সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের বিভিন্ন আইডি ও পেজ থেকে একটি ফটোকার্ড পোস্ট করে দাবি করা হচ্ছে, এক তরুণীকে আটকে রাতভর ধর্ষণের অভিযোগে বাংলাদেশ জামায়াত ইসলামীর এক নেতা পুলিশের হাতে আটক হয়েছেন। এরকম কয়েকটি পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে।
গত ৪ জানুয়ারি ‘বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি’ নামের একটি আইডি থেকে পোস্ট করে উল্লেখ করা হয়, “এটা আসা করি নেই।” পোস্টে যুক্ত ফটোকার্ডে লেখা রয়েছে, “ঘুরতে আসা তরুণীদের তুলে নিয়ে রাতবর ধর্ষণ, জামাত নেতা গ্রেফতার”। অর্থাৎ দাবি করা হচ্ছে ফটোকার্ডে থাকা ছবিতে পুলিশের হাতে আটক ব্যক্তি জামায়াত নেতা। নিচে পোস্টটির স্ক্রিনশট দেখুন--
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, দাবিটি সঠিক নয়। এক তরুণীকে আটকে রেখে রাতভর ধর্ষণের অভিযোগে ছবিতে দৃশ্যমান পুলিশের আটক ব্যক্তি বাংলাদেশ জামায়াত ইসলামীর কোনো নেতা নন বরং তিনি সাবেক ছাত্রদল নেতা এবং যুবদলের পদপ্রত্যাশী এক ব্যক্তি, তার নাম ইরমান আলী শোভন।
কি-ওয়ার্ড সার্চ করে ফেসবুকে প্রচারিত ভাইরাল দাবির পক্ষে কোনো ধরণের প্রতিবেদন বা তথ্য পাওয়া যায়নি।
তবে, কি-ওয়ার্ড সার্চ করে “ঘুরতে আসা তরুণীকে তুলে নিয়ে রাতভর ধর্ষণ, যুবদল নেতা গ্রেপ্তার” শিরোনামে ‘ঢাকাপোস্ট’ এর অনলাইনে একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। যে প্রতিবেদনে প্রকাশিত ছবিটির সঙ্গে ফেসবুকে প্রচারিত ভাইরাল ফটোকার্ডের ছবির সঙ্গে মিল খুঁজে পাওয়া যায়। ২১ নভেম্বর প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, তরুণীকে আটকে রাতভর ধর্ষণের ঘটনায় ইরমান আলী শোভন নামে এক যুবদল নেতাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ২০ নভেম্বর ২৫ নম্বর ওয়ার্ড রূপাতলী এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ সময়ে জিম্মি তরুণীকে উদ্ধার করা হয়েছে। গ্রেপ্তার যুবদল নেতা ইরমান রুপাতলি নতুন আবাসিক এলাকার মৃত ইউসুব আলীর ছেলে। তিনি ২৫ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক এবং বর্তমানে ওয়ার্ড যুবদলের পদপ্রত্যাশী। স্ক্রিনশট দেখুন--
একই সার্চে “তরুণীকে তুলে নিয়ে আটকে রেখে ধর্ষণ, সাবেক ছাত্রদল নেতা গ্রেফতার” শিরোনামে দৈনিক সংবাদপত্র ‘বাংলা ট্রিবিউন’ এর অনলাইনে আরেকটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। যেই প্রতিবেদনে ব্যবহৃত ছবিটির ব্যক্তির সঙ্গে ভাইরাল ফটোকার্ডের ব্যক্তিটির মিল খুঁজে পাওয়া যায়। ২১ নভেম্বর প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, বরিশালে তরুণীকে আটকে রেখে ধর্ষণের অভিযোগে ইরমান আলী নামে ছাত্রদলের সাবেক এক নেতাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ২০ নভেম্বর নগরীর ২৫ নম্বর ওয়ার্ড রূপাতলী এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ সময়ে ভুক্তভোগীকে উদ্ধার করা হয়েছে। গ্রেফতার যুবদল নেতা ইরমান রূপাতলী নতুন আবাসিক এলাকার মৃত ইউসুফ আলীর ছেলে। সে ২৫ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক এবং বর্তমানে ওয়ার্ড যুবদলের পদপ্রত্যাশী। ভুক্তভোগী তরুণী বাদী হয়ে থানায় মামলা করেছেন। তার ডাক্তারি পরীক্ষার জন্য ওসিসিতে পাঠানো হবে। স্ক্রিনশট দেখুন--
আলোচ্য প্রতিবেদন দুটির কোথাও আটককৃত যুবদল নেতা ইমরানের সঙ্গে জামায়াত ইসলামীর সংশ্লিষ্টতার তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।
নিচে ফেসবুকে ভাইরাল দাবিতে প্রচারিত ফটোকার্ড (বামে) এবং ঢাকাপোস্ট অনলাইনে প্রকাশিত অরিজিনাল ছবির (ডানে) মধ্যে মিল দেখুন পাশাপাশি--
অর্থাৎ তরুণীকে আটকে রেখে রাতভর ধর্ষণের অভিযোগে আটককৃত ব্যক্তি জামায়াতের কোনো নেতা নন বরং তিনি ছাত্রদলের সাবেক নেতা এবং যুবদলের পদপ্রত্যাশী ইমরান।
সুতরাং তরুণীকে ধর্ষণের অভিযোগে যুবদল নেতার আটকের ছবি জামায়াত নেতার বলে প্রচার করা হচ্ছে ফেসবুকে, যা বিভ্রান্তিকর।