সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকের একাধিক আইডি থেকে দু’জন বোরকা পরা নারীর ছবি পোস্ট করে দাবি করা হচ্ছে, ছবির নারী দু’জন কোটা আন্দোলনকারী এবং আন্দোলন চলাকালে প্রাণঘাতি অস্ত্র ব্যবহার করে মানুষ হত্যা করেছে। এখানে ও এখানে।
গত ৩ ঘন্টা আগে 'মোঃ আইন উদ্দীন শাহ্ জয়' নামের একটি ফেসবুক একাউন্ট থেকে কয়েকটি ছবি শেয়ার করে বলা হয়, "সাবেক স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা এম. সাখাওয়াত হোসেন বলেছিলেন, এতো মৃত্যু পুলিশের গুলিতে হয়নি, বেশিরভাগ ছাত্রের মৃত্যু হয়েছে নিষিদ্ধ অস্ত্রের গুলিতে, যে অস্ত্র বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কাছেও নেই, অস্ত্র গুলি একমাত্র ব্যবহার করে - আমেরিকার ন্যাটো জোট ও আমেরিকার গোয়েন্দারা, এটা সে সুক্ষ্মভাবে তদন্ত করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন, এতেই তাকে মন্ত্রণালয় থেকে সরিয়ে দেওয়া হলো, সাধারণ শিক্ষার্থীদের লাশের উপর ভর করে ক্ষমতায় আসীন হয়েছে এই ছয় সমন্বয়ক এটা দিনের আলোর মত পরিষ্কার। দ্রুত এদের কে আইনের আওতায় এনে যথাযথ বিচারের ব্যাবস্থা গ্রহণ করুন। অন্যথায় দেশ ভয়ংকর জঙ্গি আগ্রাসন এর দিকে আগাচ্ছে ।" পোস্টে যুক্ত ছবিগুলোর মধ্যে একটি ছবিতে দু’জন বোরকা পরা নারীকে হাতে বন্দুক নিয়ে বসে থাকতে দেখা যায়। ফেসবুক পোস্টটির স্ক্রিনশট দেখুন--
পোস্টে যুক্ত একটি ছবি দেখুন আলাদাভাবে--
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, আলোচ্য পোস্টের দাবিটি সঠিক নয়। পাকিস্তানের বেলুচিস্তান প্রদেশের লিয়ারি নামক স্থানে ২০১২ সালের এপ্রিল মাসে স্থানীয় সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান পরিচালনা করা হয়। আলোচ্য নারীদের এই ছবিটি ওই অভিযানকালে ধারণ করা হয়েছিল।
আলোচ্য ছবিটির ব্যাপারে জানতে ছবিটি নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চ করে পাকিস্তানি গণমাধ্যম ডনের ওয়েবসাইটে ২০১২ সালের ২৭ এপ্রিল "Grand operation begins in Lyari" শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে আলোচ্য ছবিটি হুবহু খুঁজে পাওয়া যায়। প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, করাচির লিয়ারি এলাকায় বড় অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযানে পুলিশ এবং ফ্রন্টিয়ার কনস্টেবলারির একটি বিশাল দল অংশ নেয়। মূলত, লিয়ারি নামক স্থানে সন্দেহভাজনদের গুলিতে একজন পুলিশ সদস্য আহত হওয়া এবং একজন রাজনৈতিক কর্মীর মৃত্যুর পর ওই অভিযান পরিচালনা করা হয়। স্ক্রিনশট দেখুন--
আরো কি-ওয়ার্ড সার্চ করে, পাকিস্তানভিত্তিক আরেকটি গণমাধ্যম এক্সপ্রেস ট্রিবিউনের ২০১২ সালের ২৯ এপ্রিল "Operation against gangsters: SHO among 11 killed as Lyari battles heat up" শিরোনামে প্রকাশিত আরেকটি প্রতিবেদনেও আলোচ্য ছবিটির একটু আগে কিংবা পরে তোলা একই নারীদ্বয়ের ছবি খুঁজে পাওয়া যায়। ছবিটির ক্যাপশনে বলা হয়, "গ্যাংস্টারদের বিরুদ্ধে অভিযান: লিয়ারিতে সংঘর্ষে এসএইচওসহ ১১ জন নিহত"। ওই প্রতিবেদনটি থেকেও জানা যায়, ওই বছরের ২ এপ্রিল থেকে লিয়ারি নামক স্থানে সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান পরিচালিত হয়। তবে, ছবিতে উপস্থিত দুই নারীর পরিচয় সম্পর্কে কিছু উল্লেখ করা হয়নি প্রতিবেদনে। স্ক্রিনশট দেখুন--
পরবর্তীতে আরো কি-ওয়ার্ড সার্চ করে জানা যায়, ২০১২ সালে পাকিস্তানের বেলুচিস্তান রাজ্যের লিয়ারি নামক স্থানে দেশটির সশস্ত্র বাহিনী অভিযান চালায়। দেশটির সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানের অংশ হিসেবে ওই বছরের ২৭ এপ্রিল থেকে ৪ মে পর্যন্ত ওই অভিযান পরিচালনা করা হয়।
২০২৪ সালের কোটা আন্দোলনের ছবি ২০১২ সালে পাকিস্তানের সংবাদপত্রে প্রকাশিত সংবাদের সাথে প্রকাশ হওয়া বাস্তবসম্মত নয়।
উল্লেখ্য আলোচ্য ফেসবুক পোস্টের আলোচ্য ছবিটি ছাড়া বাকী ছবিগুলো যাচাই করে দেখেনি বুম বাংলাদেশ।
অর্থাৎ আলোচ্য পোস্টের দাবিটি সঠিক নয়।
সুতরাং পাকিস্তানের বেলুচিস্তানের দুই সশস্ত্র নারীর ছবিকে বাংলাদেশের কোটা আন্দোলনের সময়কার দুই আন্দোলনকারীর ছবি বলে প্রচার করা হচ্ছে ফেসবুকে, যা বিভ্রান্তিকর।