সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি ছাপা পত্রিকার ছবি পোস্ট করা হচ্ছে। পত্রিকার কপিতে দেখা যাচ্ছে, '২য় বিয়ে না করলে ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ে' শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। এরকম কয়েকটি পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে ও এখানে।
গত ১ নভেম্বর ‘Mintu Baburchi’ নামক অ্যাকাউন্ট থেকে ছবিটি পোস্ট করা হয়। পোস্টে উল্লেখ করা হয়, “এ অল্প বয়সে ক্যান্সারে ঝুঁকি নেয়া উচিত না ভাবছি বিয়ে একটা করে ফেলবো, আপনারা কি বলেন?”। পোস্টটির স্ক্রিনশট দেখুন--
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, আলোচ্য ছবিটি সম্পাদিত এবং দাবিটিও সঠিক নয়। একটি পত্রিকায় প্রকাশিত 'বিয়ে না করলে ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ে' শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদের শিরোনামের আগে এডিট করে '২য়' শব্দটি যুক্ত করা হয়েছে। এছাড়াও মূল গবেষণাটি করা হয়েছে ইতোমধ্যে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছেন এমন ব্যক্তিদের উপর। একজন সাধারণ তথা সুস্থ নারী-পুরুষদের ক্ষেত্রে বিয়ে করা বা না করার সাথে ক্যান্সারের প্রভাব বা বিয়ে না করলে ক্যান্সারের ঝুঁকি তৈরি হয় এমন কিছুও প্রমাণ করা হয়নি গবেষণাটিতে।
সংশ্লিষ্ট শিরোনাম ব্যবহার করে সার্চ করে "বিয়ে না করলে ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ে" সহ এ সংক্রান্ত বিভিন্ন শিরোনামের খবর বিভিন্ন গণমাধ্যমে পাওয়া যায় (১, ২, ৩)। তবে '২য় বিয়ে না করলে ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ে' শীর্ষক কোনো সংবাদ পাওয়া যায়না।
এ থেকে 'বিয়ে না করলে ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ে' শিরোনামের পূর্বে '২য়' শব্দটি যুক্ত করার সম্ভাব্যতা প্রতীয়মান হয়। এমনকি '২য়' শব্দটি পত্রিকার কলামের মার্জিনের বাইরে ভিন্ন ফন্টে দেখতে পাওয়া যায়। ফলে ছবিটি রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে ফেসবুকে ২০২২ সালের ৩১ জুলাই প্রকাশিত মূল খবরটির কপি পাওয়া যায়। সম্পাদিত কপি (বামে) ও মূল কপির (ডানে) তুলনামূলক চিত্র দেখুন--
অর্থাৎ একটি পত্রিকায় প্রকাশিত 'বিয়ে না করলে ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ে' শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদের শিরোনামের আগে সম্পাদনার মাধ্যমে '২য়' শব্দটি যুক্ত করা হয়েছে।
যদিও মূল কপিটি কোন সংবাদপত্রের তা জানা সম্ভব হয়নি তবে সংবাদটির বিস্তারিত অংশের কিছু অংশ ব্যবহার করে সার্চের মাধ্যমে দৈনিক ইত্তেফাক এর অনলাইন সংস্করণে ২০২২ সালের ২২ জুলাই 'বিয়ে করলে কী ক্যানসারের ঝুঁকি কমে' শিরোনামের একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। ইত্তেফাকের সংবাদটির বিস্তারিত অংশের লেখার সাথে ২৫ জুলাই প্রকাশিত আলোচ্য ছাপা পত্রিকাটির প্রতিবেদনের বিস্তারিত অংশের মিল পাওয়া যায়।
বিয়ে না করলে কি ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ে?
আলোচ্য প্রতিবেদনটিতে উল্লেখ করা হয়েছে; 'ইনভেস্টিগেটিভ জার্নাল'-এ প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, ৩০০০ জন গ্যাস্ট্রিক ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীদের নিয়ে গবেষণা করে পাওয়া গেছে- তাদের মধ্যে যারা অবিবাহিত বা যাদের জীবনসঙ্গী নেই, তাদের ক্ষেত্রে পাকস্থলীর ক্যানসারে মৃত্যু হওয়ার ঝুঁকি অনেক বেশি। বিবাহিত হলে ক্যানসার রোগীরা দীর্ঘায়ু পেতে পারে।
রোগীদের প্রত্যেকেই হিলেন ক্যানসারের প্রথমিক পর্যায়ে আক্রান্ত। চীনা বিজ্ঞানীরা দেখেছেন যে, ৭২ শতাংশ বিবাহিত পুরুষ ও মহিলাদের গ্যাস্ট্রিক ক্যানসার ধরা পড়ার পর অবিবাহিতদের তুলনায় পাঁচ বছর বেশি বেঁচে থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। গবেষকদের মতে, জীবনসঙ্গী পাশে থাকলে তিনি আপনার খেয়াল রাখতে পারেন। অসুখ হলে ওষুধ খাওয়ানো এবং অন্যান্য সেবা তার মাধ্যমে পাওয়া সম্ভব। ফলে রোগীর জন্য স্বাস্থ্যকর আচরণ মেনে চলা সহজ হয়।
সংশ্লিষ্ট কি-ওয়ার্ড সার্চ করে 'British Medical Journal- BMJ' এর সাইটে প্রকাশিত আলোচ্য গবেষণাপত্রের তথ্যসহ বিজ্ঞপ্তির আর্কাইভ কপি পাওয়া যায়। তবে বিজ্ঞপ্তিটি বর্তমানে মূল ওয়েব ঠিকানায় পাওয়া যায়না। BMJ এর আর্কাইভ কপি অনুযায়ী, বিজ্ঞপ্তিটিতে উল্লেখ করা হয়েছে, আলোচ্য গবেষণাটি BMJ এর 'জার্নাল অফ ইনভেস্টিগেটিভ মেডিসিন'-এ প্রকাশিত হয়েছিল।
আরো কি-ওয়ার্ড সার্চ করে, জার্নাল অব ইনভেস্টিগেটিভ মেডিসিন এর মূল সাইটের গবেষণাপত্রের (আর্কাইভ কপি), Sage Publishing এর সাইটে প্রকাশিত গবেষণাপত্র, BMJ কর্তৃক প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তির বরাতে প্রকাশিত একটি নিবন্ধ সহ বেশকয়েকটি মাধ্যমে গবেষণাপত্রটির বিষয়ে তথ্য পাওয়া যায়।
মূল এই গবেষণাপত্রটিতে প্রতিবেদনে উল্লিখিত তথ্যের মূল গবেষণা, ফলাফল ও এ সংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যায়। গবেষণাপত্রটিতে উল্লেখ করা হয়, কেউ গ্যাস্ট্রিক ক্যান্সারে আক্রান্ত হলে তার পরবর্তী জীবনের ক্ষেত্রে তার বৈবাহিক অবস্থা কি-রকম প্রভাব ফেলে কিনা তা জানার জন্য করা গবেষণাটির ফলাফলে পাওয়া গেছে, অন্যান্য বিষয়ের পাশাপাশি রোগীদের বৈবাহিক অবস্থারও প্রভাব স্পষ্ট। কারণ, অবিবাহিতদের চেয়ে বিবাহিত ব্যক্তিরা তাদের সঙ্গীদের কাছ থেকে মানসিকভাবে সহ সব ধরণের সহযোগিতা পান। এই গবেষণায় প্রথমবার এরকম রোগীদের ক্ষেত্রে সম্ভাব্য কোনো সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে বৈবাহিক অবস্থাকে বিবেচনা করা হয়েছে এবং ফলাফলের পরে তারা বিষয়টি অন্যান্যদেরকে বিবেচনায় নেওয়ার কথা বলেছেন।
অর্থাৎ গবেষণাটি করা হয়েছে ইতোমধ্যে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছেন এমন ব্যক্তিদের উপর। একজন সাধারণ তথা সুস্থ নারী-পুরুষদের ক্ষেত্রে বিয়ে করা বা না করার সাথে ক্যান্সারের প্রভাব নিয়ে গবেষণাটিতে কিছু বলা হয়নি। বিয়ে না করলে ক্যান্সারের ঝুঁকি তৈরি হয় এমন কিছুও প্রমাণ করা হয়নি গবেষণাটিতে।
সুতরাং সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে একটি খবরের ছবির শিরোনাম এডিট করে বিভ্রান্তিকরভাবে প্রচার করা হচ্ছে।