সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকের একাধিক অ্যাকাউন্ট, পেজ এবং গ্রুপে পোস্ট করে বলা হচ্ছে, ১৭ কোটি টাকার ফ্ল্যাট থেকে ১০ মাস আগে মারা যাওয়া মুম্বাইয়ের এক কোটিপতি নারীর কঙ্কাল উদ্ধার করা হয়েছে। যিনি একজন কোটিপতি NRI (ভারতীয় নাগরিক যিনি কাজ, শিক্ষা বা বসবাসের জন্য অন্য দেশে চলে গেছেন) পুত্রের মাতা ছিলেন। এরকম কয়েকটি পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে ও এখানে।
গত ২৭ জানুয়ারি 'Nasima Khanam' নামের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে ২০১৯ সালের পুরোনো একটি পোস্ট শেয়ার করা হয়। পোস্টটিতে বলা হয়, "ছবিটা মুম্বাইয়ের এক কোটিপতি মহিলার মৃতদেহ।। কোটিপতি NRI পুত্রের মাতা,, ১০ মাস আগে মারা গিয়েছিলেন।। ১৭ কোটি টাকার ফ্লাট থেকে মহিলার কঙ্কাল উদ্ধার করা হয়েছে।। আমেরিকার নামীদামী কম্পানীর উঁচু মানের ইঞ্জিনিয়ার "ঋতু রাজ সাহানী" জানেন না,, তাঁর মা আশা সাহানী ঠিক কবে মারা গেছেন।। তবে,,ঋতুরাজের বয়ান অনুযায়ী,, মায়ের সঙ্গে, শেষবারের মতো কথা হয়েছে,, প্রায় ১ বছর ৩ মাস আগে।।........."। ফেসবুক পোস্টটির (শেয়ার) স্ক্রিনশট দেখুন--
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, আলোচ্য পোস্টের দাবিটি বিভ্রান্তিকর। আলোচ্য ছবিটি মুম্বাইয়ের ধনাঢ্য পরিবারের কোনো নারীর নয় বরং এক নাইজেরিয়ান নারীর কঙ্কালের ছবি যা তার ধর্মযাজক ভাই নিজ বাসায় রেখে দিয়েছিলেন।
রিভার্স ইমেজ সার্চ এর মাধ্যমে নাইজেরিয়া ভিত্তিক একটি সাইটে "Unbelievable! Human Skeleton Found Inside Pastor's House in Ogun...See Shocking Details (Photos)" শিরোনামে প্রকাশিত আলোচ্য ছবি সহ একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। ২০১৬ সালের ১৪ অক্টোবর প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, "নাইজেরিয়ার ওগুণ রাজ্যে এক ধর্মযাজককে নিজের বাড়িতে মানুষের কঙ্কাল রাখার জন্য গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। ছবির আলোচ্য কঙ্কালটি ছিল ওই ধর্মযাজকের বোনের" (অনূদিত ও সংক্ষেপিত)। প্রতিবেদনটির স্ক্রিনশট দেখুন--
পাশাপাশি, নাইজেরিয়ান একটি ব্লগ সাইটে আলোচ্য ছবি সহ একই বিষয়ের একটি প্রতিবেদন ও সেখানকার স্থানীয় একটি সংবাদ মাধ্যমে আলোচ্য ছবির ঘটনা নিয়ে আরেকটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। উভয় প্রতিবেদনেই এই ছবির কঙ্কাল নিয়ে একই তথ্য দেয়া হয়।
এছাড়াও কি-ওয়ার্ড সার্চ এর মাধ্যমে ভারতীয় তথ্য যাচাইকারী প্রতিষ্ঠান 'বুম বাংলা'-এ ২০১৯ সালের ৩০ নভেম্বর "ভাইরাল হওয়া কঙ্কালের ছবিটি মুম্বইয়ের ফ্ল্যাটে পাওয়া বয়স্ক মহিলার দেহাবশেষ নয়" শিরোনামে প্রকাশিত একটি তথ্য যাচাই প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। প্রতিবেদনে বলা হয়, "ছবিটি নাইজেরিয়ার, যেখানে এক ধর্মযাজক তার বোনের কঙ্কাল রেখে দিয়েছিল"। প্রতিবেদনটির স্ক্রিনশট দেখুন--
অর্থাৎ আলোচ্য ছবিটি এক নাইজেরিয়ান নারীর কঙ্কালের, যা তার ধর্মযাজক ভাই নিজ বাসায় রেখে দিয়েছিলেন।
উল্লেখ্য ভারতের মুম্বাইয়ের আন্ধেরির এক বাসায় আশা সাহানী নামের বর্ষীয়ান এক নারীর কঙ্কাল উদ্ধারের খবর গণমাধ্যমে পাওয়া যায়। 'বুম বাংলা' এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, আশা সাহানী একাই থাকতেন একটি ফ্ল্যাটে। ধারণা করা হয় তিনি আত্মহত্যা করেছিলেন। তাঁর ছেলে ঋতুরাজ সাহানী ও তাঁর মধ্যে দীর্ঘদিন কোনও যোগাযোগ ছিল না। মায়ের সঙ্গে দেখা করতে আসার পর ঋতুরাজ তার মায়ের মৃত্যুর কথা জানতে পারেন ও পরে তার কঙ্কাল উদ্ধার করা হয়। ঋতুরাজ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রযুক্তিবিদ হিসেবে কাজ করেন। বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রে বিবাহবিচ্ছেদের এক জটিল মামলা লড়তে গিয়ে উনি তাঁর অসুস্থ মায়ের খোঁজখবর নিতে পারেননি।
অর্থাৎ ভারতের মুম্বাইয়ের একটি ঘটনায় নাইজেরিয়ার এক নারীর কঙ্কালের ছবি মুম্বাইয়ের আশা সাহানীর কঙ্কালের ছবি হিসেবে প্রচার করা হচ্ছে।
সুতরাং সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে এক নাইজেরিয়ান নারীর কঙ্কালের ছবি ভারতের মুম্বাইয়ের নারীর কঙ্কাল হিসেবে প্রচার করা হচ্ছে; যা বিভ্রান্তিকর।