সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকের একাধিক আইডি, পেজ ও একাধিক সংবাদমাধ্যমে একটি খবর শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে, একনাগাড়ে ৬ মাসের বেশি ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বে থাকতে পারবেন না এমন নির্দেশনা দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। কয়েকটি ফেসবুক একাউন্টে কথিত সেই নির্দেশনার ছবিও যুক্ত করা হয়েছে। এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে।
গত ২১ ফেব্রুয়ারি অনলাইন ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম Dhakapost.com এর ফেসবুক পেজে খবরটি প্রকাশ করে ক্যাপশনে লেখা হয়েছে, "মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে একনাগাড়ে ছয় মাসের বেশি ভারপ্রাপ্ত প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করা যাবে না...” স্ক্রিনশট দেখুন--
এছাড়াও খবরটি প্রকাশিত হয়েছে, কালেরকণ্ঠ, ডিবিসি নিউজ, বাংলানিউজ২৪, জাগোনিউজ২৪, আজকের পত্রিকা, ঢাকা পোস্ট, সাম্প্রতিক দেশকাল, ঢাকা মেইল সহ একাধিক সংবাদমাধ্যমে।
ফেসবুক পোস্টে যুক্ত করা বিজ্ঞপ্তির ছবিটি দেখুন--
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবুল খায়েরের সই করা একটি সতর্কতামূলক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালনের বিষয়ে কোনো পরিপত্র জারি করা হয়নি বলে নিশ্চিত করা হয়।
মূলত, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের বেসরকারি মাধ্যমিক-১ শাখার উপসচিব মো. মিজানুর রহমানের স্বাক্ষরিত দাবি করে একটি চিঠি ফেসবুকে প্রচার করা হয় এবং এর সূত্রধরেই সংবাদমাধ্যমেও খবর প্রকাশিত হয়। চিঠিটিতে দাবি করা হয়, "সহকারী প্রধান শিক্ষক একনাগাড়ে ০৬ (ছয়) মাসের অধিক ভারপ্রাপ্ত প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না। যদি ০৬ (ছয়) মাসের মধ্যে প্রধান শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া সম্ভব না হয়, তাহলে জ্যেষ্ঠতম ৩ জন শিক্ষকের মধ্য হতে যে কোন একজনকে পরবর্তী ০৬ মাসের জন্য ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব দিতে হবে। তিনিও যদি ০৬ (ছয়) মাসের মধ্যে প্রধান শিক্ষক নিয়োগ দিতে না পারেন তাহলে তিনি ব্যতীত জ্যেষ্ঠতম ৩ জন শিক্ষকের মধ্য হতে যে কোন একজনকে পরবর্তী ০৬ মাসের জন্য ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব দিতে হবে।" এছাড়া আরও ৫ টি নির্দেশনাও দেয়া হয় চিঠিটিতে।
যদিও এই চিঠিটি কোনো অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে পাওয়া যায়নি। বরং সার্চ করার পর, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের ওয়েবসাইটে সতর্কতামূলক বিজ্ঞপ্তিটি খুঁজে পাওয়া যায়, যা ২৭ ফেব্রুয়ারি জারি করা হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের উপসচিব জনাব মোঃ মিজানুর রহমানের নাম ও স্বাক্ষর ব্যবহার করে প্রচারিত বিজ্ঞপ্তিটি ভুয়া বলে নিশ্চিত করা হয়। ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন সংক্রান্ত কোনো আদেশ মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ থেকে জারি করা হয়নি। পাশাপাশি ভুয়া বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী কোনো কার্যক্রম গ্রহণ না করার অনুরোধ করা হয়। স্ক্রিনশট দেখুন--
শিক্ষা বিষয়ক একটি ওয়েবসাইটে মো. মিজানুর রহমানকে উদ্ধৃত করেও প্রচারিত চিঠিটি ভুয়া বলে নিশ্চিত করা হয়।
অর্থাৎ ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালনের বিষয়ে কোনো পরিপত্র জারি করা হয়নি মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ থেকে।
সুতরাং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের নামে ভূয়া বিজ্ঞপ্তি প্রচার করা হচ্ছে সামাজিক মাধ্যমে ও সংবাদমাধ্যমে।