ফেসবুকে একটি খবর শেয়ার করে বলা হচ্ছে, রাজবাড়ীর কালুখালী উপজেলার হিমায়েতখালি গ্রামের হাবিবুর রহমান প্রতিবন্ধকতাকে হার মানিয়ে পা দিয়ে লিখে দাখিল পরীক্ষায় জিপিএ ৪.৬৩ পেয়েছে। এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে।
গত ১০ সেপ্টেম্বর 'সজীব নিউস' নামের পেজ থেকে অখ্যাত একটি অনলাইন পোর্টালের লিংক পোস্ট করে বলা হয় "হাত নেই, পা দিয়ে লিখেই জিপিএ-৪.৬৩"। ফেসবুক পোস্টের স্ক্রিনশট দেখুন--
হুবহু একই শিরোনামে প্রকাশিত অনলাইন পোর্টালের ওই খবরটির ডেটলাইন উল্লেখ আছে '1 week ago' এবং বিস্তারিত খবরে পুঁইজোর সিদ্দিকিয়া ফাজিল (ডিগ্রী) মাদরাসার অধ্যক্ষ সাঈদ আহমেদের বরাত দিয়ে লেখা হয়েছে--
"এ বছর তার মাদরাসায় দাখিল পরীক্ষায় পাসের হার শতভাগ। এরমধ্যে হাবিব ছেলেটার দুই হাত না থাকার পরও পা দিয়ে লিখে ভালো রেজাল্ট করেছে। অতীতে মাদরাসা থেকে ওকে সহযোগিতা করা হয়েছে এবং ভবিষ্যতেও করা হবে।" অর্থাৎ ফেসবুকে পোস্ট করার দিনক্ষণ ও বিবরণ দেখে স্বাভাবিকভাবে পাঠকের নিকট খবরটি চলতি বছরের মনে হতে পারে।
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, খবরটি সাম্প্রতিক নয়। কারণ করোনা মহামারির কারণে চলতি বছর অর্থাৎ ২০২১ সালে এসএসসি, দাখিল বা সমমানের পরীক্ষাই অনুষ্ঠিত হয়নি।
বিভিন্ন কিওয়ার্ড দিয়ে সার্চ করে, ২০২০ সালে দেশের মূলধারার গণমাধ্যমে খবরটি প্রকাশিত হতে দেখা গেছে। তন্মধ্যে, ২০২০ সালের ০২ জুন দৈনিক নয়া দিগন্তে অনলাইনে "পা দিয়ে লিখে জিপিএ-৪.৬৩ পাওয়া হাবিবের দায়িত্ব নিলেন কৃষকলীগ নেতা" শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনটিতে বলা হয়--
"দরিদ্র কৃষক পরিবারের সন্তান হাবিবুর রহমান। পরিবারের সামান্য জমিতে চাষাবাদ ও অন্যের জমিতে কাজ করে চলে তাদের সংসার। চার ভাই বোনের মধ্যে তৃতীয় হাবিব। জন্ম থেকেই হাবিবের দুই হাত নেই। ছোট বেলায় বাবা-মা, চাচা ও পরিবারের অন্যান্যদের অনুপ্রেরণায় পা দিয়ে লেখার অভ্যাস করে হাবিব। কালুখালী উপজেলার মৃগী ইউনিয়নের হিমায়েতখালি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পা দিয়ে লিখে প্রাথমিক সমাপনীতে ৪.৬৭ পেয়েছিল সে। পরে বাড়ি থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরের পাংশা উপজেলার পুঁইজোর সিদ্দিকিয়া ফাজিল (ডিগ্রী) মাদরাসা থেকে জেডিসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে ৪.৬১ পেয়ে পাস করে। পরবর্তীতে একই মাদরাসা থেকে ২০২০ সালে দাখিল (এসএসসি সমমান) পরীক্ষায় নিয়ে পায় জিপিএ-৪.৬৩।"
অর্থাৎ ২০২০ সালের আলোচ্য খবরটিকেই অনলাইন পোর্টালগুলোতে নতুন খবর হিসেবে প্রকাশ করা হচ্ছে। পাশাপাশি দৈনিক কালের কন্ঠ, আরটিভি অনলাইনেরও তৎকালে খবরটি প্রকাশিত হয়েছে। কালের কণ্ঠে প্রকাশিত খবরটির স্ক্রিনশট দেখুন--
অর্থাৎ সংবাদমূল্যহীন ২০২০ সালে একটি পুরোনো খবরকে অপ্রাসঙ্গিকভাবে সম্প্রতি নতুন ডেটলাইনে বিভিন্ন অনলাইন পোর্টালে প্রকাশ করা হচ্ছে, যা বিভ্রান্তিকর।