সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকের একাধিক পেজ থেকে একটি খবর প্রচার করে দাবি করা হচ্ছে, ভারতের কোন দর্শকের কাছে ফিফা বিশ্বকাপের টিকেট বিক্রি করবে না কাতার। এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে।
গত ৯ জুন 'PABEL' নামের ফেসবুক পেজ থেকে খবরটি শেয়ার করে ক্যাপশনে লেখা হয়, "ব্রেকিং নিউজঃ ভারতের কোন দর্শকের কাছে ফিফা বিশ্বকাপের টিকেট বিক্রি করবে না কাতার!!" পোস্টের স্ক্রিনশট দেখুন--
আবার একাধিক আইডি ও পেজ থেকে বেসরকারি সম্প্রচার মাধ্যম চ্যানেল২৪ এর খবরের একটি ক্লিপ শেয়ার করেও খবরটি প্রচার করা হচ্ছে। তবে সম্প্রচার মাধ্যমটির ফেসবুক বা ইউটিউব ঘুরেও খবরের মূল ক্লিপটি খুঁজে পাওয়া যায়নি। এরকম একটি পোস্টের স্ক্রিনশট দেখুন--
ফ্যাক্টচেক:
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, খবরটি বিভিন্ন কারনে ভিত্তিহীন।
প্রথমত
ফুটবল বিশ্বকাপের টিকিট বিক্রি নিয়ন্ত্রণ করে থাকে একমাত্র ফেডারেশন অব ইন্টারন্যাশনাল ফুটবল এসোসিয়েশন (ফিফা)। আয়োজক দেশ টিকেট বিক্রির ক্ষেত্রে বিধি-নিষেধ জারি করার সামর্থ্য রাখে না। পাশাপাশি, ফিফা থেকে বারবার জানানো হয়েছে, বিশ্বের যে কোনো প্রান্তের মানুষ বিশ্বকাপ ফুটবল উপভোগ করতে পারবে। ফলে কাতারের সাথে ইসরায়েলের আনুষ্ঠানিক কূটনৈতিক সম্পর্ক না থাকলেও দেশটির নাগরিকরা বিশ্বকাপে দর্শক হিসাবে কাতার প্রবেশ করতে পারবে বলেও খবর প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম রয়টার্স।
দ্বিতীয়ত
বিশ্বকাপের টিকেট বিক্রির ক্ষেত্রে বিশ্ব ফুটবলের নিয়ন্ত্রনকারী সংস্থা ফিফাকে সহযোগিতা করে থাকে বিভিন্ন দেশের ফিফা অনুমোদিত এজেন্টরা। ফিফার ওয়েবসাইটে তাদের তালিকাও যুক্ত করা আছে। বুম বাংলাদেশ এই প্রতিবেদন লেখার সময় ফিফার ওয়েবসাইটের তালিকায় একাধিক ভারতীয় এজেন্সির ঠিকানা খুঁজে পেয়েছে। এ সকল এজেন্সি অর্থের ভিত্তিতে ফুটবল বিশ্বকাপ উপভোগের জন্য আগ্রহী ক্রেতাদের টিকেট, পরিবহণ এবং হোটেল সহ বিভিন্ন সুবিধা দিয়ে থাকে। ফিফার ওয়েবসাইটের স্ক্রিনশট দেখুন--
তৃতীয়ত
বিশ্বকাপের টিকেট বিক্রির নিষেধাজ্ঞা আন্তর্জাতিক পরিসরে একটি বড় খবর। কিন্তু একাধিকবার সার্চ করেও ভারতের নিকট ২০২২ ফুটবল বিশ্বকাপের টিকেট বিক্রির বিধি-নিষেধ সংক্রান্ত কোনো খবর খুঁজে পাওয়া যায়নি।
হায়া কার্ড
কাতার ২০২২ ফিফা বিশ্বকাপের টিকিট কেনার পর, দর্শকদেরকে এই কার্ডের জন্য আবেদন করতে হবে। কাতার বিশ্বকাপের যেকোন ম্যাচ দেখতে হলে এই কার্ডটি থাকা বাধ্যতামূলক এবং কার্ডটি কাতারে এন্ট্রি পারমিট হিসাবেও কাজ করবে। ফিফার থেকে টিকেট প্রাপ্তি সম্পর্কে নিশ্চিত হয়েই কেবল এই কার্ডটির জন্য আবেদন করতে হবে। ম্যাচের দিন টিকিটধারীদের এই কার্ড দেখালে বিনামূল্যে গণপরিবহন ব্যবহারসহ আরও বিভিন্নরকম সুবিধা দিবে।
তবে খেয়াল রাখা দরকার, টিকেটের সাথে এই কার্ডের কোনো সম্পর্ক নেই। দুইটির জন্য ভ্রমনেচ্ছুদের আলাদা প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হবে।
অর্থাৎ ২০২২ ফুটবল বিশ্বকাপ আয়োজক দেশ হিসাবে কাতার হায়া কার্ড প্রদানে বা এন্ট্রি পারমিট সংক্রান্ত নানান বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে পারে। কিন্তু টিকেট বিক্রির ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করার কোনো সুযোগ কাতারের নেই। ফলে ভারতীয় দর্শকদের কাছে টিকেট বিক্রিতে নিষেধাজ্ঞাও বাস্তবিক নয়।
বিভ্রান্তিকর খবরের সম্ভাব্য উৎস
কিওয়ার্ড ধরে সার্চ করার পর Free Press Journal নামের একটি ভারতীয় অনলাইন পোর্টালে "Nupur Sharma-Prophet Muhammad controversy could affect Indians' Qatar World Cup plans" শিরোনামে একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। প্রতিবেদনটিতে 'kamalbanerjee01' নামে একটি একাউন্ট থেকে করা টুইটের সূত্র ধরে জানানো হয়, টুইটকারীর বন্ধুর নিকট কাতার বিশ্বকাপের টিকিট থাকা সত্ত্বেও কাতারের অফিশিয়াল ওয়েবসাইট থেকে তার হোটেল বুকিং সংক্রান্ত বিষয় অগ্রাহ্য হয়েছে। টুইটটির স্ক্রিনশট দেখুন--
লক্ষ্য করলে দেখা যায়, টুইটকারী জানাচ্ছেন তার বন্ধুর নিকটে বিশ্বকাপের টিকেট ইতোমধ্যেই আছে। আবার ঘটনাটি যদিও ঘটেও থাকে ঘটেছে কেবল একজন ব্যক্তির ক্ষেত্রে। ফলে এই টুইটকে কেন্দ্র করে 'সকল' ভারতীয়দের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত দেয়া যৌক্তিক নয়। পাশাপাশি, খবরটি নির্ভরযোগ্য কোনো সংবাদমাধ্যমেও খুঁজে পাওয়া যায়নি। ফলে বুম বাংলাদেশ টুইটটি সম্পর্কে কোনো সিদ্ধান্ত দেয়নি।
সুতরাং, ২০২২ ফিফা বিশ্বকাপে ভারতের কোন দর্শকের কাছে আয়োজক দেশ কাতারের টিকেট বিক্রি না করার সিদ্ধান্তের ভিত্তিহীন খবর প্রচার করা হচ্ছে সামাজিক মাধ্যমে।