সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকের একাধিক পেজ ও আইডি থেকে একটি ভিডিও ফুটেজ পোস্ট করে দাবি করা হচ্ছে, মোবাইল ফোনে ব্লুটুথ চালু হওয়ার সাথে সাথে ট্র্যাকের হাই টেনশন ক্যাবল থেকে কারেন্ট এসে ইয়ার ফোনের মাধ্যমে মস্তিষ্কে পৌছানোর ফলে দুর্ঘটনা ঘটেছে। ভিডিওটিতে বিদ্যুতের শকে এক ব্যক্তিকে রেললাইনে ছিটকে পরতে দেখা যায়। এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে।
গত ২৭ ডিসেম্বর 'Md Sojib Ahmed নামের একটি ফেসবুক আইডি থেকে ভিডিওটি পোস্ট করে ক্যাপশনে লেখা হয়, "মোবাইল ফোনে ব্লুটুথ চালু হওয়ার সাথে সাথে ট্র্যাকের হাই টেনশন ক্যাবল থেকে কারেন্ট এসে ইয়ার ফোনের মাধ্যমে মস্তিষ্কে পৌছালো এবং এরপর কি হলো? আপনি নিজেই দেখুন. রেলওয়ে প্ল্যাটফর্মে ব্লুটুথ ব্যবহার করা এড়িয়ে চলুন এবং প্ল্যাটফর্মে "ট্রেন ট্র্যাকের কাছাকাছি" দাঁড়িয়ে থাকুন।"। স্ক্রিনশট দেখুন--
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, পোস্টে ভিডিওটির বর্ণনায় করা দাবিটি সঠিক নয়।
ভিডিওটি থেকে কী ফ্রেম নিয়ে রিভার্স করলে, ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়া টুডে-তে "Live wire falls on railway official at Kharagpur station | Caught on camera" শিরোনামে একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। গত ৮ ডিসেম্বর প্রকাশিত প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, ঘটনাটি ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের খড়গপুর স্টেশনের প্ল্যাটফর্মের। কাজের ফাঁকে স্টেশনে দাঁড়িয়ে সহকর্মীর সাথে আলাপ করার সময়ে ভারতীয় রেলের একজন টিকিট পরীক্ষকের উপর বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে পরে। ফলে প্রচন্ড বিদ্যুতের শকে রেললাইনে ছিটকে পড়েন ওই টিটিই। প্রতিবেদনটি থেকে আরও জানা যায়, আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি। স্ক্রিনশট দেখুন--
একই বিবরণ জানিয়ে ভারতীয় রেলওয়ের একজন সাবেক কর্মকর্তার করা টুইটও খুঁজে পাওয়া যায়।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম নিউজ১৮-এর বাংলা সংস্করণে প্রকাশিত আরেকটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গুরুতর আহত ওই টিকিট পরীক্ষকের নাম সুজন কে সিং সর্দার ৷ ওই টিকিট পরীক্ষককে দ্রুত রেল পুলিশ ও রেলকর্মীদের সহায়তায় উদ্ধার করা হয়েছিল এবং তিনি কিছুটা স্থিতিশীল আছেন। এই ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে তদন্ত চলছে বলেও জানায় একাধিক সংবাদমাধ্যম।
কেন ঘটেছিল এই দুর্ঘটনা
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইটিভি ভারতের বাংলা সংস্করণে "Kharagpur Station: মাথায় ছিঁড়ে পড়ল ওভারহেডের তার, লাইনে পড়েও বরাতজোরে প্রাণে বাঁচলেন টিটিই" শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে ভারতীয় রেল কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয় সূত্রের বরাতে লেখা হয়েছে, "রেলের ওভারহেড তারে ওই সময় একটি কাক বসেছিল। সেই সময় কোনওভাবে সরু তার ছিঁড়ে নীচে পড়ে যায় । যাতে 25 হাজার ভোল্টের বিদ্যুৎ সংযোগ ছিল ৷ ওই তারই সরাসরি রেলকর্মীর মাথায় এসে পড়ে" । প্রতিবেদনের স্ক্রিনশট দেখুন--
অর্থাৎ মোবাইল ফোনে ব্লুটুথ চালু হওয়ার ফলে ট্র্যাকের হাই টেনশন ক্যাবল থেকে দুর্ঘটনাটি ঘটেনি।
সুতরাং হাইভোল্টেজ ওভারহেড বৈদ্যুতিক তার দুর্ঘটনাক্রমে টিকিট পরীক্ষকের উপর এসে পড়ার দৃশ্যকে বিভ্রান্তকর দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে সামাজিক মাধ্যমে।