সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে বিভিন্ন পেজ ও গ্রুপে দু'জনের ছবির কোলাজ পোস্ট করে দাবি করা হচ্ছে, সাহিত্যের জনপ্রিয় প্রেমিক-প্রেমিকা জুটি লাইলী-মজনুর বাস্তব ছবি। এরকম কয়েকটি পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে ও এখানে।
গত ২৪ নভেম্বর 'Bahauddin Sokal' নামের ফেসবুক প্রোফাইল থেকে "এদের কে দেখে আমার ভিতরের ভালোবাসা ও মরে গেছে" ক্যাপশনে একটি পোস্ট করা হয়। ফেসবুক পোস্টটির স্ক্রিনশট দেখুন--
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, আলোচ্য পোস্টের দাবিটি সঠিক নয়। আলোচ্য ভিন্ন দু'জন ব্যক্তির ছবিকে এডিট করে পুরোনো ছবির মত বানিয়ে লাইলী-মজনুর বলে প্রচার করা হচ্ছে। লাইলী-মজনুর প্রথম লোকগাঁথা যখন লেখা হয় তখন ক্যামেরাই আবিষ্কার হয়নি, অর্থাৎ ছবিটি তাদের হওয়ার দাবিটি অবান্তর।
কোলাজ ছবির নারীর ছবিটি রিভার্স ইমেজ সার্চ এর মাধ্যমে আমেরিকার ওয়াশিংটন ডিসি-র গবেষণা গ্রন্থাগার ও আর্কাইভ 'লাইব্রেরি অব কংগ্রেস' এর ওয়েবসাইটে 'এমব্রয়ডারি করা কোট পরা আরব মহিলা' শিরোনামে একটি আলোচ্য ছবির অনুরূপ ছবি সহ নিবন্ধ খুঁজে পাওয়া যায়। নিবন্ধে উল্লেখ করা হয়, "ছবিতে জর্ডানের কেরাক শহরের একজন মহিলাকে দেখা যাচ্ছে, যিনি সম্ভবত একজন শেখের স্ত্রী ছিলেন"। একইসাথে স্টক ইমেজ সাইট এলামিতেও 'বেদুইন মহিলা' এর ছবি হিসেবে হুবহু ছবিটি পাওয়া যায়। এলামিতে ছবিটির স্ক্রিনশট দেখুন--
স্টক ইমেজ সাইটে পাওয়া মূল ছবি (ডানে) এবং লাইলীর ছবি হিসেবে প্রচারিত এডিটেড ছবিটির (বামে) মধ্যকার তুলনা দেখুন--
এদিকে, মজনুর ছবি দাবিতে প্রচারিত ছবিটি রিভার্স ইমেজ সার্চ করে কাতার ভিজিটর নামের একটি ব্লগসাইটে মূল ছবি সহ 'শেখ ফয়সাল জাদুঘর' সংক্রান্ত একটি নিবন্ধ পাওয়া যায়। ছবিটির সাথে উল্লেখ করা হয়, জাদুঘরটি শেখ ফয়সাল বিন কাসিমের নামে। ফয়সাল হলেন, জসিমের (জসিম বিন মোহাম্মদ আল থানি) বংশধর, ফয়সাল জসিমের কয়েক প্রজন্ম পরে জন্ম নিয়েছেন এবং পেশায় ব্যবসায়ী। জসিম তাঁর আশি বছর বয়সে যুদ্ধ করে উসমানীয় সাম্রাজ্যের পতন ঘটান এবং তাকে কাতারের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। নিবন্ধ অনুযায়ী ছবিটি জসিমের বলে অনুমান করা হয়।
আর কাতার ভিত্তিক একটি ওয়েবসাইটে শেখ ফয়সাল বিন কাসিমের ছবিসহ তাঁর সংক্ষিপ্ত বায়োগ্রাফি পাওয়া যায়। তবে আলোচ্য ছবিটি জসিম বিন থানির বলে ধারণা করা হলেও একটি ব্লগ সাইটে কাতার ও পার্শ্ববর্তী অঞ্চল আমিরাতের বেদুইন সম্প্রদায়ের ব্রেইডেড চুলের সংস্কৃতি তুলে ধরতেও ছবিটির ব্যবহার হতে দেখা গেছে। তাই ছবিটি জসিমের কিনা তা পুরোপুরি নিশ্চিত হওয়া যায়নি। ব্লগ সাইটে পাওয়া মূল ছবি (ডানে) এবং মজনুর ছবি হিসেবে প্রচারিত এডিটেড ছবিটির (বামে) মধ্যকার তুলনা দেখুন--
যেহেতু লাইলি-মজনু সপ্তম শতাব্দীর (ক্যামেরা আবিষ্কারের আগে) নাজদি বেদুইন কবি কায়েস ইবনুল মুলাওয়া এবং তার প্রেমিকা লায়লা বিনতে মাহদীর প্রেমনির্ভর লোকগাঁথা। তাই ছবিটি মজনুর হওয়ার কোনো সুযোগ নেই বরং ভিন্ন কোনো ব্যক্তির।
অর্থাৎ আলোচ্য কোলাজের ছবি দু'টি লাইলী-মজনুর ছবি নয়।
উল্লেখ্য ফ্রান্সের কয়েকটি জাদুঘরের অনলাইন সাইটে (১,২,৩) লাইলি-মজনুর কোনো খুঁজে পাওয়া যায়নি; তবে কিছু পেইন্টিং বা কল্পিত আঁকা ছবি পাওয়া গেছে।
সুতরাং সামাজিক মাধ্যমে ভিন্ন ব্যক্তির ছবি লাইলী-মজনুর আসল ছবি হিসেবে প্রচার করা হচ্ছে; যা বিভ্রান্তিকর।