলায় অভিযুক্ত মিয়া মহিউদ্দিন এবং জাহাঙ্গীর আলমের ফাঁসি কার্যকর করা হয় এবং এটি তাদের ফাঁসি কার্যকরের পর একটি বেসরকারি টেলিভিশনকে দেয়া প্রতিবেদকের লাইভের ভিডিও।
আলোচ্য পোস্টে একটি স্থিরচিত্র যুক্ত করা হয়। স্থিরচিত্রটির রিভার্স ইমেজ সার্চ করে অনলাইন পোর্টাল আমাদের সময় ডট কমে ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩ সালে "পুরো জাতিকে দোষারোপ করা উচিত নয়- হত্যাকারী কোনো ধর্মেরও নয়-কোনো জাতিরও নয় হত্যাকারী তো হত্যাকারীই" শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে ওই স্থিরচিত্রটি খুঁজে পাওয়া যায়। এই প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, চট্টগ্রামের রাউজানে শিবলী সাদিক হৃদয় নামের এক কলেজছাত্র তার ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর কয়েকজন বন্ধুর হাতে খুন হওয়ার অভিযোগ উঠেছে। ছবিটিতে হৃদয় এবং তার সেই ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর বন্ধুদের দেখা যাচ্ছে। স্ক্রিনশট দেখুন--
এদিকে, আলোচ্য পোস্টে যুক্ত ভিডিওটির সাথে সংশ্লিষ্ট কি-ওয়ার্ড সার্চ করে বেসরকারি টেলিভিশন 'চ্যানেল টোয়েন্টিফোর' এর ভেরিফায়েড ইউটিউব চ্যানেলে "ফাঁসির মঞ্চে একজনের চিৎকার; অন্যজন নির্বিকার! | Rajshahi | Channel 24" শিরোনামে একটি ভিডিও সংবাদ প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়, যেটি আলোচ্য পোস্টে যুক্ত ভিডিওটির সাথে হুবহু মিল রয়েছে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এস তাহের আহমেদ হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ড পাওয়া দুই আসামি মিয়া মহিউদ্দিন এবং জাহাঙ্গীর আলমের ফাঁসি কার্যকর করার পর লাইভ প্রতিবেদনের ভিডিও সেটি। ইউটিউব ভিডিওটি দেখুন--
অর্থাৎ এটি রাবি শিক্ষক অধ্যাপক তাহের আহমেদ হত্যাকাণ্ডে অভিযুক্তদের ফাঁসির রায় কার্যকরের পর একটি টিভি চ্যানেলকে দেয়া প্রতিবেদকের লাইভের ভিডিও, চট্টগ্রামের রাউজানে শিবলি সাদিক হৃদয় হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের ফাঁসি কার্যকরের ঘটনার নয়।
প্রসঙ্গত চলতি বছরের গত ২৮ আগস্ট অপহরণের পর চট্টগ্রামের রাউজানের হৃদয়কে হত্যা করা হয়। হৃদয় হত্যা মামলায় পুলিশ ৫ জনকে গ্রেফতার করার পর, একজনকে পুলিশের হাত থেকে ছিনিয়ে নিয়ে গণপিটুনি দিয়ে হত্যা করে বিক্ষুব্ধ জনতা। আর বাকী চারজন কারাগারে আছেন। অর্থাৎ হৃদয় হত্যা মামলার বিচার প্রক্রিয়া প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে।
অন্যদিকে, ২০০৬ সালের ১ ফেব্রুয়ারি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পদোন্নতি-সংক্রান্ত বিরোধের জেরে অধ্যাপক এস তাহের খুন হন। ম্যানহোল থেকে তাঁর লাশ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় দীর্ঘ বিচার প্রক্রিয়া শেষে চলতি বছরের গত ২৭ জুলাই দু'জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।
সুতরাং ভিন্ন ঘটনার একটি ভিডিও পোস্ট করে চট্টগ্রামে নিহত হৃদয়ের খুনীদের ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছে বলে প্রচার করা হচ্ছে ফেসবুকে; যা বিভ্রান্তিকর।