সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকের একাধিক আইডি ও পেজ থেকে একটি বিমানে অগ্নিকাণ্ডের ভিডিও শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে, পাকিস্তান থেকে আসা এমিরেটস এয়ারলাইন্সের একটি উড়োজাহাজ শারজাহ্ বিমানবন্দরে অবতরণের সময় দুর্ঘটনার কবলে পড়ে শতাধিক মানুষ হতাহত হয়েছে, ভিডিওটি সেই ঘটনার। ভিডিও ফুটেজে দেখা যাচ্ছে আরোহীরা ইমারজেন্সি এক্সিট রুট দিয়ে বের হয়ে দুর্ঘটনা কবলিত বিমানটি থেকে দৌড়ে সরে যাচ্ছেন। এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে।
গত ১৫ এপ্রিল 'মোফা' নামের ফেসবুক পেজ থেকে ভিডিওটি পোস্ট করে লেখা হয়, "ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। পাকিস্তান থেকে আসা ( 521 ) Emarat Airlines এর একটি বিমান Sharjah Airport ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। পাকিস্তান থেকে আসা ( 521 ) Emarat Airlines এর একটি বিমান Sharjah Airport এ লেন্ডিং গিয়ার ব্লক হয়ে যাওয়ার কারনে অবতরণ করার সময় মাটিতে আছড়ে পড়ে / ২০৮ জন যাত্রীর মধ্যে ১৭৪ জন মৃত্যু বরণ করেন / এবং ৩৪ জন প্রাণে বাঁচলেউ তাদের অবস্তা গুরুতর.."। স্ক্রিনশট দেখুন--
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, ক্যাপশনে করা দাবিটি সঠিক নয়। ২০১৯ সালে মস্কোর শেরেমেতয়েভো আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিমান দুর্ঘটনার ভিডিও পোস্ট করে শারজাহ্ বিমানবন্দরে বিমান দুর্ঘটনায় হতাহতের ভিত্তিহীন খবর প্রচার করা হচ্ছে।
ছবিটি আলাদা করে রিভার্স সার্চ করার পর, 'Giriz Aviation' নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলে ভাইরাল ফেসবুক পোস্টের হুবহু ভিডিওর পুরোনো ভার্সন খুঁজে পাওয়া যায়। "Russian passenger plane crashes" শিরোনামে ২০২১ সালের ৮ নভেম্বর প্রিমিয়ার হওয়া ভিডিওটির বিবরণে লেখা হয়েছে, ২০১৯ সালের ৫ মে রুশ বিমান "Aeroflot Sukhoi Superjet 100" শেরেমেতয়েভো বিমানবন্দর থেকে উড্ডয়নের পরপরই পাইলট যান্ত্রিক ত্রুটি লক্ষ্য করলে পুনরায় জরুরী অবতরণ করে, এ সময় বিমানটিতে আগুন ধরে যায়। ভিডিওটি দেখুন--
ইউটিউব ভিডিও থেকে নেয়া স্ক্রিনশট এবং বিভ্রান্তিকর ফেসবুক ছবিটির পাশাপাশি তুলনা দেখুন--
এই সূত্র ধরে কি-ওয়ার্ড সার্চ করার পর, আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ফার্স্টপোস্ট-এ "Russian plane that caught fire on landing was still heavy with unburnt fuel; pilot says he followed all procedure" শিরোনামের উক্ত বিমান দুর্ঘটনা সম্পর্কিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়, যা ২০১৯ সালের ৭ মে প্রকাশিত হয়েছে। প্রতিবেদনে লেখা হয়েছে, ২০১৯ সালের ৫ মে রুশ বিমান সুপার জেট-১০০ শেরেমেতয়েভো বিমানবন্দর থেকে উড্ডয়নের পরপরই দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। জরুরি অবতরণের আগেই বিমানটিতে আগুন ধরে যায় এবং আরোহীদের অন্তত ৪১ জনের মৃত্যু বরন করে বলেও জানানো হয় প্রতিবেদনে। প্রতিবেদনের স্ক্রিনশট দেখুন--
শারজাহ-এ বিমান দুর্ঘটনায় হতাহতের ভিত্তিহীন দাবি--
একাধিক কি-ওয়ার্ড ধরে সার্চ করার পরও, সংযুক্ত আরব আমিরাতের শারজাহ-এ সাম্প্রতিক সময়ে Emirates Airlines 521 নামের কোনো ফ্লাইট বিমানের দুর্ঘটনায় পতিত হওয়ার কোনো সংবাদ আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম খুঁজে পাওয়া যায়নি।
তবে সার্চ করার পর, এমিরেটস এয়ারলাইন্সের অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে ২০১৬ সালে সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই বিমানবন্দরে অবতরণের সময় ২৭৫ জন যাত্রী নিয়ে এমিরেটস এয়ারলাইনসের ইকে৫২১ নামের একটি ফ্লাইট দুর্ঘটনায় পড়ার কথা জানা যায়। তবে উক্ত দুর্ঘটনায় সব যাত্রীকে নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া হয়। বিমানটি ভারতের তিরুবনন্তপুরম থেকে আমিরাতের দুবাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে উদ্দেশ্যে এসেছিল। খবরটি দেশীয় সংবাদমাধ্যম দৈনিক প্রথম আলো'র অনলাইন সংস্করণেও প্রকাশিত হয়েছিল। অর্থাৎ শারজায় বিমান দুর্ঘটনায় হতাহতের খবরটি ভিত্তিহীন।
সুতরাং ২০১৯ সালে রাশিয়া ঘটা বিমান দুর্ঘটনার পুরোনো ভিডিও দিয়ে সম্প্রতি শারজায় বিমান দুর্ঘটনায় শতাধিক হতাহতের খবর প্রচার করা হচ্ছে সামাজিক মাধ্যমে, যা পুরোপুরি ভিত্তিহীন।