সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকের একাধিক আইডি ও পেজ থেকে মেয়ের সঙ্গে বাবার ও ছেলের সঙ্গে মায়ের দুটি ছবি যুক্ত করে দাবি করা হচ্ছে, ছবিতে দেখতে পাওয়া বাবা-মায়েরা নিজেদের অপ্রাপ্তবয়স্ক ছেলে-মেয়েকে বিয়ে করেছেন। এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে।
গত ২৪ অক্টোবর "দাস বিভাস" নামের একটি ফেসবুক আইডি থেকে ছবিটি পোস্ট করে বলা হয়, "হাসির কি আছে 😀 মুজীবের গর্বের বাংলাদেশের সুনামগঞ্জের ঘটনা। পৃথিবীর সবচাইতে পবিত্র ধর্মের ঘটনা।বাবা মেয়েকে বিয়ে করেছে বলে মা রাগ করে ছেলেকে বিয়ে করে ফেলল। আদর্শ ধর্ম। সুভানাল্লাহ। Sumi Hindu পোষ্ট থেকে দুষ্প্রাপ্য তথ্যটি সংগৃহীত"।
ফ্যাক্ট চেক
বুম বাংলাদেশ দেখেছে, পোস্টের বর্ণনায় করা দাবিটি সঠিক নয় এবং ছবিটি বাংলাদেশের সুনামগঞ্জেরও নয়। মূলত কুরআন হিফজ ও খতম করার পর ছেলে মেয়েদের সঙ্গে বাবা-মায়ের দুটি আলাদা ছবি একসাথে জুড়ে ভুয়া সাম্প্রদায়িক দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে ফেসবুকে।
প্রথম ছবি
রিভার্স ইমেজ সার্চ করার পর, ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ফেসবুকে উর্দু ক্যাপশন সহ ছবিটি পোস্ট করতে দেখা গেছে, যার অনুবাদ হল, "মুবারক! মাশা-আল্লাহ পিতা-কন্যা একই সঙ্গে একই শ্রেণি থেকে কুরআন আয়ত্ত্ব ও হাফেজ হওয়ার সাফল্য অর্জন করেছে...!" ( মূল উর্দু- " مبارک ... ماشاءاللہ باپ اور بیٹی ایک ھی کلاس سے فارغ (حافظ القران بن گیا) ..کمینٹ ضرور کرووو . مآشاءاللہ لکھوں ..)
সার্চ করার পর, ইসলামিক বোর্ড নামের একটি ওয়েবসাইটেও এই ছবিটি খুঁজে পায় যায়। ২০১৬ সালের ২ অক্টোবর ওয়েবসাইটে এই ছবিটি প্রকাশিত হয়। ভাইরাল হওয়া একই ছবি সেখানে প্রকাশ করে ক্যাপশনে বলা হয়, "এই পিতা-কন্যা জুটি একই সঙ্গে হাফিজ-ই-কুরআন হয়েছেন। শিক্ষার ক্ষেত্রে বয়সটা আসলে কোনও বাধাই নয়।" ওয়েবসাইটটিতে আরো বেশ কিছু শিশুর কুরআনে হাফেজ হওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। স্ক্রিনশট দেখুন-
দ্বিতীয় ছবি
রিভার্স ইমেজ সার্চ করে, এই ছবিটিও ফেসবুকে আগে খুঁজে পাওয়া গেছে। ২০২০ সালের৩১ জানুয়ারি করা পোস্টের উর্দু ক্যাপশনের অনুবাদ করলে দাঁড়ায় "আজ আমার ছেলের আল-কুরআনের খতম ছিল। শেয়ার করে অভিবাদন জানান।" (মূল উর্দুর ক্যাপশন: ج میرے بیٹے کا ختم القرآن تھا, ھمیں مبارک باد دے کر کون کون شئیر کریگا) পোস্টটির স্ক্রিনশট দেখুন-
তবে ছবিটি কোথায় তোলা হয়েছিল তা বিস্তারিত তথ্য জানা যায়নি। ফ্যাক্ট চেকিং সংস্থা অল্ট নিউজ-এর সহ প্রতিষ্ঠাতা মোহাম্মদ জুবায়ের টুইটারে এই ছবিটি সম্পর্কিত একটি 'থ্রেড' পোস্ট করেন। ভাইরাল ছবিটি সম্পর্কে যা যা জানতে পেরেছেন, তা তিনি বিস্তারিত জানান। পরবর্তীতে একাধিক তথ্য যাচাইকারী সংস্থা নিজ ছেলেকে বিয়ে করার দাবিটি ভুয়া হিসাবে চিহ্নিত করে।
অর্থাৎ কুরআন হিফজ এবং খতমের পর পিতা-মাতার সাথে তোলা দুটি আলাদা ঘটনার ছবিকে যুক্ত করে, বাংলাদেশের সুনামগঞ্জের ঘটনা দাবিতে ভুয়া সাম্প্রদায়িক প্রচার করা হচ্ছে, যা বিভ্রান্তিকর।
এদিকে বুমলাইভ বাংলাও এর আগে ছবিটি যাচাই করেছে। দেখুন এখানে।