সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকের একাধিক পেজ ও আইডি থেকে একটি ছবি শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে যে, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তন্ময় বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু হলে সারারাত নির্যাতনের ফলে অসুস্থ হয়ে, ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তির পর মারা যান। ফেসবুক পোস্টের ছবিতে মুমূর্ষু অবস্থায় একজনকে হাসপাতলের বিছানায় শুয়ে থাকতে দেখা যায়। এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে।
গত ৮ নভেম্বর 'Abrar Jahin Khan Zihan' নামের একটি আইডি থেকে আলোচ্য ছবি সহ দুটি ছবি পোস্ট করে লেখা হয়,"
"#justicefortonmoy
২০১৭ সালের এসএসসি ব্যাচে জামালপুর জেলার মেধাতালিকায় ২য় স্থান অর্জনকারী ও পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিসারিজ বিভাগের মেধাবী শিক্ষার্থী তন্ময় আর নেই। বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু হলে সারারাত তার উপর পাশবিক নির্যাতন চলে। এইসব নির্যাতনের জন্য প্রত্যেকটা ছাত্রের বিশ্ববিদ্যালয় জীবন অতিষ্ঠ। এমনকি র্্যাগিং থেকে বাচতে সে হল থেকে পালিয়ে আসে। তবু তারা খ্যান্ত হয়নি।
শারীরিক এবং মানসিক নির্যাতন চলতেই থাকে তার উপর। অবস্থা সংকটাপন্ন হলে এই মাসের ৫ তারিখ তাকে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি করা হলে আজ সে মারা যায়।
অনতিবিলম্ব এই ধরনের অন্যায়ের বিচার চাই এবং সর্বোচ্চ শাস্তি কামনা করি।
ফ্যাক্ট চেক
বুম বংলাদেশ দেখছে, ফেসবুকের পোস্টের দাবিটি সঠিক নয়।
বেশকয়েকটি সংবাদমাধ্যমের খবর অনুসারে, নির্যাতনে নয় বরং তন্ময় দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন।
গুগল সার্চ করার পর, bartasomacar.com নামক অনলাইন পত্রিকায় প্রকাশিত একটি সংবাদে ফিসারিজ ১৩ তম ব্যাচের ১ম বর্ষের শিক্ষার্থী রিদওয়ান হোসেন তন্ময়-এর মৃত্যুর খবর খুঁজে পাওয়া যায়। তন্ময় দূরারোগ্য জিবিএস (Guillain-Barre Syndrome)- এ আক্রান্ত ছিলেন উল্লেখ করে সংবাদটিতে বলা হয়,
"গতকাল ৮ ই নভেম্বর রোজ সোমবার আনুমানিক দুপুর ৩ঃ৩৫ মিনিটে সে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে। জানা যায়, সে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আই সি ইউ তে বেশ কিছু দিন ধরে সংকটাপন্ন অবস্থায় ভর্তি ছিলেন। এর আগে সে বিশ্ববিদ্যালয়ের শের-ই-বাংলা-২ হলে থাকা অবস্থায় সামান্য অসুস্থ ছিল। কিন্তু হঠাৎ করেই খারাপ অনুভব করলে তাকে প্রথমে জামালপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয় এবং সবশেষ অসুস্থতা শোচনীয় অবস্থায় গেলে তাকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে লাইফ সাপোর্টে নেয়া হয়।
তার বন্ধু ও বেডমেটরা নিশ্চিত করেন, তন্ময়ের বাড়ি জামালপুর। সে আগে থেকেই অসুস্থতা ছিল এবং ডায়রিয়ায় ভুগছিল কিছুদিন ধরে। সে বাসা থেকে হলে আসার পর থেকেই নানা ধরনের অস্বাভাবিকতা অনুভব করে এবং পরবর্তীতে বাসায় চলে যায়। এরপর অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়।
শিক্ষা বিষয়ক ওয়েবসাইট ডেইলি ক্যাম্পাস এবং ওয়েব পোর্টাল আগামী নিউজ-এ রিদওয়ান হোসেন তন্ময়-এর মৃত্যু খবরটি প্রকাশিত হতে দেখা গেছে। কোন খবরেই মানসিক বা শারীরিক নির্যাতন নয় বরং দুরারোগ্য রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে। ডেইলি ক্যাম্পাস-এর স্ক্রিনশট দেখুন-
পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক সন্তোষ কুমার বসুও বুম বাংলাদেশকে ফেসবুকে ভাইরাল দাবিটি সঠিক নয় বলে নিশ্চিত করেছেন। ডক্টর বসু বুম বাংলাদেশকে বলেন, "আমি ফেসবুকে বিষয়টি শুনে নিজে হল প্রভোস্টসহ খোঁজ নিয়েছি। এরকম কোন ঘটনার কথাই শোনা যায়নি। কেউ অভিযোগও জানায়নি। ছেলেটি অসুস্থ ছিল বলে জেনেছি। ইচ্ছাকৃতভাবেই কেউ এই ভুল দাবিটি ছড়াচ্ছে, যা সম্পুর্ন ভুল।"
বুম বাংলাদেশ রিদওয়ান হোসেন তন্ময়ের একাধিক সহপাঠীর সাথেও কথা বলে নিশ্চিত হয়েছে ভাইরাল দাবিটি সঠিক নয়, পাশাপাশি তার পরিবারের সাথেও যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়েছে। তাদের মন্তব্য পেলে প্রতিবেদনে যুক্ত করা হবে।
দাবিটি ইতিমধ্যে ফ্যাক্ট চেকিং সংস্থা ফ্যাক্ট ওয়াচ যাচাই করেছে।
সুতরাং দুরারোধ্য রোগ GBS আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করা পবিপ্রবি শিক্ষার্থী তন্ময়-এর মৃত্যুকে "শারীরিক এবং মানসিক নির্যাতনে" মৃত্যু বলে প্রচার করা হচ্ছে, যা বিভ্রান্তিকর।