সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি ভিডিও পোস্ট করে বলা হয়েছে, হিন্দু ছেলের গলা থেকে তুলসীর মালা বা ধর্মীয় মালা খুলে নিয়েছে মুসলিম লোকেরা। এরকম কয়েকটি পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে ও এখানে।
গত ৩০ আগস্ট 'BD Mondir' নামের পেজ থেকে এ সংক্রান্ত একটি ভিডিও (রিলস) পোস্ট করা হয়। ভিডিওতে টেক্সট ফরম্যাটে উল্লেখ করা হয়, হিন্দু ছেলের গলা থেকে তুলসীর মালা খুলে নিয়েছে মুসলিম লোকেরা। পোস্টটির স্ক্রিনশট দেখুন--
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, আলোচ্য পোস্টের দাবিটি সঠিক নয়। ভিডিওর ছেলেটির নাম সোহেল, ছেলেটি হিন্দু নয় বরং মুসলিম ধর্মাবলম্বী এবং মাদ্রাসায় পড়াশোনা করে। তাঁর গলা থেকে তাবিজ কাটা হয়েছিল, তুলসীর মালা নয়।
ভিডিওটি থেকে কি-ফ্রেম জেনারেট করে রিভার্স ইমেজ সার্চ এর মাধ্যমে সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে 'তাওহীদ একাডেমি এন্ড ইসলামিক সেন্টার'-নামের একটি পেজে গত ২৭ আগস্ট প্রকাশিত আলোচ্য ভিডিওটি সহ অন্যান্য কয়েকটি ভিডিওর সমন্বয়ে তৈরিকৃত একটি ভিডিও পাওয়া যায়। এতে উল্লেখ করা হয়, নোয়াখালীতে বন্যার্তদের মাঝে ২০০ এর বেশি পরিবারকে ত্রান সামগ্রী বিতরণ করা হয় তাওহীদ একাডেমি এন্ড ইসলামিক সেন্টার এর পক্ষ থেকে। পোস্টটির (ভিডিও) স্ক্রিনশট দেখুন--
পরবর্তীতে পেজটি ঘুরে আজ ২ সেপ্টেম্বর আরো এ সংক্রান্ত আরো একটি ভিডিও পাওয়া যায়। এতে উল্লেখ করা হয়, সম্প্রতি ভাইরাল হওয়া ছেলেটির মুখে শুনুন ছেলেটি হিন্দু নাকি মুসলিম। গুজবকে সবাই প্রতিহত করুন। ভিডিওটি আলোচ্য ছেলেটিকে বলতে শোনা যায়; তাঁর নাম সোহেল, বাবার নাম আব্দুল হক ও মায়ের নাম রোজিনা। এছাড়াও সে মাদ্রাসাতে পড়ে এমন তথ্যও উল্লেখ করা হয়েছে ভিডিওতে। পোস্টটির (ভিডিও) স্ক্রিনশট দেখুন--
প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী তাওহীদ একাডেমি এন্ড ইসলামিক সেন্টার এর সাথে যোগাযোগ করলে প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ বুম বাংলাদেশকে জানান, তাঁরা বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় ত্রাণ বিতরণের পাশাপাশি তাবিজ নিয়ে ধর্মীয় বিধিনিষেধ থাকার কারণে অনুমতি সাপেক্ষে তাবিজ কাটা হয়েছে। তবে অন্য ধর্মের কোনো কিছু কাটা হয়নি।
এদিকে ভিডিওটিতে যাকে তাবিজ কাটতে দেখা গেছে তিনি জামিয়া দারুত তাওহীদের সহকারী প্রধান শিক্ষক আব্দুল মালেক মিয়াজী। তাঁর সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বুম বাংলাদেশকে জানান, ছেলেটির নাম সোহেল, বাবার নাম: আব্দুল হক, মায়ের নাম: রুজিনা খাতুন, গ্রাম: চর আলগী, উপজেলা: কবির হাট, জেলা: নোয়াখালী। ছেলেটি একটি মাদ্রাসায় তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ে। তাঁর গলা থেকে তাবিজ কাটা হয়েছে।
অর্থাৎ ছেলেটি হিন্দু নয় বরং মুসলিম। আর তাঁর গলা থেকে তাবিজ কাটা হয়েছে, ধর্মীয় কোনো মালা নয় বা 'তুলসী মালা' নয়।
উল্লেখ্য আব্দুল মালেক মিয়াজী আরো জানিয়েছেন, ইসলাম ধর্মে তাবিজ ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা থাকার কারণে তাঁরা ত্রাণ বিতরণের সময়ে তাবিজ কাটার কার্যক্রমও পরিচালনা করেছেন।
সুতরাং সামাজিক মাধ্যমে একটি মুসলিম ছেলের গলা থেকে তাবিজ কাটার ভিডিও ব্যবহার করে 'হিন্দু ছেলের গলা থেকে তুলসীর মালা কেটেছে মুসলিমরা' মর্মে যে তথ্য প্রচার করা হচ্ছে; তা বিভ্রান্তিকর।