সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের বিভিন্ন আইডি, পেজ ও গ্রুপে একটি ভিডিও পোস্ট করে দাবি করা হচ্ছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন হিন্দু অধ্যাপককে পদত্যাগে বাধ্য করেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীরা। এরকম কয়েকটি পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে ও এখানে।
গত ২০ আগস্ট 'শ্যামল সরকার' নামের একটি আইডিতে পোস্ট করে লেখা হয়, "ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন হিন্দু অধ্যাপকের পদত্যাগ এইভাবে নিয়েছে জামাতে ইসলামী ছাত্র সংগঠন। প্রথমে হিন্দু অধ্যাপক কে কুরআনের আয়াত পাঠ করে শোনানো হয়েছে তারপর উনার পদত্যাগ নেওয়া হয়েছে।( উনাকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়েছে)।" নিচে পোস্টটির স্ক্রিনশট দেখুন--
ভাইরাল ভিডিওটিতে একজন শিক্ষার্থীকে কোরআন শরীফ পাঠ করতে শোনা যায়। শেষে শিক্ষার্থীরা উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন।
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, আলোচ্য পোস্টের দাবিটি সঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে, শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের মুখে পদত্যাগ করা ব্যক্তি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. আবদুল বাছির। যিনি একজন মুসলিম বলে তিনি নিজেই বুম বাংলাদেশকে নিশ্চিত করেছেন। গত ১৯শে আগস্ট তিনি পদত্যাগ করেন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যাপক।
সংশ্লিষ্ট কি ওয়ার্ড সার্চ করে "পদত্যাগ করলেন ঢাবির কলা অনুষদের ডিন" শিরোনামে 'আজকের পত্রিকার' অনলাইনে একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। যেখানে বলা হয়, গত রমজান মাসকে স্বাগত জানিয়ে আরবি বিভাগের উদ্যোগে বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থী কোরআন তিলাওয়াতের আয়োজন করে। পরবর্তীতে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে আরবি বিভাগের চেয়ারম্যান বরাবর চিঠি দেয় কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. আব্দুল বাছির। পরে দাবির মুখে তিনি পদত্যাগ করেন। পদত্যাগের পর পবিত্র কোরআন থেকে সুরা ত্বীন পাঠ করা হয় এবং মোনাজাত করা হয়। মোনাজাত ও কোরআন পাঠে আবদুল বাছিরও অংশ নেয়। স্ক্রিনশট দেখুন--
প্রতিবেদনটির সূত্র ধরে সংশ্লিষ্ট কি-ওয়ার্ড সার্চ করে "কলা অনুষদের ডিনকে পদত্যাগে বাধ্য করে তার কামরাতেই কোরআন তেলাওয়াত ও মোনাজাত" শিরোনামে 'Maasranga News' টিভির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে ১৯ শে আগস্ট প্রকাশিত একটি ভিডিও পাওয়া যায়। যেই ভিডিওর সঙ্গে ফেসবুকে ভাইরাল আলোচ্য দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটির মিল খুঁজে পাওয়া যায়। ভিডিওটি দেখুন--
উল্লিখিত প্রতিবেদনে আলোচ্য দাবির প্রেক্ষিতে কোনো ধরণের তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি। এছাড়া কি-ওয়ার্ড সার্চ করেও ভাইরাল দাবির প্রেক্ষিতে কোনো ধরণের প্রতিবেদন বা তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।
বিষয়টি আরো নিশ্চিত হতে কলা অনুষদের সাবেক ডিন অধ্যাপক ড. আবদুল বাছিরের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি নিজেকে মুসলিম বলে বুম বাংলাদেশকে নিশ্চিত করেছেন।
অর্থাৎ পদত্যাগের পর কোরআন শরীফ পাঠ করে শোনানো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিন অধ্যাপক বাছির হিন্দু নন। তিনি একজন মুসলিম।
সুতরাং বিক্ষোভের মুখে পদত্যগ করা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিন অধ্যাপক বাছিরকে হিন্দু ধর্মালম্বী দাবিতে পোস্ট করা হচ্ছে ফেসবুকে, যা বিভ্রান্তিকর।