সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে একাধিক আইডি থেকে একটি ভিডিও প্রচার করে বলা হচ্ছে, ভিডিওটি আসন্ন ইদ-উল-আযহা উপলক্ষে ভারত থেকে অবৈধ পথে বাংলাদেশে গরু ঢোকার সময়ে ধারণ করা হয়েছে। এরকম কয়েকটি পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে ও এখানে।
গত ১২ জুন 'Tanvir Hossen Shohel' নামের একটি ফেসবুক একাউন্ট থেকে একটি ভিডিও পোস্ট করে লেখা হয়, "ঈদ উল আযহা উপলক্ষে গরু আসছে ভারত থেকে এটা যদি সত্যি হয় তাহলে বিষয়টি দুঃখ জনক বাংলাদেশের খামারিদের দেখার কেউ নাই....🥲" ভিডিওটিতে একটি নদীর পার হয়ে তীর ধরে অসংখ্য গরু উঠে আসতে দেখা যায়। ফেসবুক পোস্টটির স্ক্রিনশট দেখুন--
অর্থাৎ দাবি করা হচ্ছে আসন্ন কুরবানির ইদ উপলক্ষে ভারত থেকে এসব গরু বাংলাদেশ চোরাচালান হচ্ছে।
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, আলোচ্য ভিডিওটি সাম্প্রতিক নয় বরং ভিডিওটি ভারত থেকে অবৈধ পথে বাংলাদেশে গরু পাচারের দাবিতে অন্তত দুই বছর আগ থেকেই অনলাইনে পাওয়া যাচ্ছে।
আলোচ্য ভিডিওটি থেকে কি-ফ্রেম কেটে রিভার্স ইমেজ সার্চ করে বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে বিভিন্ন সময়ে ভিডিওটি অসংখ্যবার আপলোড হতে দেখা যায়। তন্মধ্যে সবচেয়ে পুরোনো, স্পষ্ট ও লোগোহীন একটি ভার্সন পাওয়া যায় ভিডিও শেয়ারিং প্ল্যাটফর্ম ইউটিউবে 'Mehedi Vlogs 420' নামের একটি চ্যানেলে। ২০২২ সালের ৭ জুলাই ভিডিওটি "ভারত থেকে বাংলাদেশে কোরবানীর জন্য গরু পার করছে কীভাবে দেখুন !! || ইন্ডিয়ান কোরবানীর গরুর হাট" শিরোনামে আপলোড করা হয়। আলোচ্য ভিডিওটি ও এই ভিডিওটি হুবহু একই।
উক্ত চ্যানেলটি ঘেঁটে দেখা যায় এটি মেহেদি মুরাদ নামের এক কনটেন্ট ক্রিয়েটর পরিচালনা করে থাকেন, যিনি বিভিন্ন ভিডিও কনটেন্ট তৈরি করে এই চ্যানেলে এবং ফেসবুকে তার নিজস্ব পেজে আপলোড দিয়ে থাকেন। তবে এই ভিডিওটি তিনি নিজেই ধারণ করেছেন কিনা/অরিজিনাল কিনা কিংবা এটিই অনলাইনে এই ভিডিওটির সর্বপ্রথম আপলোড ভার্সন কিনা তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। ফেসবুক পেজ ও প্রোফাইল ঘেঁটে পাওয়া মোবাইল নম্বরে কল দিয়ে তার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি ভিডিওটির বিষয়ে তথ্য দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন। তবে তিনি জানান, তার নাম মোহাম্মদ মেহেদি হাসান, পেশায় ফিজিওথেরাপিস্ট ও শখের বসে ভিডিও কনটেন্ট বানিয়ে থাকেন। ইউটিউব ভিডিওটি দেখুন--
এবারে আলোচ্য ফেসবুক ভিডিওটি থেকে নেয়া স্ক্রিনশট (বামে) ও উক্ত ইউটিউব ভিডিওটি থেকে নেয়া স্ক্রিনশট (ডানে) এর পাশাপাশি তুলনা দেখুন--
একই সার্চে ভিডিওটি ২০২২ সালের ১ নভেম্বর ক্ষুদে ভিডিও শেয়ারিং প্ল্যাটফর্ম টিকটকে আপলোড হতে দেখা যায়। এর পরবর্তী সময়ে ভারত থেকে বাংলাদেশে গরু পাচারের দাবিতে ভিডিওটি ইউটিউব, এক্স (সাবেক টুইটার), ফেসবুক ও টিকটকে অসংখ্যবার আপলোড হতে দেখা যায়। আবার কক্সবাজারের একটি স্থানীয় অনলাইন পোর্টাল 'কক্সবাজার নিউজ'-এ মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে গরু পাচার সংক্রান্ত একটি খবরের ফিচার ইমেজ হিসেবে উক্ত ভিডিওটি থেকে নেয়া একটি স্ক্রিনশট ব্যবহার করা হয়েছে। তবে ভিডিওটির ধারণের স্থান এবং সময় সম্পর্কে কোথাও সুস্পষ্ট কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
অর্থাৎ আলোচ্য ভিডিওটি সাম্প্রতিক নয় বরং অন্তত দুই বছর পুরোনো একটি ভিডিওকে সম্প্রতি ভারত থেকে বাংলাদেশে কুরবানির গরু চোরাচালানের দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে।
সুতরাং পুরোনো ভিডিও দিয়ে ভারত থেকে বাংলাদেশে সম্প্রতি কুরবানির গরু চোরাচালানের তথ্য প্রচার করা হচ্ছে, যা বিভ্রান্তিকর।